ডা. মাসুদের ঘোষণায় তোলপাড় : যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগের পাল্টাপাল্টি সভা ৮জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ আমার ভরসার স্থল জয় মামা : বর্ধিত সভায় আবেগ-আপ্লুত ড. সিদ্দিক

0

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বেড়েই চলেছে। আর এই সমস্যা কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি সভা হয়েছে। সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এর সভা থেকে সংগঠনের কার্যকরী পরিষদের ৮জন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭/ক ধারা অনুযায়ী এই নোটিশ প্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের এক সভায় সংগঠনের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রস্তাব নেয়া হয়েছে এম ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার। এছাড়াও গত ১৪ অক্টোবর শনিবার আচমকাই ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল’ করা হয়েছে বলে সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান এর ঘটনায় দলের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। খবর ইউএনএ’র।

উল্লেখ্য, প্রায় এক যুগ ধরে বিরাজমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেলেও নতুন কমিটি না হওয়ায় দলের মধ্যে চরম বিভেদ-বিভক্তি বিরাহ করছে। এছাড়াও সাংগঠনিক বিষয়ে বিভে-বিভত্তি আর মতবিরোধের পাশাপাশি গত ২২ সেপ্টেম্বরের ২২ নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশের মঞ্চে সভাপতি ড. সিদ্দিকর রহমানের উপস্থিতিতে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্ব করা আর এই সভার আয়োজন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ পারণ করায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যকার বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে।

জানা গেছে, গত ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এর পক্ষে প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজি এনাম) জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, নিউজার্সী স্টেট আওয়ামী লীগ, কানেকটিকাট স্টেট আওয়ামী লীগ, পেন্সিলভেনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ, নিউ ইংল্যান্ড স্টেট আওয়ামী লীগ, মেরিল্যান্ড স্টেট আওয়ামী লীগ, ভার্জিনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ, মিশিগান স্টেট আওয়ামী লীগ, ক্যালোফোনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ, জর্জিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ, ট্রেকসাস স্টেট আওয়ামী লীগ, ইলিনয়েস স্টেট আওয়ামী লীগ, মিশিগান মাহানগর আওয়ামী লীগ, ফ্লরিডা স্টেট মহানগর আওয়ামী লীগ, জর্জিয়া মহানগর আওয়ামী লীগ, সেন্ট্রেল ফ্লরিডা মহানগর আওয়ামী লীগ, মেট্রো ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ, সাউথ জার্সি মেট্রো আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগ, টেম্পা সিটি আওয়ামী লীগ, ডালাস সিটি আওয়ামী লীগ, আপ স্টেট সিটি আওয়ামী লীগ, ফেলাডেলফিয়া ট্রাইকাউন্টি সিটি আওয়ামী লীগ, নিউজার্সী সিটি আওয়ামী লীগ, বাফেলো সিটি আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র কৃষকলীগ, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, যুক্তরাষ্ট্র সেচ্ছাসেবক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগ-কে অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, জনৈক এক ব্যক্তি দলীয় প্রধানের নির্দেশ মোতাবেক ফেসবুক লাইভে এসে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় যা সংগঠন বিরোধী ও অসাংগঠিনক। শুধু কি তাই, আমাদের সবার প্রিয়মুখ জাতীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সফল সংসদ সদস্যড. আব্দুস সোবহান গোলাপ-এর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে যে উনি দলীয় প্রধানের নির্দেশ তাকে সহ আরও অনেককেই দিয়েছেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা জাতীয় নেতা ড. গোলাপ ভাই এর নাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি সাথে সাথে প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত দেশের বাইরে প্রবাসে সব চাইতে শক্তিশালী সংগঠন। আপনাদের সকলের সার্বিক সহযোগিতায় গত ১২ বছরে দেশে এবং প্রবাসে একটি অনন্য ইনসটিটিউশন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ শুধুই রাজনৈতিক দল না এটা ব্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতুর অর্থ বরাদ্দ বন্ধের প্রতিবাদে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঘেরাও করে সারা বিশ্বে নজির স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ২০১২ সালে নাগরিক সংবর্ধনায় সর্ব প্রথম নৌকার মঞ্চ তৈয়ার করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত কল্পে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ এক সাথে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।’

