যুগ্মসচিব হলেন পাবনার সদর উপজেলার কোলাদীর কৃতি সন্তান সাঈদ কুতুব

পাবনার সদর উপজেলার কোলাদী গ্রামের কৃতি সন্তান অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোঃ সাঈদ কুতুব তার মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মতৎপরতা ও সততার গুনে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

0

সাঈদ উল ইসলাম : পাবনার সদর উপজেলার কোলাদী গ্রামের কৃতি সন্তান যুগ্নসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন । অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোঃ সাঈদ কুতুব তার মেধা, প্রজ্ঞা, কর্মতৎপরতা ও সততার গুনে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সাঈদ কুতুব পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের কোলাদী গ্রামের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরহুম মোজাহার আলী মোল্লার ছেলে। কোলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯৮৭ সালে দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে। ১৯৮৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ হতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় দশম স্থান অর্জন করেন। ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্সসহ এম,কম পাশ করেন। দুই বারের চেষ্টায় ১৮তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রিট হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, চট্টগ্রামে যোগদান। এরপর চাঁদপুর কালেক্টরেটে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে; কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে; চাঁপাইনবাবগঞ্জ কালেক্টরেটে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে; কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর ও চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে; নাটোর কালেক্টরেটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া কালেক্টরেটে ডিডিএলজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে যোগদানের পর থেকে দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছর মাঠ প্রশাসনে চাকরি শেষে ২০১৫ সালের জুন মাসে উপসচিব হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যোগদান করে অদ্যাবধি সেখানেই কর্মরত আছেন।
কোলাদী তথা পাবনাবাসীর গর্ব যুগ্মসচিব সাঈদ কুতুব তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী স্ত্রী মোসাম্মৎ ফেরদৌসী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে সুখি পরিবার। বড় মেয়ে সামিরা সাঈদ জিতা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং ছোট মেয়ে লামিয়া সাঈদ জিসা এবার গোল্ডের এ+সহ এসএসসি পাশ করেছে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরুপে পালনের পাশাপাশি প্রিয় গ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান উন্নয়ন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা, সামাজিক অবক্ষয় রোধ, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের মাঝে ধর্মীয় ও সামাজিক মুল্যবোধ গঠনের তাগিদ দেন তিনি। ইতোমধ্যে তিনি এলাকার শিক্ষিত ও সমাজ সচেতন লোকদেরকে একত্রিত করে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। কোলাদী গ্রামসহ এলাকার মানুষ তার সুফল পেতে শুরু করেছে। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার নেশায় আসক্ত ছিলেন যুগ্মসচিব সাঈদ কুতুব। তিনি তার সেই অভ্যাসকে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামের পাঠাগারটি পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করেন। তিনি তার সহপাঠি বন্ধুদের সাথে নিয়ে গ্রামের বিভিন্ন বয়সের ও শ্রেণি পেশার মানুষের অনুপ্রেরনা ও সহযোগিতায় ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর পাঠাগারের নিজস্ব জমিতে পাকা ভবন নির্মান কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারী পাঠাগারের সুবর্ণ জয়ন্তীতে নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। উদ্বোধনের পর থেকে পাঠাগারটি কোলাদীসহ আশেপাশের গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীসহ শিক্ষিত জন সাধারণের কাছে জ্ঞানের আলো বিতরণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর পূর্বে ২০১৩ সালেই কোলাদী বড়বটতলায় কোলাদী গ্রামের ১৯৮৬ ও ৮৭ ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতায় একটি যাত্রী ছাউনি নির্মিত হয়। একাজে বন্ধুদের সাথে যুগ্মসচিব সাঈদ কুতুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মানবিক দায়বদ্ধতায় সৎ কর্ম ও মহৎ চিন্তা চেতনা ধারন করে চলা এই মানুষটি গ্রামের গরীব অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী ফান্ড পরিচালনা করেন। বিশেষত কোলাদী গ্রামের চাকরিজীবীদের নিকট থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে গঠিত ফান্ড দিয়ে গ্রামের দরিদ্র অসহায় মানুষদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে থাকেন। ইতোমধ্যে তার এই উদ্যোগের মাধ্যমে ওপেন হার্ট সার্জারী, ব্রেন টিউমার সহ নানা জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা করিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে চলমান করোনা দুর্যোগ সময়ে গ্রামের কর্মহীন দিনমজুর ও অসহায় মানুষের খাদ্য সহায়তা দানের উদ্যোগ গ্রহন করেন তিনি। মানব সেবামূলক এই কাজে তার বন্ধুসহ গ্রামের চাকরিজীবীদের সহযোগিতা কামনা করে মোবাইলে স্ট্যাটাস দেন। সাথে সাথেই আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়ান গ্রামের চাকরিজীবীরা। রোজা শুরুর আগেই গ্রামের কর্মহীন ও দরিদ্র ৯৪ টি পরিবারের মাঝে ১ লক্ষাধিক টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.