ইয়াবার খালাস হচ্ছে মহেশখালী-ধলঘাটা মাতারবাড়ী নৌ- চ্যানেলে

0

ইয়াছিন আরাফাত, মহেশখালী প্রতিনিধি : কক্সবাজারের মহেশখালীর বিভিন্ন মেগা প্রকল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একাধীক ইয়াবা সিন্ডিকেট। এসব অক্টোপাসের মত সিন্ডিকেট প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রমিক ও কর্মচারীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে লাখ-লাখ টাকার ইয়াবা। শ্রমিকদের মাঝে ইয়াবার চাহিদা বেশী হওয়ায় চাহিদা মেঠাতে প্রতিযোগীতায় নেমেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। জানাযায়, নিত্য নতুন কৌশল পাল্টিয়ে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি পরও তারা সড়ক পথ ছাড়া ও নৌ-চ্যানেল দিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান মহেশখালী উপকূলে খালাস হচ্ছে।

টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবা পাচারের নতুন রুট সাগরতীরবর্তী মহেশখালী উপকূলকে বেঁচে নিয়েছে অনেকে। কয়েক বছর আগেও যারা মজুরী করে ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের জীবন যাপনে হঠাৎ এসেছে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। অল্প সময়ে অনেকে কোটিপতি টাকার মালিক ইয়াবার টাকায়। একটি সিন্ডিকেটের সদস্যদের পুলিশ গ্রেফতার করলেও ইতোমধ্যে তারা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ফলে এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। খুচরা ইয়াবা বিক্রির প্রতিযোগীতা চলছে মহেশখালীর সবকটি মেগা প্রকল্পে। কয়লা বিদ্যুৎ, গভীর সমুদ্র বন্দর, এসপিএম প্রকল্প ও গ্যাস লাইন প্রকল্পে দেশী ও বিদেশী অন্তত ২০ হাজার লোক কাজ করছে। তাদেরকে ঘিরেই জমজমাট চলছে ইয়াবা ব্যবসা।

এতে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শ্রমিক পর্যায়ে অধিকাংশ শ্রমিক-কর্মকর্তা ইয়াবা সেবনে জড়িত। অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি কোম্পানীর মানব সম্পদ বিভাগের মামুন নামের কর্মকর্তাকে ইয়াবাসহ আটক করেছিল পুলিশ। এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ৫ জনের নামে থানায় মামলাও হয়। মাতারবাড়ি ইউপি সদস্য জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সম্প্রতি একাধীক রুট দিয়ে ইয়াবা যাচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। এছাড়া শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে প্রকল্পের বাইরে যারা বাসা নিয়ে থাকেন তাদের অধিকাংশয়ের বাসাতেই চলে ইয়াবা সেবন। তাদের ইয়াবা সরবরাহ করতে মাতারবাড়িতে গড়ে উঠেছে একাধিক ইয়াবা সিন্ডিকেট। তারা প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকার ইয়াবা সরবরাহ করছে প্রকল্প এলাকায়। যার ফলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় যুব সমাজও ইয়াবা সেবনে জাড়িয়ে পড়েছে। এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে মাতারবাড়িতে কোন অভিযান না থাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ইয়াবা সেবন। এতে প্রকল্পের কাজেও বেঘাত ঘটছে। কালারমারছড়া মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকার হুমায়ুন জানিয়েছেন, বিদেশী এবং বহিরাগত শ্রমিকের কারণে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা। কোন বাধা ছাড়াই চলছে ইয়াবা ব্যবসা ও সেবন। এতে অধিক লাভের আশায় অনেকেই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের মাঝে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কালারমারছড়ায় অন্তত ২টি ইয়াবা সিন্ডিকেট কাজ করছে ইয়াবা সরবরাহে। মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকা ঘিরে ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে উঠার বিষয়টি অনেক আগের। বিগত সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা ব্যবস্থা নিলেও কোন কাজ হয়নি। এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ি ও সেবনকারীরা। অন্যদিকে অভিন্ন কথা বলেছেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক নুর বক্স। তিনি বলেন বহিরাগতদের কারণে এলাকার সুন্দর পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।

কারা ইয়াবা সরবরাহে জড়িত তাদের সকলেই চিনে। প্রশাসনের কাছেও তারা চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। পার্শবর্তী ইউনিয়ন ধলঘাটার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইশতিয়াক বলেন,মাতারবাড়িতে হয়েই ধলঘাটা ইয়াবা প্রবেশ করলেও এখন সরাসরি সাগর পথে আসা ইয়াবা ধলঘাটার বিভিন্ন ঘাটে খালাস হচ্ছে। নিয়মিত স্পীডবোট চলাচল থাকায় কেউ বুঝতেও পারে না ইয়াবার চালানের বিষয়টি। প্রকল্পে ব্যবহৃত স্পীডবোট দিয়েও ইয়াবা নিয়ে আসে সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র প্রকৌশলী জানিয়েছেন, মেগা প্রকল্পে বিভিন্ন কোম্পানীর অসংখ্য লোকজন কাজ করে। এরা কি করছে তা এরাই তদারক করে। ইয়াবা সেবনের বিষয়টি শুনে বিগত সময়ে কয়েকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা ব্যবস্থাও নিয়েছে। এখন আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবদুল হাই জানিয়েছেন, কোন তথ্য পেলে পুলিশকে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশের অবস্থান আরো কঠোর হবে। কোন মাদক ব্যবসায়ি কিংবা সেবনকারী রেহাই পাবে না। পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.