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় সংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ ও প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজি এনাম)। সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন ষ্টেট কমিটি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নামে পাল্টা সভার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সভাপতি বহাল থাকার পরও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রস্তাব গ্রহন অসাংগঠনিক, এমন কর্মকান্ড মেনে নেয়া যায় না। বক্তারা দলের সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় ড. সিদ্দিকুর রহমান তার সভাপতি পদে থাকা না থাকা প্রসঙ্গে আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘আমি মাটিতে না মাঝখানে এ দ্বন্দ্বটা আমারও ছিলো। আমি নেত্রীকে লিখেছি, উনি আমাকে জানিয়েছেন, তা বলতে চাইনি। এখন আমার সবেচেয়ে বড় ভরসার স্থল হলো জয় মামা। আমি যে ১২ বছর টিকে আছি, তিনি তো কিছু বলেননি। হি লাইক মি টু মাচ। তো আমার একটা ভরসা, যেহেতু জয় মামা আমাকে কিছু লেখে না, তার মানে আমি এখনো আছি’। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘বিগত ৪ বছরে যে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমানিত হয়েছি তা সব আমার নেতা-কর্মীদের জন্য। আমি বেশ কয়েকজন আমাকে ফোন করে বলেছেন আমি ফেল, আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি’।
ডা. মাসুদের ঘোষণায় তোলপাড় এদিকে গত ১৪ অক্টোবর শনিবার আচমকাই ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল’ করা হয়েছে বলে জানান সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান। তার এ বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে সংগঠনের মধ্যে। পাশাপাশি তার এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেন, মাসুদুল হাসান মনগড়া তথ্য ছড়িয়ে দলে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। আর মাসুদুল হাসানের দাবী ‘হাইকমান্ডের নির্দেশেই কমিটি বাতিলের ঘোষনা’ দিয়েছেন তিনি।

চলতি বছর জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সংবর্ধনা আয়োজন নিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ পরিবার। ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ প্রতিবারই এ আয়োজন করলেও এবার (২০২৩) তা নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ করবে বলে হাইকমান্ডের বরাত দিয়ে ঘোষনা করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান। এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে চলে বাদানুবাদ। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন সহ সভাপতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উল্লেখ্য, এবছর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি নিউইয়র্কে ১৯বার সংবর্ধিত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা ঘিরে সৃষ্ট যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিবাদের মিমাংসা হতে না হতেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন ডা. মাসুদুল হাসান। শনিবার আচমকাই ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দিয়ে তিনি জানান হাইকমান্ডের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে কেউ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

ডা. মাসুদের এ ভিডিও বার্তা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ‘আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ’ করেছে। তারা বলছেন, ডা. মাসুদ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিলের ঘোষনা দেয়ার কেউ নন। তার সেই এখতিয়ার নেই। হাইকমান্ড এমন কোন সিদ্ধান্ত নিলে বা দিলে তা যথাযত পদ্ধতি অনুসারে ঘোষনা দেবেন। এটাই সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি।

এদিকে ডা. মাসুদ ভিডিও বার্তায় জানান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যবহার করে কোন সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা যাবে না। এ দুটি পদ আপতত: স্থগিত করা হয়েছে। তবে, তিনি হাইকমান্ডের বরাত দিলেও তার দাবীর সপক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি ডা. মাসুদ।

এব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শামসুদ্দিন আজাদ টাইম টেলিভিশন-কে বলেন, ডা. মাসুদ অতি উৎসাহী হয়ে আবুল-তাবুল বকছেন। তার এমন ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তিনি একজন উপদেষ্টা মাত্র, কার্যকরী কমিটির কেউ নন। দল প্রয়োজন মনে করলে বা দলের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দিলে উপদেষ্টারা পরমার্শ দিতে পারেন মাত্র। তিনি বলেন, দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাযকরী কমিটির সভায় তার (ডা. মাসুদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিলের ঘোষনা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। ৮ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এদিকে গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রআওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের ৮জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (তারিখ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, সূত্র: ইউএসএল/চিঠি নং ২১৪) দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭/ক ধারা অনুযায়ী এই নোটিশ প্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন সহ সভাপতি ফজরুল রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, জন সংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা ও আতাউল গণি অসাদ।

চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়–য়ার কাছে প্রেরীত হয়েছে বলে জানা গেছে। এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে পাল্টা সভা
অপরদিকে সংগঠনের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন এবং নির্বাহী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, শামসুদ্দিন আজাদ, নিজাম চৌধুরী, হেলালুল করিম, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আশরাফুজ্জামান, কাজী কয়েস, শরিফ কামরুল হীরা, খোরশেদ খন্দকার, আতাউল গনি আসাদ, আলী হোসেন গজনবী, মোর্শেদা জামান, জাহাঙ্গির হোসেন, মমতাজ শাহনাজ, শারমিন আকতার দীবা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় বক্তারা সময়ের দাবী অনুযায়ী এম ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আহবান জানান। সে অনুযায়ী এই সভার বরাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সমীপে একটি আবেদন প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয় এবং সেটির অনুমোদন পেলেই বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান দায়িত্বটি গ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়।

সভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদেরকে বিজয় করতে সারা আমেরিকায় প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি আমেরিকান রাজনীতিকদের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সঠিক চিত্র উপস্থাপনের লক্ষ্যে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির আহবায়ক এম ফজলুর রহমান এবং যুগ্ম আহবায়ক যথাক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল হাসিব মামুন, আব্দুর রহিম বাদশা, কাজী কয়েস ও হিন্দাল কাদির বাপ্পা। সদস্য হচ্ছেন মোট ১০১ জন। সভায় একইসাথে আরও ৩টি উপ-কমিটির ঘোষণাও দেয়া হয়।

দলীয় সূত্র মতে, এই সভার এবং সভার সিদ্ধান্তের খবর জেনে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাাদক আব্দুস সামাদ আজাদ গত ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে ৭ জনের নামে ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ’ ইস্যু করেছেন। নোটিশে এম ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণার দাবী করে হাই কমান্ডে প্রেরণের আহবানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে সভা করায় সংশ্লিষ্টরা সংগঠনের নীতি ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

দলের ৮জন নেতার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লিখিত ধারাটি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে কোনভাবেই প্রযোজ্য নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করে বলেছেন- কারণ, এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন শাখা সংগঠন নয়। তা হলে উল্লেখ থাকতো ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র শাখা।’ কথিত স্মারকের নোটিশের পরই একই স্মারকে আরেকটি নোটিশে এম ফজলুর রহমানের নাম যুক্ত করে ৮ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এই নোটিশে অবশ্য আব্দুস সামাদ আজাদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ড. সিদ্দিক এবং সামাদ আজাদের ইস্যুকৃত নোটিশ প্রসঙ্গে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি এম ফজলুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, সিংহভাগ সদস্য-কর্মকর্তা যাকে সভাপতি হিসেবে স্বীকারই করি না, তার নোটিশ বা কথায় কী যায় আসবে। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাঠে রয়েছি, তার নির্দেশ অনুযায়ী মূলধারায় কাজ করছি। একইসাথে সামনের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কাজ করছি। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি নির্বাচনী পপ্রচার কমিটি গঠিত হয়েছে। সুতরাং এখন আর পিছে ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই।

ফজলুর রহমান আরও জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটি চিঠি যাচ্ছে। সেটির অনুমোদন এলেই আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কাজকর্ম চালাবো।

এ প্রসঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন জানান, নানাবিধ অসাংগঠনিক কর্মকান্ড এবং অনিয়ম ও নীতি-নৈতিকতা পরিপন্থী আচরণের জন্য অনেক আগেই দলীয় নেতা-কর্মীদের আস্থা হারিয়েছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। গত কয়েক বছরে তাকে বহুভাবে বিষয়টি জানানোর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটির প্রক্রিয়া অবলম্বনের অনুরোধেও আমরা সাড়া পাইনি।

উল্লেখ্য, এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় যেগদান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অনতম সহ সভাপতি সামসুদ্দীন আজাদ বার্তা সংস্থা ইউএনএ-কে বলেন তিনি ঐ সভায় যোগ দিয়েছিলেন সত্য, কিন্তু সভায় বেশীক্ষণ উপস্থিত ছিলেন না আর ঐ সভার সিদ্ধান্তের সাথে তিনি এক মত নন। কেন কি কারণে ঐ সভা আহ্বান করা হয় তা জানতেই তিনি ঐ সভায় যোগ দিয়েছিলেন বলে জানান।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.