লন্ডনে রাণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান : জাতিসংঘে ভাষণ ২৩ সেপ্টেম্বর : ভার্চ্যুয়াল সংবর্ধনা ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক আসছেন ১৯ সেপ্টেম্বর

0

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শুরু হচ্ছে এই অধিবেশন। ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শুরু হবে অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের সাধারণ আলোচনা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশ নেবেন। অধিবেশন শেষ হবে ২৭ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্কে স্বাগতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর ইউএনএ’র।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক আসার আগে লন্ডনে সদ্য প্রয়াত রাণী দ্বিতিয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। সরকারী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ১৫ বৃহস্পতিবার সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য যাবেন। সেখানে তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবেন। সেদিন রাণী এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর যুক্তরাজ্য থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাবেন তিনি। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি ওয়াশিংটন যাবেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী ম্যানহাটানস্থ হোটেল লটে প্যালেসের সুইটে অবস্থান করবেন।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে আগমন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার এস্টোরিয়ার ওয়ার্ল্ড ম্যানর থেকে দলীয় নেতা-কর্মী ভার্চ্যুয়ালী এই সংবর্ধনা জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর হোটেল লটে প্যালেসের সুইট থেকে সংবর্ধনায় যোগ দেবেন বলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক এসে পৌছলে ঐদিন বেলা ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলের পক্ষ থেকে ‘স্বাগত সমাবেশ’এর মাধ্যামে অভ্যর্থনা জানানো হবে। অপরদিকে ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ জাতিসংঘের সামনে ‘শান্তি সমাবেশ’ কর্মসূচী পালন করবে বলে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরের সময় দলীয় কর্মসূচী সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে দলের প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া এনাম জানিয়েছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেস থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার ভার্চ্যুয়ালী সংবর্ধনায় যোগ দেবেন বলে জানা গেছে যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দরুদ মিয়া রনেল ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক আগমন ঘিরে বদলে যাচ্ছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিবেশ। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটসে প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের অফিসিয়ালের পাশাপাশি আনঅফিসিয়াল সভা-সমাবেশ চলচে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বৈঠক চলছে গভীর রাত পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের জাতিসংঘের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধের কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষতি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি সংকট, রোহিঙ্গা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অধিবেশনে বরাবরের মতো এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কোন বিষয়গুলো গুরত্ব পাবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যযদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব কমবেশি বিভিন্ন ধরনের সংকট মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশ বরাবরই জাতিসংঘে শান্তির কথা বলে এসেছে। এবার বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী হয়তো যুদ্ধ না করে যে কোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বার্তা দেবেন। যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যারা উন্নয়শীল দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায়, সেসব বিষয় তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার কথা উঠে আসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, খাদ্য নিরাপত্তা বা জ্বালানির মতো ইস্যুগুলোও উঠে আসতে পারে।

খাদ্য, জ্বালানি এবং অর্থায়ন বিষয়ে ‘চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অব গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স’ প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির গুরত্বপূর্ণ সসদ্য হিসেবে বৈঠকে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এন্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক একটি বৈঠকেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের আয়োজনে একটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট, প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া এবং বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তের উদ্বেগ তুলে ধরবে বাংলাদেশ। এর বাইরে আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে আরেকটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ভূমিহীন-গৃহহীনদের কীভাবে সরকার সহায়তা করছে সেটি তুলে ধরা হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নিয়ে ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

নিউইয়র্কে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। কাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কয়েকটা দেশের রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। চূড়ান্ত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কেননা, সিডিউলের পরিবর্তন হচ্ছে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একটা সাক্ষাৎ রয়েছে। নিউইয়র্কের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ২৪ বা ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন। তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ পর্যন্ত ১৮ বার বাংলায় ভাষণ দেন। এবার তিনি ১৯তম ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনেও সশরীরে যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তবে করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ৭৫তম অধিবেশনে তিনি সশরীরে যোগ দিতে পারেননি।
রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী এদিকে সদ্য প্রয়াত ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করার কথা ছিল। কিন্তু ১৯ সেপ্টেম্বর রাণী এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত হওয়ায় আরও একদিন লন্ডনে অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আশা করা হচ্ছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ওইদিনই নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা করবেন তিনি।

লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, ১৯ সেপ্টেম্বর সম্ভব না হলে তার পরদিন নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা করবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন লিজ ট্রাস। তার সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বার্তা দিচ্ছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। তবে এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডন এবং নিউইয়র্কে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সফরের তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম রয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় যাচ্ছেন না। তবে শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে তার বাদ পড়া নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম হয়।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.