বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা ও বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কাঁচা পাটের পাশাপাশি জুট ইয়ার্ন, টুওয়াইন, চট ও বস্তার পর এবার বিশ্ব বাজারে পাটের কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শীতপ্রধান দেশগুলোতে প্রায় ৫০ ধরনের পাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে। হাতে তৈরি বিভিন্ন পাটজাত পণ্য ও কার্পেট মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাটের ২২ জাতের সুতা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪ দেশে।

পাটের সুতা দিয়ে শাড়ি ছাড়াও তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবির কাপড়, টুপি, জিন্স ও গরম কাপড়। দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বখ্যাত বিলাসবহুল গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাট। উড়োজাহাজের ইন্টেরিয়রও তৈরি হচ্ছে পাট দিয়ে। পাট পাতার সু্যপ ও পাটের কফিন ইউরোপের দেশগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বে পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক এ তন্তুর বহমুখী ব্যবহার বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাঁধ ভাঙন রোধে পাটের বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে।

পাটের তৈরি বৈচিত্র্যময় পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে প্যাকিং সরঞ্জাম, স্মার্ট পাটের ব্যাগ, পাটের তৈরি টব, খেলনা, জুট ডেনিম, জুয়েলারি, ম্যাটস, জুতা, স্যান্ডেল, বাসকেট আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফ্রিকার দেশগুলোতে দাতা সংস্থার ত্রাণসামগ্রী ব্যবহারে পাটের দড়ি ও বস্তার চাহিদা বেড়েছে। বিমান থেকে পাটের বস্তার মধ্যে খাবারসামগ্রী নিচে ফেলা হয়।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ জানান, বিশ্বখ্যাত ব্রান্ড বিএমডবিস্নউ, মার্সিডিস বেঞ্চ, টয়োটা, ভলভো, মিতসুবিসির মতো গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পাট। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ির ড্যাশবোর্ড ও ইন্টেরিয়রে কাঁচের ফাইবারের বদলে ব্যবহার করছে পাটের সূক্ষ্ণ আঁশ। এতে পাটের বিশ্ববাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। সম্ভাবনা বাড়ছে বাংলাদেশের ভালো পাটের। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে পাটের একটি বড় বৈশ্বিক বাজার তৈরি হয়েছে। গাড়ির প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরে ব্যবহৃত হচ্ছে লাখ টনের বেশি পাট। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পরিবেশবান্ধব পাট

রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন পাটের আঁশের পাশাপাশি পাটখড়ি ও পাটখড়ির ছাইয়ের চাহিদা দেশে-বিদেশে বাড়ছে। পাটখড়ি থেকে তৈরি হচ্ছে কম্পিউটার ও ফটোকপির মূল্যবান কালি। সম্ভাবনার নতুন খাত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে পাটখড়ির ছাই বা ছাই থেকে তৈরি কার্বন। পাটখড়ি পুড়িয়ে তৈরি করা হয় চারকোল পাউডার বা কার্বন। এ কার্বন রপ্তানি হয়। কার্বন থেকে তৈরি হয় কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপির কালি, আতশবাজি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও প্রসাধন সামগ্রী।

কার্বন ফ্যাক্টরি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চারকোল ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চারকোল রপ্তানি হয় চার হাজার ১৮২ দশমিক ২৭ টন। প্রতি টন চারকোলের মূল্য ছিল ৭০০ ডলার। এ হিসাবে চারকোল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসে ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৮৯ ডলার বা প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

বিশ্বের মোট পাটের ৯০ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতে। এককভাবে বাংলাদেশ বিশ্বে উৎপাদিত কাঁচা পাটের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পাটের সুনাম আছে। সরকারের নানা উদ্যোগে দীর্ঘদিন পর সোনালি আঁশে আবার সোনালি স্বপ্ন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পাটের দেশ হলেও পাট পণ্য রপ্তানিতে এগিয়ে ভারত। তারপরও কয়েক বছরে বাংলাদেশ পাট খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর হিসাবে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১১৬ দশমিক ১৪ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। আগের বছরের তুলনায় পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, বিশ্বে এখন পস্নাস্টিক বা সিনথেটিক ফাইবার বাদ দিয়ে ন্যাচারাল ফাইবারের একটা বড় বাজার তৈরি হয়েছে। নানা ধরনের পণ্য তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর রমরমা হয়ে উঠেছে পাট বাণিজ্য। এবার পাটের দাম উঠেছে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এবারই কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে পাট। পাটের দামে দেশের প্রায় এক কোটি পাটচাষি এবার মহা খুশি। পাট খাত আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা। তবে পাটের রপ্তানি আরও বেশি বাড়াতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। গাড়ি নির্মাণ ও পাটপণ্য রপ্তানির যে বাজার সৃষ্টি হয়েছে, তা ধরে রাখতে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার সারাদেশে আট লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৯০ লাখ বেল। গত বছর দেশে পাটের আবাদ হয় ৬ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ আবিষ্কার করেছিলেন বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী। পরে এই ব্যাগের নাম দেওয়া হয় ‘সোনালি ব্যাগ’।

বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে ২০১০ সালে গবেষণা দল পাটের জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ উন্নত মানের পাট চাষ এবং বীজ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। এর পর পাটের তিনটি জিনোম কোড পায় বাংলাদেশ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.