নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ নেই – হীরেন পণ্ডিত

0

এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি দুদকের একজন সাবেক কমিশনার। ইতোমধ্যে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছ। দুদক আইনে বলা আছে, কোনো কমিশনার অবসর নেয়ার পর প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগের যোগ্য হবেন না। এখন মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দুদক আইনের ওই সূত্র ধরে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়ছে রাষ্ট্রপতি পদটি ‘লাভজনক’ কি না। রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক কি না, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে এর আগেও এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট এক রিট মামলার রায়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক নয়’। ওই বছর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মামলায় বলা হয়েছিল, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে রাষ্ট্রেও কোনো লাভজনক পদে বসা যায় না।

রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক পদ বলে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তাদের ধারণা অবান্তর ও অমূলক। আইনের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রপতি পদটি রাষ্ট্রের কোনো ‘লাভজনক’ পদ কি না, সেই আলোচনায় নিজের মতামত জানায় নির্বাচন কমিশন। ‘রাষ্ট্রপতির পদটি লাভজনক কোনো পদ নয়। এটি সাংবিধানিক পদ। সেক্ষেত্রে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণে আইনগত কোনো বাধা নেই।’

শুনানি শেষে আদালত রায় দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক নয়’; সুতরাং সাহাবুদ্দিন আহমদের রাষ্ট্রপতি হতে বাধা নেই। সেই রায়ের প্রসঙ্গ ধরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ওই রায়ে স্পষ্ট বলা রয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদটি অফিস অব প্রফিট নয়। এটা কন্সটিটিউশনাল পদ। অতএব বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ ছিল সম্পূর্ণভাবে বৈধ। ওই মামলা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

যেহেতু উচ্চ আদালতের রায় আইন হিসেবে বিবেচিত হয়, সেহেতু বর্তমানে যিনি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, যদিও তিনি দুদকের কমিশনার ছিলেন, উনি রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই।’ ‘দুদকের আইনে বলা আছে, কমিশনাররা লাভজনক পদে যেতে পারবেন না। কিন্তু আপনারা জানবেন যে, নির্বাচন কমিশন যখন এটা রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই করেছে, তখন আইনকানুন জেনেই এটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ ‘আমাদের সামনে উচ্চ আদালতের একটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদকে লাভজনক পদ বলা যাবে না। ওই রায়ে বলা আছে, অফিস অব প্রফিট বলতে বোঝাবে প্রজাতন্ত্রের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের।

এটা স্পষ্ট বলা আছে।’ লাভজনক পদ বলতে কী বোঝায়, আইন তা স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে। লাভজনক পদের ক্ষেত্রে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত এবং কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি সরকারের ৫০ ভাগের অধিক অর্থ থাকে, তাহলে সেই পদে নিয়োগকে বলা হবে লাভজনক পদ। এখানে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা- কর্মচারী না। এগুলো হলো সাংবিধানিক পদ। যেহেতু সাংবিধানিক পদ, অতএব লাভজনক পদেও ডেফিনেশনে এরা পড়ে না।

আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, যদি একাধিক প্রার্থী না থাকে এবং মনোনয়নপত্র বাছাই করার পরে যদি দেখা যায় মনোনয়নপত্র সঠিক আছে, বৈধ আছে তাহলে ওই সময় তাকে নির্বাচিত ঘোষণা দিয়ে দেবেন। এটার জন্য আর প্রত্যাহার করার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।’ সরকারি দল আওয়ামী লীগ গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়। এই পদে একক প্রার্থী হওয়ায় পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপিল।

নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর আগে ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার। দুদক কমিশনার হিসেবে দল, দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করাসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল, তখন বিশ্বব্যাংকের পথ ধরে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীও নিজেদের সরিয়ে নিলে বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে যায়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কথিত অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেন। দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন প্রমাণ করেন, দুদক অনুসন্ধান করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তার তথ্য-উপাত্তের কারণেই কানাডার আদালতে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়। দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল হয়। তৎকালীন দুদক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই শেখ হাসিনাকে সাহস জুগিয়েছিলেন। কারণ তিনি প্রমাণ করেছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এইসব অর্জনের কারণে অনেকের গাত্রদাহের কারণ থাকতে পারে বলেই বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে কিনা সময় বলবে। আইন অনুযায়ী, দুদক কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসা ব্যক্তিরা কোনো ধরনের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন না। মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ‘সম্পূর্ণভাবে তিনি বৈধ এবং এগুলো নিয়ে যে প্রশ্ন করা হচ্ছে তা অবান্তর।

