আধিপত্য বিস্তারের জেরে ফরিদপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় বাড়ি দোকান ভাঙচুর-লুটপাট

0

পাবনা প্রতিনিধি : এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পাবনার ফরিদপুরে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর. দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। গত সোমবার বিকেলে উপজেলার বিলচান্দক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ৬ জন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর হামলার শিকার পরিবারের পুরুষ মানুষ আবারো হামলা বা গ্রেপ্তার আতংকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিলচান্দক গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে মন্ডল গোষ্ঠী ও প্রামানিক গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি বিলচান্দক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ওই নির্বাচনে এলাকার বিএনপি সমর্থিত রবিউল আলম টুকু ও আলম মোল্লা গংদের পক্ষে ৪ জন প্রার্থী দেয়া হয়। সেখানে তাদের পক্ষে দুইজন ও অপরপক্ষে আওয়ামীলীগ সমর্থিত লাল আনছার-রহমত মন্ডল গংদের পক্ষে দুইজন জয়ী হয়। এ নিয়ে দেখা দিয়ে বিরোধ। রবিউল-আলম গংদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত সোমবার মন্ডল গোষ্ঠীর কয়েকজন যুবক-তরুণ স্থানীয় দুগ্ধ সমবায় সমিতির এলাকায় বেড়াতে গেলে প্রতিপক্ষ রবিউল-আলম সমর্থিত প্রামানিক গোষ্ঠীর লোকজন তাদের মারধর করে। খবর পেয়ে স্বজনরা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধরন করে। এ ঘটনায় ৬ জন আহত হলে তাদের ফরিদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় ৭ নম্বর ইউপি সদস্য মন্টু প্রামানিক বলেন, এ ঘটনার দিনগত রাতে মন্ডল গোষ্ঠীর অন্তত ১২ জনের বাড়িঘরে, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে রবিউল-আলম গংরা। এছাড়া পরদিন মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপস্থিতিতে আবারও হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুরুষরা আবারো হামলা ও গ্রেপ্তার আতংকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

হামলার শিকার পরিবারগুলো হলো রহমত মন্ডল, স্বপন মন্ডল, শাহাদৎ মন্ডল, নুরনবী মন্ডল, করিম মন্ডল, শাকিল মন্ডল, শহিদ মন্ডল, আবু সাইদ মন্ডল, ঝন্টু মন্ডল, সেলিম মন্ডল ও ফরিদ মন্ডল। এদের বাড়ি, সাবমার্সিবল পাম্প, দুটি দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়েছে বলে দাবি তাদের।

বুধবার বিকেলে সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, পুরুষ মানুষ কেউ বাড়িতে নেই। অনেকের বাড়িতে তালা ঝুলছে। বাড়ির মহিলারা খেয়ে না খেয়ে বাড়ি আতংকে দিন কাটাচ্ছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর, জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অনেকে নিজেদের কষ্টের কথা জানান।

এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ আঞ্জু খাতুন, শান্তি খাতুন, হাসিনা খাতুন ও হাফিজা খাতুন বলেন, আলম-টুকুর নেতৃত্বে প্রায় ২শ’ মানুষ দল বেঁধে এসে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। মটর, টিউবওয়েল খুলে নিয়ে যায়। ঘরে যা ছিল সব লুট করে নিয়ে গেছে। আবার কখন হামলা করে, সেই ভয়ে আমাদের স্বামীরা বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকে। এখন এই ক্ষতির দায় কে নেবে। আমরা গরীব মানুষ। কিভাবে আবার ঘরবাড়ি গোছাবো।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত রবিউল করিম টুকু ও আলম মোল্লার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে যেতে কিছু ভাঙচুর হয়েছে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর পর আর কেউ ভাঙচুর করতে পারেনি। এ বিষয়ে মারামারির ঘটনায় একটি ও ভাঙচুরের ঘটনায় আরেকটি মোট দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত দুই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.