সাবেক জামাত নেতা গাংনীর শামসের আলী ॥ নারী নির্যাতন, নাশকতা ও মামলার আসামি হয়েও অধরা

0

মেহেরপুর প্রতিনিধি : নাশকতার মামলার আসামি শমসের আলী। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। থাকেন গাংনী উপজেলা শহরে। ঘুরছেন প্রকাশ্য দিবালোকে। অথচ পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এক সময়কার বিএনপি-জামায়াতের অন্যতম নেতা হলে এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায়।

ফলে তার অপকর্ম নিয়ে পুলিশ কিছুই করতে পারছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। রোববার (২২ নভেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী দুই নারী ও দুই পুরুষ সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে তার গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী একজন তার দ্বিতীয় স্ত্রী, আরেকজন ধর্ষণ চেষ্টা মামলার বাদি।
গ্রেফতার কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে নাশকতা মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি জুলফিকার আলী বলেন, সে পলাতক রয়েছে। মামলা তদন্ত এবং শমসের আলীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা লিখিত বক্তব্যে জানান, গাংনী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মৃত আওলাদ হোসেনের ছেলে এক সময়ের জামায়াত-বিএনপি চার দলীয় ঐক্যেজোটের নেতা ছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে তিনি খলস পাল্টে আওয়ামীলীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় আওয়ামীলীগ সেজেছেন। পূর্বের মতই তার ক্ষমতার অপব্যবহার কার্যকলাপ চলমান। ক্ষমতসীন দলের ছত্রছায়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিকারী নারী বলেন, নিজে দুইটা বিয়ে করেও একজনকে খোরপোশ না দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে রেখেছেন। নারী নির্যাতন মামলা দিলেও আদালতে স্বাক্ষী দিতে পারছে না তার ভয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী আশুরা খাতুন গাংনী উপজেলার বামন্দীর মেয়ে। তিনি অভিযোগ করেন, স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন যাতে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।

একই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ধর্ষণ মামলা চেষ্টার বাদি কলেজ ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই ছাত্রী বাদী হয়ে মেহেরপুর আদালতে একটি ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করে। মামলার বির্বরনে তিনি দাবি করেন, শামসের আলী ও আব্দুল হালিম ওই ছাত্রীর স্বামী প্রবাসে থাকায় দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। সে রাজি না হওয়ায় গত ২৭ অক্টোবর সকালে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে শামসের ও আব্দুল হালিম ওই বাড়িতে হানা দিয়ে ধষর্ণের চেষ্টা করে। ছাত্রীর চিৎকারে পাশর্^বতী থাকা ওই ছাত্রীর আপন ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে আসলে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে যায়।

এদিকে আড়পাড়া গ্রামের মৃত মহাসিন মন্ডলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, জমি ক্রয়ের জন্য শামসের আলীর কাছে টাকা দেয়। জমি না দিয়ে এখন সে বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানী করে চলেছেন। তিনি জমি বিক্রয় করবে আমার নিকট থেকে নগদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেছিলেন। টাকা ফেরত চাইলে সে আমার নামে মিথ্যা মামলা দেয় মেহেরপুর কোর্টে। মিথ্যা মামলাটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে আমি আবারো স্ট্রাম্প সংগ্রহ করে টাকা ফেরতের মামলা আদালতে দিই।

সংবাদ সম্মেলনে একই গ্রামের আ ফ ম ইদ্রীসের ছেলে এ এইচ এম ফিরোজ বলেন, ২০১৬ সালে আমার নানি আমার মাসহ তিন খালাদের জমি ভাগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে শামসের আলীকে সাথে নিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রি করে দেন। কিন্তু শামসের আলী কৌশলে তিনটি দলিলের জায়গায় চারটি দলিল করে সেও নিজের নামে কিছু অংশ জমি রেজিঃ করে নেন। বিষয়টি টের পেয়ে আমার নানি মেহেরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু শামসের আলী মনে করে যে এই মামলাটি করিয়েছি। তাই সে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিতে থাকে। সে আমাকে ১৬ সাল থেকে ২০ সাল পযন্ত বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।

অভিযোগকারীরা আরও জানান, তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাসহ ২০ থেকে ৩০টি মামলা চলমান থাকার পরেও একজন জামায়াতের নেতা হিসেবে কিভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় তা ভুক্তভোগীদের পিড়া দেয়। পুলিশ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করে সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি আবেদন জানান ভুক্তভোগীরা।
জানতে চাইলে ধানখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলি আজগার বলেন, আড়পাড়া গ্রামের শামসের আলী একজনের জামায়াতের নেতা। সে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বেরাড়। সে আসলে আওয়ামী লীগের কেউ না।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কল দিলেও শমসের আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.