নিউইয়র্ক প্রবাসীর পৈতৃক জমি দখলের চেষ্টা ও সন্ত্রাসী হামলা প্রতিকারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

0

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্ক প্রবাসী আমিনুল সিকদারের পৈতৃক জমি দখলের চেষ্টা ও সন্ত্রাসী হামলা প্রতিকারে তিনি অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুয়ারপুর) আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের মদদপুষ্ট টাঙ্গাইলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা টাঙ্গাইল জেলা শহরের আশেকপুরে ঐ প্রবাসীর জমি দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে ৭০ শতাংশ জমিতে তারা বসবাস করছেন। বর্তমানে ঐ জমির আনুমানিক মূল্য ৫/৬ কোটি টাকা। খবর ইউএনএ’র।

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস্থ ইটসজি রেষ্টুরেন্টে সোমবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী আমিনুল সিকদার উপরোক্ত অভিযোগ করেন। এসময় সময় তিনি তাদের বাড়ী দখল নিতে সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডের ভিডিও সাংবাদিকদের সামনেও তুলে ধরেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ‘চর দখলের মতো’ সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে প্রবাসীর পৈত্রিক বাড়ী দখলের অপচেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আমিনুল সিকদার বলেন, আমি একজন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশী। আমার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর। পৈত্রিক সূত্রে আমার বাবা ও পরিবারের সব সদস্যরা দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে টাঙ্গাইল পৌরসভার আশেকপুর মৌজায় অবস্থিত নিজ বসতবাড়ির মালিকানা ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের পূর্ব শত্রুতা জের ধরে এলাকার ও এলাকার বাইরের তথা টাঙ্গাইল জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী অনেক দিন ধরে আমাদের পৈত্রিক বাড়ি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই জের ধরে গত ৩ মার্চ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটায় সুসজ্জিত হয়ে সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে টিনের বাউন্ডারি বেড়া, লোহার গেট, ৮টি সিসি টিভি ক্যামেরা ভেঙে ট্রাকে তুলে লুট কওে নিয়ে যায়। এ সময় বাধা দিতে গেলে আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। এ ঘটনায় মামলা করলে আমাকে খুন ও লাশ গুমের হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা।

আমিনুল সিকদার বলেন, ‘এই বিষয়ে গত ৮ মার্চ টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় আমার বড় ভাই ঠান্ডু মিয়া একটি মামলা দায়ের করলে সেদিন রাত ১টার দিকে একই চিহ্নিত সন্ত্রাসী অস্ত্রবাজ বাহিনী আবারও আমাদের বাড়ি বেদখল ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। হামলার ঘটনার সিসি টিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গোপালপুর-ভুয়াপুর আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের মদদপুষ্ট টাঙ্গাইলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান মো. হোসেন সাদাব অন্তু (মনি) নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। গত ৩ মার্চ পূর্বপরিকল্পিতভাবে অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে হামলা ও জোরপূর্বক প্রবেশ করে, বাধা দিতে গেলে আমার স্ত্রীকে মারধর করে গুরুতর রক্তাক্ত আহত করা হয়। ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। এ ঘটনায় মামলা করলে আমাকে খুন ও লাশ গুমের হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা।’

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের মদদপুষ্ট চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার বড় ভাইকে অস্ত্রের মুখে নিজ বাড়ি হতে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় এবং সংসদ সদস্য নিজমুখে জমি ছাড়ার নির্দেশ অন্যথায় হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন।

