চাঁই বিক্রির ধুম পাবনার হাট-বাজারে

বর্ষা আসার আগেই বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা-যমুনা ও হুরাসাগরের পানি। গত কয়েকদিন ধরেই আকষ্মিকভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়েছে জেলেদের মাছ ধরার তৎপরতা।

0

পাবনা প্রতিনিধি : বর্ষা আসার আগেই বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা-যমুনা ও হুরাসাগরের পানি। গত কয়েকদিন ধরেই আকষ্মিকভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়েছে জেলেদের মাছ ধরার তৎপরতা। প্রাণ ফিরে পেয়ে মাছ ধরার চাঁই, চাড়ো, পলো, বৃত্তি, বুছনা তৈরীতে ব্যস্ত কারিগরেরা। নদী ও বিল বিধৌত পাবনার বেড়া উপজেলায় যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত তেমনি ছোট বড় ৮ টি নদী বয়ে গেছে এ উপজেলার উপর দিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ষা এলেই উপজেলার বেড়া পুরান বাজার ও চতুর হাটে চাঁই (দোয়ারি) চাড়ো, পলো, বৃত্তি, বুছনা ইত্যাদি বিক্রির ধুম পড়ে যায়। তাই চাঁই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পরে সংশ্লিষ্টরা। বাড়ির নারীরাই মূলত এসব চাঁই তৈরি করেন। কিন্তু বর্ষা আসার আগেই নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট মাছ ধরার উপকরণ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা।

উপজেলার বেড়া বাজার সংলগ্ন স্থানে বসে চাঁইয়ের হাঁট। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ভ্যান বোঝাই করে চাঁই বিক্রির জন্য বিক্রেতারা নিয়ে আসে এখানে। দূর দুরান্ত থেকে মৎস্য শিকারীরা চাঁই কিনতে আসে এখানে। এক একটা চাঁই তৈরিতে ২ শত থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে জিনিসের মান বুঝে সেগুলো সাড়ে তিন শ’ থেকে সাড়ে চার শ’ টাকা বিক্রি হয়। বড় আকারের চাঁই তৈরীতে খরচ হয় পনের শ’ থেকে দুই হাজার টাকা। আর সেগুলো বিক্রি হয় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়।

চাঁইয়ের হাটে গিয়ে জানা যায়, বেড়ায় মূলত নাগডেমড়া, ফরিদপুর, আটিয়াপাড়া, ক্ষিদিরপুর থেকে চাঁই (দোয়ারি) বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে বিক্রেতারা। সেগুলো সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার জেলে ও পাইকারিরা ক্রয় করেন। চাঁই তৈরির সাথে জড়িয়ে রয়েছে কয়েকশ’ পরিবারের জীবন জীবিকা। চাঁই তৈরির কারিগররা বিভিন্ন এনজিও বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার কেউ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ কিনে চাঁই তৈরি করে। ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দামে বাঁশ কিনে তিনটি চাঁই তৈরি সম্ভব বলে জানা যায়।

চাঁইয়ের হাটে বিক্রি করতে আসা সাঁথিয়া উপজেলার বেওবাড়িয়া আটিয়া পাড়া গ্রামের আজিজুল মোল্লা জানান, প্রতিটি চাঁই বানাতি (তৈরীতে) যা খরচ হয় তা থেকে বিক্রিতে ভালই লাভ হয়। একজন কারিগর সারা দিনে ছোট আকারের দুইটি দোয়ারি বানাতে পারেন। গেল বছরের চেয়ে এ বছর আগেই বেচা কেনা হচ্ছে দামও একটু বেশি পাচ্ছি। চাঁইয়ের হাটে ক্রয় করতে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর বান্তিয়ার চরের তোফাজ্জল মিয়া জানান, চাঁই পাতলে চিংড়ি, বোয়াল, বাইনসহ নানান ধরনের দেশী মাছ ধরা পরে। পরিশ্রমও কম। একবার দোয়ার পেতে

কয়েক ঘন্টা পর দেখতে হয় মাছ পড়েছে কি না । তাছাড়া বাজারে চাঁইয়ে ধরা মাছের চাহিদাও থাকে বেশি কারণ চাঁইয়ে পড়া মাছ গুলো তাজা থাকে। আষাঢ় মাস থেকেই এগুলো বিক্রি হয় পুরো তিন মাস। একাধিক বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও বেশি চাঁই ও বুছনা বানানো সম্ভব। তাছাড়াও এর সাথে বাঁশ শিল্পও টিকে থাকবে বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুনজর দাবী এ পেশার সাথে জড়িতদের।

 

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.