অভয়নগরে খেজুরের রস প্রতি লিটার ৫০ টাকা!

0

যশোর প্রতিনিধি : এক সময় যশোরের অভয়নগর উপজেলার গ্রামীন সড়কের দুপাশে সারি সারি গেজুর গাছ চোখে পড়ত। গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করত গাছিরা।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে যশোরের এই যশ। এখন আর রাস্তার দু’পাশে সারি সারি চোখে পড়েনা। যে কারণে বেড়েছে রসের দাম। বর্তমানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক লিটার খেজুরের রস। শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঠিলে ভর্তি (মাটি দিয়ে তৈরি হাঁড়ি বা কলস) রস নিয়ে গাছিরা বসে রয়েছেন। ৫০ টাকা লিটার ও প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকায় বিক্রি করছেন।

উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের গাছি মো: কামরুল হাসান তরফদার বলেন, ‘আমাদের গ্রামটি ভবদহ অঞ্চলে হওয়ায় বছর জুড়ে থাকে জলাবদ্ধতা। খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরিতে রয়েছে জ্বালানি সংকট। এ দুই কারণে আমাদের গ্রামের অধিকাংশ খেজুর গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকরা।

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বেড়েছে রসের দাম। মাটির ঠিলের দামও বেড়েছে। এক সময় ১০ টাকায় এক লিটার রস বিক্রি করেছি। বর্তমানে এক লিটার রস ৫০ টাকায় বিক্রি করেও সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’ একই ধরণের বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিভিন্ন বাজারে রস বিক্রি করতে আসা গাছিরা। নওয়াপাড়া বাজারের রস ক্রেতা ইঞ্জি. শওকত হোসেন বেগ জানান, ‘গত বছর ২০ টাকায় এক লিটার খেজুরের রস কিনেছি।

এ বছর সেই রস কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়।’ উপজেলার পায়রা ইউপি চেয়ারম্যান বিষ্ণুপদ দত্ত জানান, ‘যশোরের যশ-খেজুরের রস’ এই প্রবাদ এখন বিলিন হতে চলেছে। শীত মৌসুমে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে নানা ধরণের পিঠা-পায়েস তৈরি হত। নানা প্রতিকুলতার কারণে গ্রামীণ এ ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে খেজুর গাছ রোপন, গাছিদের প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা সমীরণ বিশ্বাস জানান, যে পরিমান খেজুর গাছ নিধন হয়েছে, সেই পরিমান রোপন করা হয়নি। যে কারণে রস ও গুড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানী জানান, খেজুর গাছ একটি অর্থকারী সম্পদ। এই সম্পদ সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে। পাঁচ বছর পূর্বে অভয়নগরে প্রায় ৬০ হাজার খেজুর গাছ ছিল। অবাধ নিধনের কারণে এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া রস থেকে গুড় তৈরিতে রয়েছে জ্বালানি সংকট ও গাছির অভাব। ফলে চাহিদার তুলনায় বেড়েছে রস ও গুড়ের দাম।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.