পাবনায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিবাদমান দু’গ্রুপের সমঝোতা বৈঠকে হট্টগোল!

0

পাবনা প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পাবনায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিবাদমান দু’গ্রুপের বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের ডাকা সমঝোতা বৈঠক উভয়গ্রুপের হট্টোগোলে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পণ্ড হয়ে গেছে।

পাবনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়রানী প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে বেশ কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের প্রয়াত স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আত্মীয় অ্যাডভোকেট সাইফুল আলম বাবলু ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানী, ভাতা বন্ধ, গেজেট বাতিল, চাঁদাবাজী, প্রভাব বিস্তার ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য সরবরাহ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে বিভ্রান্ত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে।

উভয়গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরশনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার মুক্তিযোদ্ধা হয়রানী প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) ডা. মীর্জা মনসুর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম বাবলু অনুসারীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সমঝোতা বৈঠকের আহবান করা হয়। উভয় গ্রুপের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হন। এ সময় স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত মাওলানা আব্দুস সুবহানের সাফাই সাক্ষী খন্দকার নাসির উদ্দিন ওই বৈঠকে উপস্থিত দেখে বাবলু অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে বৈঠক স্থল ত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় ডা. মীর্জা মনসুর ও অ্যাডভোকেট বাবলু অনুসারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। শুরু হয় হট্টগোল। পরে সমঝোতা বৈঠক পন্ড হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সাইফুল আলম বাবলু বলেন, নিয়মের বাইরে কোন কাজ করা হয়নি। যারা অমুক্তিযোদ্ধা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তারপরও বিক্ষুদ্ধ হয়ে বাদ পড়া, ভাতা আটকে যাওয়া ও আপিলের শুনানীতে থাকা মানুষগুলো আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। হট্টগোলের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিসি অফিসের সম্মেলন কক্ষে গিয়ে দেখি যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আব্দুস সুবহানের সাফাই সাক্ষী খন্দকার নাসির উদ্দিন উপস্থিত রয়েছেন। ডিসি সাহেবকে বলেছিলাম ওই ব্যক্তি থাকলে আমরা এই বৈঠকে বসবো না। কিন্তু ডিসি সাহেব কোন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। তখন পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে ও আমার লোকজনকে অশালিন ভাষায় গালাগাল এবং লাঞ্ছিত করতে অপচেষ্টা চালায়।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডা. মীর্জা মনসুরের অনুসারী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, বাবলুর স্বেচ্ছাচারিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানী বন্ধ, চাঁদাবাজি, একক আধিপত্য বিস্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা। আর এই প্রতিবাদের কারণে একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ভাবে হয়রানী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে চলছেন তারা। ডিসি অফিসের সুন্দর পরিবেশও তারাই নষ্ট করেছেন।

সমঝোতা বৈঠকে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আসম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সিসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, বিষয়টি অনাকাংখিত। আমি চাই এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হোক। পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ একত্র হয়ে স্বাধীন এই দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এক সাথে এক কাঁধে কাজ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে হলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা অপরিসীম।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.