বাগেরহাটের রামপালে তীব্র লবন উপেক্ষা করে লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক ধান উৎপাদন

0

ম.ম.রবি ডাকুয়া,বাগেরহাট প্রতিনিধি : যে অঞ্চলে কৃষকের জমি আছে ঘরে ভাত নেই,আবাদ যোগ্য জমি চিংড়ি ঘেরের রাহু গ্রাসে বন্ধি, অভাব আর দরিদ্র তার সাথে কৃষকের সন্ধি।সেই উপজেলা গুলোর মধ্যে বাগেরহাটের মোংলা ও রামপাল অন্যতম দুটি উপজেলা।এখানকার মানুষ ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় শুধু চিংড়ি চাষের স্বপ্নই দেখে্।নদী ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলায় তাদের স্বপ্ন এখন বদলে গেছে, তারা এখন সোনালী ফসল ভরা মাঠ ক্ষেত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।রামপালে তীব্র লবনাক্ততা ও জলবায়ু পরির্বতনজনিত কারনে কয়েক যুগ ধরে ধানের আবাদ আশংকাজনক হারে কমে গিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে যেতে দেখা গেলেও কৃষি বিভাগের নানামূখি পদক্ষেপ ও তৎপরতায় স্থানীয় চাষিদের কঠোর পরিশ্রমে আমান ও বোরো আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এ উপজেলা ২/৩ বছর ধরে খাদ্যের সয়ংসম্পুর্ণ। চলতি আমন মৌসুমে আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর। তা বেড়ে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২শ হেক্টর। যা ৩৩০ হেক্টর বেশি।

কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, ১ লক্ষ ৮১ হাজার ২২৯ জন জনসংখ্যার বিপরীতে এ উপজেলায় খাদ্য চাহিদার পরিমান ৩২ হাজার ৬০৬ মেঃ টন চাল। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৩৬ হাজার ১৯০ মেঃ টন। এর মধ্যে আমন চাল উৎপাদন হচ্ছে ১৭ হাজার ৬১৫ মেঃ টন ও বোরো আবাদ হচ্ছে ১৮ হাজার ৫৭৫ মেঃ টন। চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৮ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ০.৫ হেক্টর, উফশী ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ও রোগবালাই তেমন না হওয়ায় এবং সার ও বালাইনাশক সঠিক সময় সরবরাহ করায় কৃষকরা তাদের কাংখিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।

উপজেলার পেড়িখালী বাজারের কৃষকরা জানান, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগীতা, পরামর্শ ও তদারকীর কারনে আল্লাহর রহমতে গত বছরের চেয়ে এবার কম খরচে ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারব। একই কথা বলেন, হুড়কার,রামপালের সদরের সিংগড়বুনিয়ার অসংখ্য চাষি।
আমন আবাদের বিষয়ে রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির লোক জন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে এবং তীব্র লবনাক্ততার প্রভাবে এতদিন ব্যাপক ফসলহানী ঘটেছে। কৃষকদের বাঁচাতে ও এ এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা করতে হলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ভেড়িবাঁধ দিতে হবে এবং লবন সহিষ্ণু ধানের আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী মন্ডল জানান, কৃষকদের সময় উপযোগী করে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ, কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগনের মনিটরিং ও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ফলোআপ, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ প্রদান, আধুনিক জাত নির্বাচন, হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধিসহ নানান পদক্ষেপের কারনে এবছর আমন আবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার বিশ্বাস জানান, প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরনে এবং কৃষকদের বাঁচাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। বিশেষ করে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ঘরে ঘরে তা পৌছে দেওয়ার মত যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। তার নিদের্শনা মোতাবেক আবাদ যোগ্য জমি যাতে খালি পড়ে না থাকে সে জন্য কৃষি বিভাগের পাশা পাশি উপজেলা প্রশাসন ও কাজ করছে। সরকারি বিভিন্ন সহায়তা বিশেষ করে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ বিতরণসহ সকল বিষয় মনিটরিং এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার কারনে আমাদের এ উপজেলা এখন খাদ্যের সয়ংসম্পূর্ন। এ জন্য তিনি কৃষকদের ও সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানান।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.