গত ৩ মার্চের হামলার ঘটনায় আমাদের পক্ষ হতে দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলো: মো. আলী হোসেন (৬৫), মো. আব্দুল (৫৭), মো. সবদুল মিয়া (৫৫), মো. তায়েব আলী (৫০), মো. আরিফ (৪০), শহিদুল ইসলাম (৩০), ফিরোজ মিয়া (৩৪), সোহাগ (২৮), মো. আমিনুল ইসলাম (২৭), মো. রফিকুল ইসলাম (৬০), মো. সাহেদ পারভেজ (৫০), শাহজামাল (৪০), মো. শামছুদ্দোহা জোয়াদ্দার (৫০), মো. রফিকুল ইসলাম (মনির) (৪০), রাসেল পারভেজ (৬৫), মো. রফিকুল ইসলাম (৪৫), নাজমুল হুদা আকন্দ (৪০) ও হজরত আলী (৫৫)।
হামলাকারী ও এই মামলার আসামিদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন যারা আমার বাবার হত্যা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছেন। আমার বাবাকেও একই সন্ত্রাসী গ্রুপের কিছু ব্যক্তি এই বাসার দখল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ১৯৮১ সালে খুন করে। আমরা এখনও আমার বাবার হত্যার বিচার পাইনি। উপরন্ত আবারও তারা আমাদের বাড়ি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই জমি ছেড়ে না দিলে আমার সব ভাইয়ের পরিণতিও আমার বাবার মতো হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে বারবার।

লিখিত বক্তব্যে আমিনুল সিকদার অভিযোগ করে আরো বলেন যে, আমরা বারবার অনুরোধ করা সত্বেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করায় পুনরায় হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় যে কোনও সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ও আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। ফলে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানসহ জেলাপ্রশাসন ও পুলিশ সুপারস সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। গত ১২ মার্চ এই ঘটনা সাংবাদিকদের জানানোর জন্য ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে আমার বড়ভাই শাহানুর ইসলাম ঠান্ডু সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেই খবর সন্ত্রাসীদের কানে পৌঁছালে তারা ওই দিনই আবারও আমাদের আশেকপুরের বাড়িতে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও ভাঙ্গচুর চালায়।

আমিনুল সিকদার বলেন, আমরা বিচার না পেয়ে সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায় হয়ে এই প্রবাসে বসে আপনাদের (সাংবাদিক) সাহায্যর জন্য হাত বাড়িয়েছি। আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে যদি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন হয় তাহলে আমরা সুবিচার পাবো বলে আশা করি। একই সাথে আপনাদের লেখনীর কারণে সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হলে আমরা নিরাপদ ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস। আমিনুল সিকদার তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, ‘একজন প্রবাসী হিসেবে আমি আমার পৈত্রিক বাড়ি রক্ষায় আপনাদের সহানুভূতি আশা করছি। আপনারা চাইলে সন্ত্রাসীরা কারো বাড়ি বা ভুমি দখল করতে পারবে না। একই সাথে নিউইয়র্কের কন্সুলেট জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। যাতে তার হস্তক্ষেপে আমার মতো একজন প্রবাসীর বাড়ি বেদখলের অপচেষ্টার সংবাদটি তিনি যথাস্থানে অবহিত করেন এবং বাড়িটি রক্ষার ব্যবস্থা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিস্ট জমির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী আমিনুল সিকদার জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের আশেকপুর মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে বসবাস করছি। এই মৌজায় বাবার কাছ থেকে ১৯৬৭ সালে ৪৭৮৬ নং সাব-কবলা দলিলে ৭০ শতাংশ জামি পাই। যার এস এখতিয়ান নং-১৭৮, এসএ দাগ নং-২৪৬/৩০৩। পরে একই বছরের ১২ ডিসেম্বর বায়নাপত্র মূলে আদালতের ডিক্রি প্রাপ্ত হয়ে ৪৮ শতাংশভূমি ২৪/০৯/১৯৭৮ নং ডিক্রি জারি মোকদ্দমা মূলে ১৯৭৮ সালের ২৭ নভেম্বর নালিশীভূমি রেজিস্ট্রেশন হয়। এরপর ১৯৮০ সালে ওই ভূমি আদালতের মাধ্যমে দখল পেয়ে স্বপরিবারে ভোগ দখল করছি। হাল জরিপে নালিশী সিএস দাগনং ৯১/৯১, এর ১/১ খতিয়ানে রেকর্ড হয়; ওই রেকর্ড সংশোধনের জন্য টাঙ্গাইলের ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুন্যালে ১২৩৮/২০১৬ নং রেকর্ড সংশোধনের মোকদ্দমা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পরে আমিনুল সিকদার উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ছবি: নিহার সিদ্দিকী ।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.