মোটরসাইকেলে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া ভ্রমণ দম্পতির

0

পাবনা প্রতিনিধি : অনেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণের শখ তার। ইতিপূর্বে ঘুরেছেন দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান। হঠাৎ তার মনে হলো, নিজের জীবনসঙ্গী স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঘুরলে কেমন হয়? তিনি কি শুধুই ঘরের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন? তারও তো বেড়ানোর দরকার আছে। এ চিন্তা থেকেই দু’জনের পরিকল্পনা একসাথে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে দেখার।

তাই স্ত্রীকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান ঘুরে দেখলেন পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে সাংবাদিক বকুল রহমান। তিনি দৈনিক ভোরের কাগজের চাটমোহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি ভেটেরিনারী ব্যবসায় যুক্ত তিনি।

পাবনার চাটমোহর থেকে গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু করে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত তারা মোটরসাইকেলে দুই হাজার কিলোমিটার রাস্তা ভ্রমণ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রতœতাত্তিক নিদর্শন দেখে সুস্থ্যভাবে ভ্রমণ শেষে তারা ২৩ নভেম্বর বাড়িতে ফিরেছেন।

আলাপকালে সাংবাদিক বকুল রহমান বলেন, সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগেই হোক কিংবা মানুষের কারণেই হোক, দেশের কোন প্রতœ নিদর্শন শেষ হওয়ার আগে, আমি তার স্বাক্ষী হতে চাই। যে সফরের সঙ্গী হিসাবে আমি বেছে নিয়েছি নিজের জীবন সঙ্গীকেই।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে সারাদেশ দেখার লম্বা যাত্রায় এক বা একাধিক বন্ধু থাকাটা হয়তো স্বস্তির হতো। তবে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তো আমার স্ত্রীই। আমি যা দেখবো, সে কেন সেটা দেখা থেকে বঞ্চিত হবে? একসাথে এমন ভ্রমণে দৃঢ় হবে নিজেদের বন্ধনও।

এই ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, গত ১৬ নভেম্বর চাটমোহর থেকে রওনা হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় পৌঁছাই তেঁতুলিয়ায়। ১৮ নভেম্বর বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট থেকে মোটরসাইকেলযোগে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। ২০ নভেম্বর পৌঁছাই টেকনাফে। স্ত্রী সাথে থাকায় নিরাপত্তার জন্য শুধু দিনের বেলাতেই যাত্রা করি।

বকুল রহমান জানান, ঝুঁকি কমানোর জন্য রাতে ভ্রমণ না করা, শারিরীক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ভ্রমণ পরিকল্পনা আগ-পিছ করা, নিরাপত্তার সকল অনুষঙ্গ ফলো করা, সবই সুপরিকল্পিতভাবেই করেছি। তেঁতুলিয়া থেকে টেফনাফ যাওয়ার পর ফেরার পথে দেশের বিভিন্ন প্রতœনিদর্শন দেখতে দেখতে ২৩ নভেম্বর চাটমোহরে বাড়িতে ফিরেছি।

ভ্রমণকালে তেঁতুলিয়া জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন অঞ্চল, হিমছড়িতে নীল সমুদ্র সৈকত, লাল কাঁকড়া, সবচেয়ে সুন্দর পাহাড়গুলোর কয়েকটি, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন শহর পানাম নগর অন্যতম ভাল লেগেছে বলে জানান তিনি।

বকুল রহমান বলেন, যা কিছু আসলে গণপরিবহণে গিয়ে দেখা সম্ভব হয়না, মোটরসাইকেল হলে একদম খুব কাছে গিয়ে এই সকল জিনিস দেখা সম্ভব হয়। আমার পেছনে থাকা আমার স্ত্রী সম্পূর্ণ রাস্তা আমাকে গাইড করে নিয়ে গেছেন।

এর আগে অনেক জায়গায় গেলেও এত সুন্দরভাবে এবং এত সুন্দর পরিবেশে কখনো এগুলো দেখতে পারেননি উল্লেখ করে বকুল রহমান বলেন, বাংলাদেশ আসলে এত সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশকেই হার মানায়। শুধুমাত্র আমাদের দেশের এই দর্শনীয় স্থানগুলোতে সরকার যদি বিভিন্ন পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসে, পরিবেশটা ভালো রাখে এবং জীববৈচিত্রের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখায়, তাহলে এদেশের পর্যটন শিল্পে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

এক প্রতিক্রিয়ায় বকুল রহমানের সফরসঙ্গী তার স্ত্রী আকলিমা আনোয়ার রতœা বলেন, আমার স্বামী বেড়াতে খুব পছন্দ করে। আমারও পছন্দ। ঘর সংসার সামলাতে গিয়ে সবসময় তো বেড়ানো হয়ে উঠে না। যখন সে বললো মোটরসাইকেলে টেকনাথ থেকে তেঁতুলিয়া আমাকে নিয়ে বেড়াবে তখন খুব খুশি হয়েছি। এই ভ্রমণটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যদিও কিছুটা কষ্ট হয়েছে। তারপরও ভাললাগার কাছে সব কষ্ট হেরে গেছে।

দীর্ঘ এই মোটরসাইকেল ভ্রমণে চলার পথে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সদরে যারা কর্মরত আছেন (এক সময় তারা চাটমোহরে কর্মরত ছিলেন) তারা সহ আত্মীয়-স্বজনকে তাদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ জানিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বকুল রহমান বলেন, এরপর লক্ষ্য স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.