বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের “প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি” ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে সহিংসতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চাই এই আহ্বানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, পাবনা জেলা শাখার আয়োজনে, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ইং তারিখ পাবনা, অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে এক “প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি” ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।
উক্ত কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ  মহিলা পরিষদ, পাবনা জেলা শাখার, সাধারণ সম্পাদক, কামরুন নাহার জলি, সূচনা সমাজ কল্যান সংস্থা’র, নির্বাহী পরিচালক, পূর্ণিমা ইসলাম, এডাব এর সভাপতি, মনজেদ আলী পাবনা সিটি কলেজের অধ্যাপক, শামসুন নাহার বন্যা, দৈনিক সিনসার প্রধান সম্পাদক, এস এম মাহবুব আলম, বাঁচতে চাই সমাজ কল্যান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক, আব্দুর রব মন্টু,সূচিতা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক, নাসরিন পারভীন, ওসাকার নির্বাহী পরিচালক, মাজহারুল ইসলাম, স্বর্ন বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি, আতিকুর রহমান, মহিলা পরিষদের, সহ-সাধারণ সম্পাদক,  রোজী খাতুন, অর্থ-সম্পাদক, রেহানা করিম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক, শরিফা খাতুন সুখী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বদরুন নাহার, কার্যকরী সদস্য, রওশন আকতার মিন্টু প্রমূখ। এছাড়াও কর্মসূচীর শুরুতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, পাবনা জেলা শাখার আন্দোলন সম্পাদক, জিনাত সুলতানা, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে সুনির্দিষ্ট লিখিত দাবিগুলো পড়ে শোনান।
কর্মসূচীতে বক্তগন বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি পুনরায় দেশে সম্প্রদায়িক সহিংসতা, নারীর প্রতি সহিংসতা, অতীতের বেশ কিছু ঘটনার মতো আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের মাধ্যমে নানা রকম গুজব এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়ানো, উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদিতাসহ নানা রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা জনজীবনকে নিরাপত্তাহীন ও বিপন্ন করে তুলছে। সাধারণ মানুষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নারী শিশু এই অস্থিরতার এবং অনিশ্চয়তার শিকার হচ্ছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে পুনরায় সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী ও নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। লালমনিরহাট. কুমিল্লার মুরাদনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর সহ আরও কয়েকটি স্থানে এই ধরনের দুঃখজনক, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। এইসব ঘটনায় বাংলাদেশের সকল সম্প্রদায়ের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আজ গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। এধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী করা কোনভাবেই কোন গণতন্ত্রকামী নাগরিকের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। আমরা এই সকল অপতৎপরতা বন্ধে আইসিটি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে এই অপচেষ্টা রোধে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।
বক্তাগন সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে যে দাবি সমূহ তুলে ধরেন তা হল, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি অবিলম্বে সকল সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি এই সম্প্রদায়ের উপর হামলাকারীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে গ্রেফতার ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, সাম্প্রদায়িক শক্তির অপতৎপরতা রোধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করা,ধর্ম রক্ষার নামে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিনষ্টকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। ওয়াজ মাহফিল সহ সকল প্রকার ধর্মীয় সভায় মানবাধিকার বিরোধী, অন্যধর্ম বিরোধী এবং নারী বিরোধী বক্তব্য আইন করে বন্ধ করতে হবে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল করতে হবে, ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে নিরপরাধী নয়, সত্যিকারের অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, আদিবাসী, দলিত হরিজন সহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর সকল প্রকার নিপীড়ন,সহিংসতা সহ সকল ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করতে হবে, ধর্ম অবমাননার দোহাই দিয়ে যে কোন নাগরিকের বা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর প্রাণ হরণের অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রাষ্ট্র, সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রসাশনকে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সতর্কতামূলক জরুরী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি জাতীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সাধারণ জনগণের কাছে অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছে এবং অবিলম্বে এই পরিস্থিতি নিরসনে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। সাম্প্রদায়িক উস্কানিসহ যে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে সকল সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
উক্ত কর্মসূচীতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ হতে, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ,শুচীতা সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, উদ্দিপনা মহিলা সমিতি, সূচনা সমাজ কল্যান সংস্থা, প্রতিকি মহিলা ও শিশু সংস্থা, বাঁচতে চাই সমাজ কল্যাণ সমিতি, পাবনা প্রতিশ্রুতি, ণডঈঅ , প্রত্যাশা, এফ পি এ বি, এডাব, ঝলক মহিলা সংস্থা, মায়ের আঁচল, শ্রাবনী মহিলা সমিতি, স্বর্নালী মহিলা সমিতি, স্বর্ন বাংলাদেশ, সংস্করন মহিলা সমিতির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, সাংবাদিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার, জেলা, পাড়া ও তৃণমূলের নারী অংশগ্রহন করেন। সমগ্র কর্মসূচীটি সমন্বয় করেন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, পাবনা জেলা শাখার, আন্দোলন সম্পাদক, জিনাত সুলতানা ও প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ, এ এম এস কিবরিয়।
প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচী শেষে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ হতে পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.