রাষ্ট্রপতি কোনোভাবেই সরকারের কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নন। যারা বিতর্ক তুলছেন, তারা যদি বিষয়টি ভালোভাবে জানেন বিষয়টা তখন নিজেরাই বুঝতে পারবেন, এটা নিয়ে তাদের বিতর্ক করা ঠিক হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা দূরদর্শী এবং ব্যতিক্রমী তার প্রমাণ এবার নতুন রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে নতুন করে পাওয়া গেল। গত ১৪ বছরে দেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলি নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে এরকম বহু চমকের দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। যেসব চমকের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। এটি আসলে এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল। রাষ্ট্রপতি হিসেবে গণমাধ্যমে যাদের নামই এসেছে তাদেরই বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক, ইউটিউবে কিছু ব্যক্তি এখন চরিত্র হননে খেলায় মেতেছে। একজন রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। শেখ হাসিনা ভালো করেই জানেন, একটি মহল তৎপর। তারা সবকিছুকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।

এ কারণেই তিনি এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিলেন, যার যোগ্যতা অসাধারণ কিন্তু তিনি অনালোচিত। কোনো কোনো গণমাধ্যমে এটি বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক কিনা এটি সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা নেই। এ তথ্য সঠিক নয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ এবং অনুচ্ছেদ ১৪৭ এ এটি সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ কোনো লাভজনক পদ নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপতি পদটিকে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রাখতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে মনোনয়ন দেন। তখন এই মনোনয়ন ছিল একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। দলীয় পরিচয়ের বাইরে একজনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের মধ্য দিয়ে অনেক বার্তা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কী রূপ হবে নেতাকর্মীরা তার একটি বার্তা পেয়েছেন। আবার রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ যারা নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদেরও একটি বার্তা দিয়েছেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জানেন কখন কী করতে হবে, সেটা পরিষ্কার করেছেন।

প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ রাষ্ট্রপতির পদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক’ হওয়া সত্ত্বেও এটিকে ‘অলাভজনক’ বলা হচ্ছে। এই ব্যাখ্যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ এবং ৪৮ এর বিধানের পরিপন্থী। রাষ্ট্রপতির পদ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ‘অলাভজনক’ হিসেবে গণ্য হবে, আবার অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘লাভজনক’ হিসেবে গণ্য হবে-এ ধরনের ব্যাখ্যা শুধু অসাংবিধানিকই নয়, হাস্যকরও বটে। এ ধরনের ব্যাখ্যা সাংবিধানিক আইন, জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট এবং ইন্টারপ্রিটেশন অফ স্ট্যাটিউটস এর নীতির লঙ্ঘন। অনেকে অনুচ্ছেদ ৬৬ অনুযায়ী যেহেতু সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান, সেক্ষেত্রে এ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির পদের প্রকৃতি নিয়ে কোনো চূড়ান্ত বিধান পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু অনুচ্ছেদ ১৪৭ এ যেখানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ ৮টি পদ লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য হবে না, সেটি সংবিধানের কোন অংশে অন্তর্ভুক্ত আছে সেটি কি তিনি দেখেছেন? ১৪৭ অনুচ্ছেদ সংবিধানে ‘বিবিধ’ নামে একাদশ ভাগ এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংবিধানের এই ‘একাদশ ভাগ’ মূলত রেগুলেটরি এবং ব্যাখ্যামূলক। এই অংশে সংবিধানে উল্লিখিত বিভিন্ন বিধানাবলী এবং শব্দের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের এই অংশে যে বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, সেগুলো সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

