জুনোভাই ভাই : একজন সাহসী মুক্তি যোদ্ধার কথা । আতিকুর রহমান সালু

0

জুনোভাই ভাই: একজন সাহসী মুক্তি যোদ্ধার কথা

ভোর বেলাতেই জুনো ভাইয়ের মেয়ে পুতুলের মেসেজটা পেলাম।সহযোদ্ধা জুনো ভাই আর নেই, ইননা…..রাজিউন। জানতাম তিনি গুরুতর অসুস্থ, তবু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল! বিধির বিধান খন্ডাবে কে? এটাইতো নিয়ম। সবাইকে একদিন যেতে হবে এই দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে! কেউ আগে কেউ পরে! আমার ছোটো মেয়ে আনিকা চলে গেছে সেই না ফেরার দেশে মাত্র ১৬ বছর বয়ষে! আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে কার দুর্ঘটনার কারণে হাসপাতালে ভরতী হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায়! ২০০৬ সালে ৩১শে জুলাই।আমি তখন ঢাকায়। অনেকের সাথে রণো ভাই ও জুনো ভাই এলেন দেখা করে সমবেদনা জানাতে। এযেন কাকতালীয় ঘটনা! আমেরিকায় আমাদের নিউজারসীর বাসায় অনেক আগে জুনো ভাই ও চপল ভাবী এসেছিলেন এবং পরে রণো ভাইও এসে এক রাত ছিলেন। আমার ছোটটো মেয়ে আনিকা .. জুনো ভাই ও ভাবীকে গান গেয়ে শুনিয়েছিল! মনের আয়নায় ভেসে ওঠে কত ছবি কত কথা! ১৯৬২ ও ‘৬৩এর আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ও শরিফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী সংগ্রাম,

ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলন, সতীরথ আসাদের শহীদ হওয়ার ঘটনা, ‘৬৯ এর গণ অভভু্ৎথথান ও সুমহান মুক্তি যুদ্ধের ছবি! ১৯৭২ সনে বাংলাদেশ হওয়ার পর ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বিপ্লবী ছাত্রইউনিয়নের বিশাল সম্মেলন অনুষঠিত হয়েছিল ।সেখানে সারা দেশ থেকে আনুমানিক২০ হাজার ছাত্র ছাত্রী যোগদান করে। হুজুর ভাসানী সেই সম্মেলন উদ্ভোদন করেন। জুনো ভাই ছিলেন তখন সভাপতি ও আমি ছিলাম সাধারণ সম্পাদক। ঐ সম্মেলনেই আমি সভাপতি নির্বাচিত হই।

রণো ভাইয়ের ছোট ভাই হ’ল জুনো ভাই।দুজনের বনধুততের তুলনা নেই! কতবার তাদের বাসায় যে গেছি তার হিসেব নেই। খালাম্মার আতিথেয়তার তুলনা মেলা ভার! একবার দিনাজপুরে আমাদের সভায় যাওয়ার কথা। ভোর বেলার রেলে।শীতের দিন। আমরা ঘুমে। খালাম্মা ডাকছেন এই রণো,জুনো সালু ওঠো,তোমরা

.. গারী পাবেনা। গরম পানি করে রেখেছি, নাস্তা রেডী।
….একদিন দুদিন নয়, দিনের পর দিন. মাসের পর মাস ও
….বছরের পর বছর তিনি হাসি মুখে আমাদের জ্বালাতন
…. সহ্য করেছেন! খালাম্মা যেন ছিলেন ম্যাকসিম গোরকীর
…..মা! খালুজানও ছিলেন খুউবই অমাযিক।
…,কাকরাইলের ও ৩২ নংএর ধানমন্ডির বাসায় কতবার
….গেছি। সবকিছুই এখন সপনের মত মনে হয়!
….দিন কি ভাবে কেটে যায় দিন?
….’ সময় যেন নদী
……কুল কুল বয়ে চলে নিরবধি’।

ছাত্র ইউনিয়নের সভা ও সম্মেলন উপলক্ষ্যে দেশে কত জায়গায় গেছি আমরা! তিনি আমাদের টাঙ্গাইলের বাসাতেও গেছেন। গেছেন মওলানা ভাসানীর সংগে দেখা করতে। ১৯৬২এর তৎকালীন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আমতলা থেকে একটি পরিবার যাত্রা শুরু করেছিল শোষন মুক্ত সমাজ কায়েম করার সপ্ন বুকে নিয়ে….., মত পার্থক্য ও বিভাজনেও সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মত! এখনও তা’ অমলিন। আশাবাদী আমি, নতুন প্রজন্ম তারা বাকি কাজটুকু সমপন্ন করবে। আমরাতে কারণে অকারণে রেগে যাই। অবাক ব্যাপার,জুনো ভাইকে আমি কোনদিন রাগতে দেখিনি! তিনি ছিলেন অতি বিনয়ী, সজ্জন ও নিরঅহমকার ব্যাকতিত্য। ঢাকায় যতবার গেছি একাধিক বার দেখা করেছি। বেঁচে থাকলে আবার হয়তো যাব,

….জুনো ভাইকে ‘মিস করবো খুউবই মিস করবো। আমাদের মনের মনিকোঠায় তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং তাকে জান্নাতবাসী করুন।

আতিকুর রহমান সালু : কবি, লেখক, পরিবেশবিদ ও সোস্যাল একটিভিষট
বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.