বাংলাদেশের ‘জয়’ । নান্টু রায়

0

সজীব ওয়াজেদ জয়। জন্ম ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমান বয়সী। যে সময়ে তিনি মাতৃগর্ভে আসেন এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে ভূমিষ্ঠ হন—পুরো সময়টাই অগ্নিগর্ভ।

দেশের স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি একপ্রাণ হয়ে লড়াই করছে। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, তার জীবনসংশয়—কবর খুঁড়ে প্রতিদিন তাকে মৃত্যুভয় দেখানো হচ্ছে।

বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব ঢাকা শহরে পক্ষীমাতার মতো সন্তানদের আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। তিনিও গৃহবন্দি। পুলিশের নজর এড়িয়ে কখন যে কামাল-জামাল দুইপুত্র পালিয়েছে, কেউ জানে না! তারা নাকি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে!

এমতাবস্থায় জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা সন্তানসম্ভবা! সেই সন্তান পুত্র হলে তার নাম তিনি তো রাখবেন জয়! জয় ছাড়া আর কী নাম রাখতে পারেন বঙ্গবন্ধুতনয়া! তখন তাদের জীবনে জয়ই একমাত্র লক্ষ্য, জয়ই একমাত্র আকাঙ্ক্ষা!

তখন সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আসেনি, সন্তান কন্যা হলে তরুণীমাতা হয়তো, হয়তো কেন, নিশ্চিত তার নাম রাখতেন জয়ী! কিন্তু জন্মের পর শিশুটি পেল এক ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি।

একাত্তরের পরাজিত ঘাতক বাহিনীর আস্ফালন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের উন্মাতাল ডঙ্কানিনাদ, মুক্তিযুদ্ধে প্রাপ্ত অস্ত্র জমা দেওয়ার বদলে সেই অস্ত্র দিয়ে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি, নৈমিত্তিক খুন-ডাকাতি-সন্ত্রাস সদ্য স্বাধীন দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

সেই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুনষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, সামরিক ভ্রষ্টাচারের শ্রুতিফল সেনা অসন্তোষ—সবকিছুর যোগফল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

ইতিহাসের সেই জঘন্যতম নৃশংসতার শিকার হন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে আত্মীয়পরিজন নিয়ে। অদৃষ্ট বলতে হবে, শেখ হাসিনা, জয় ও ছোটবোন রেহানাকে নিয়ে সেই মুহূর্তে জার্মানিতে ছিলেন স্বামীর কাছে, তার স্বামী পরমাণুবিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়া তখন উচ্চশিক্ষার জন্য সেই দেশে অবস্থান করছিলেন।

তারপর শুরু হলো শরণার্থী জীবন। শেখ হাসিনা তার প্রবাস জীবনের এই পর্বের মর্মন্তুদ বর্ণনা দিয়েছেন—‘কাল যারা ক্যান্ডেললাইট ডিনারে আপ্যায়ন করেছে, তারা আজ মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।’

ঠাঁইনাড়া হতে হতে লন্ডন থেকে ভারতে এসে পৌঁছলেন, সেইখানে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করলেন। তার একান্ত মিত্র দেশ ভারত; মুক্তিযুদ্ধের প্রসববেদনা ধারিণী একমাত্র দেশ ভারত—যে ভারতের মাতৃস্বরূপিণী প্রধানমন্ত্রী তার মলিনমুখ দেখে নিজের হাতে বিস্কিট আর তৃষ্ণার জল এগিয়ে দেন!

দিল্লিতে আছেন শেখ হাসিনা। ততদিনে জয়ের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে। তাকে ভর্তি করা হয়েছে দিল্লি কনভেন্ট স্কুলে। লিকলিকে শরীর, একহারা গড়ন, মাথায় অনেকখানি লম্বা। দুরন্ত ডানপিটে! যারা চেনেন, তারা বলেন, ‘দেখতে হবে না কার নাতি!’ তারা কিশোরের মধ্যে শেখ মুজিবের ছায়া দেখতে পান।

স্কুলের পর নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর উচ্চতর শিক্ষার জন্য যান ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করেন দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর।

২০০২ সালে জয় মার্কিন ললনা ক্রিস্টিন ওভারমায়ারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তার স্ত্রীর নাম হয় ক্রিস্টিন ওয়াজেদ। তাদের একমাত্র কন্যাসন্তানের নাম সোফিয়া রেহানা ওয়াজেদ। শেখ হাসিনার প্রিয় আদুরে এই নাতনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস ও পড়ালেখা করছে।

২০১০ সালে তাকে তার পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হয়। একাদশ জাতীয় সংসদে ২০১৯ সাল থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

জয়ের হাতে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে, এই বিশ্বাস যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, তেমনি বাংলাদেশের প্রত্যেক জনগণের। তাই আমরা বলতেই পারি, তিনি বাংলাদেশের ‘জয়’।

লেখক: রাজনীতিবিদ

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.