চট্টগ্রামের সব বাজার ‘পলিথিনমুক্ত’ করার ঘোষণা মেয়রের
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে এবং কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দরনগরীর সব বাজারকে ‘পলিথিনমুক্ত’ করার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) পরিচালিত বিভিন্ন বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। মেয়র রেজাউল বলেন, “আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর সমস্ত বাজারগুলোকে পলিথিন মুক্ত করা হবে।”
তিনি জানান, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীর বাজারগুলোতে এ বিষয়ে মাইকিং, পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, লিফলেট বিলি করে প্রচার চালাবে বাজার কমিটি। ১০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের সতর্কতা করবেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাজারে কোনো পলিথিন পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী জরিমানা করাসহ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে সভায় জানান মেয়র।
তিনি বলেন, “পলিথিন নগরবাসীর জন্য একটি অভিশাপ। এ পলিথিনের কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে। পলিথিনের কারণে নালা-নর্দমায় পানি জমে মশার প্রজনন অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। “সবচেয়ে বড় কথা হল পলিথিন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে জমাট হয়ে আট ফুটের বেশি শক্ত স্তর তৈরি করেছে, যা কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং করতে গিয়ে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।”
নেদারল্যান্ডস থেকে অত্যাধুনিক ড্রেজার এনেও নদীর পুরু পলিথিন স্তর ভেদ করে ড্রেজিং সম্পন্ন কঠিন হয়ে পড়ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরে কর্ণফুলী নাব্য হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হবে।” কর্ণফুলীর নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দরও কার্যকারিতা হারাবে; আর তার ‘ভয়াবহ পরিণামে’ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে হুঁশিয়ার করেন রেজাউল।
তাই ‘পরিবেশের ক্যান্সার’ এই পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিটি করপোরেশনের পরিবেশ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বলেন, “ইতিপূর্বে সিসিসির উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে কাজীর দেউরী, চকবাজার ও কর্ণফুলী মার্কেটে শতভাগ পলিথিনমুক্ত করা হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে তা অভিনন্দনযোগ্য।”
নগরীর ওই তিন বাজার ১ ডিসেম্বর থেকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন মেয়র। তবে বুধবারও কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে অভিযানে চালিয়ে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পলিথিন ব্যাগে পণ্য বিক্রির দায়ে ৫ দোকানের মালিককে মোট ৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর আগেও গত দুই মাসে ওই তিন বাজারে একাধিকবার অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। বাংলাদেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ২০০২ সাল থেকে। কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পলিথিন দেশের সর্বত্র ব্যবহার হচ্ছে নির্বিচারে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ হলেও দেশের দুইশর বেশি কারখানায় প্রতিদিন পলিথিনের শপিং ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। তাদের হিসাবে ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে।
বহুল ব্যবহারের কারণে শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন দুই কোটি পলিথিন জমছে। ঢাকার জলাবদ্ধতার জন্যও পলিথিনকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়। চট্টগ্রামের ফইল্ল্যাতলী বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন বুধবারের সভায় বলেন, “পলিথিন যেখানে উৎপাদন হয়, সেসব কারখানা ও পলিথিন বিক্রির আড়তগুলো থেকে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।”
প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন সভায় বলেন, পলিথিনের মাধ্যমে নগরীতে জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ, মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতাদের পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। সভায় মেয়র নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের বাজারগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদেরও বাজার কমিটির সাথে সমন্বয় করে এ বিষয়ে প্রচারে অংশ নিতে বলেন।
কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, মো. শফিকুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, পাহাড়তলী বাজার সমিতির সভাপতি মো. কামরুল ইসলাম, ফকিরহাট বাজার দোকান মালিক সমিতি এম.এ আজাদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সোহেল, নতুন বাজার কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল লতিফ, ফিরিঙ্গীবাজার বাজার কমিটির সভাপতি মো. আনসার উদ্দিনসহ বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।