অনুচ্ছেদ ১৪৭ এ রাষ্ট্রপতিসহ ৮টি সাংবিধানিক পদাধিকারীর পারিশ্রমিক বিষয়ে বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই অনুচ্ছেদের উপ অনুচ্ছেদ ১ এ সাংবিধানিক পদাধিকারীর পারিশ্রমিক, বিশেষ অধিকার ও কর্মের অন্যান্য শর্ত কিভাবে নির্ধারিত হবে সেটি বলা আছে। উপ অনুচ্ছেদ ২ এ বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতিসহ এ সকল পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল থাকতে পারবেন না। এই উপ অনুচ্ছেদের শর্তাংশে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতিসহ সাংবিধানিক এই পদগুলোতে অধিষ্ঠিত হওয়া ব্যক্তিগণ লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলিয়া গণ্য হবেন না। অনুচ্ছেদ ১৪৭ এর উপ অনুচ্ছেদ ৪ এ রাষ্ট্রপতিসহ কোন কোন পদ লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য হবে না, সে তালিকা দওয়া আছে। এই পদগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার বা স্পিকার, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক, কমপট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য। সংবিধানের এই বিধানটি একটি জেনারেল বা সাধারণ বিধান। এটি সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সংবিধানের এই অংশে অর্থাৎ একাদশ ভাগ এ কিংবা ১৪৭ অনুচ্ছেদের কোথাও এটি উল্লেখ নেই যে, এই বিধানটি কেবলমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাউকে বেছে নেওয়ার একক দায়িত্ব অর্পণের পরও গণমাধ্যমে বিভিন্ন নাম নিয়ে খবর ছাপা হয়েছে। কিন্তু যে নামটি একেবারেই আলোচনায় আসেনি, তাঁর নাম যখন প্রধানমন্ত্রী জানালেন, তখন সংবাদপত্রে বিশ্বস্ত সূত্র উল্লেখ করে বিভিন্ন নাম নিয়ে খবর পরিবেশন করা হয়েছে, এ সম্পর্কে পাঠকদের মনে কী ধারণা তৈরি হলো? রাজনৈতিক দলেও খবরের সোর্স থাকতে পারে, খবরের সোর্স থাকে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দপ্তরে। অন্ধকারে ঢিল ছুড়লে সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

এবার হয়েছেও তা-ই। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদেরা কোনো তথ্য গোপন রাখতে পারেন না বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ওই নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে রাজনীতি, প্রশাসন ও আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে বেছে নিয়ে এটা আবারও দেখালেন যে তাঁর ভান্ডার নিঃশেষ নয়, চমক দেওয়ার মতো আরও অনেক কিছুই তাঁর থলেতে এখনো জমা আছে। দেশের কোন কোন পদ লাভজনক তা আমাদের প্রচলিত আইনেই উল্লেখ রয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) এ। ঐ আইনে ১২ ধারায়। সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ারসংবলিত কোম্পানির চাকরি বা পদকে ‘লাভজনক পদ’ বলা হয়েছে। লাভজনক পদ হিসাবে সংজ্ঞায়িত আছে প্রজাতন্ত্র ; বা সরকারি সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ; বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি; এবং যে সকল কোম্পানিতে সরকারের ৫০% এর অধিক শেয়ারের মালিকানা আছে, সেই সকল কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক বেতনভুক্ত অফিস, পদ বা অবস্থান।

সংবিধানের ৬৬(৩) বলা আছে, কোন ব্যক্তি পকবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হইবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলিয়া গণ্য হইবেন না। সংবিধানের এই বিধান থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো মহল দুদক আইনের একটি ধারা সামনে নিয়ে এসেছেন। দুদকে আইনে উল্লেখ আছে কমিশনারগণ মেয়াদ শেষে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে নিয়োগ পেতে পারেন না । দুদক আইন দেশের সর্বোচ্চ আইন নয়। দেশের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান । সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানের প্রাধান্য ৭ (১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। (২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমাঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে। অতএব, যারা বিতর্ক তুলছেন, তারা যদি বিষয়টি ভালোভাবে জানেন বিষয়টা তখন নিজেরাই বুঝতে পারবেন, এটা নিয়ে তাদের বিতর্ক করা ঠিক হচ্ছে না। নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো অবকাশ নেই।

লেখক :  প্রাবন্ধিক

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.