মায়াজালে এখনো আমি। আনান্নিয়া আন্নি

0
পর্বঃ ০৯
ভদ্রতার খাতিরে বাচ্চা দুটোর সাথে ফুচকা খেতে বসেছিলাম আমরা। এ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা সেটা আমাদের সকলেরই জানা।

ফুচকা খেতে খেতে বাচ্চা দুটের সাথে বেশ গল্প করছিলো নীড়,বেশ মজার মানুষ কিন্তু ছেলেটা, নীড় এর কথা শুনে দু একবার হেসে ও ফেলেছি,  রশিকতা আর আধ্যাত্নিক কথাবার্তার আ্যওয়ার্ড দেয়া হলে বোধহয় সেই প্রথম হবে।
খেয়াল করেছিলাম আমি, ও আমাকে আড়চোখে দেখেছে অনেকবার। কুমু আর মহুয়ার সাথে বেশ মন খুলে গল্প করছিলো, তবে আমাকে বোধহয় আর কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারেনি বা আমার পছন্দ নয় শুনে আমাকে আর বিরক্ত করতে চায়নি।

ফুচকা খাওয়া শেষ করে অবশ্য নীড় আমার কাছে এসে বলেছিলো,আসছি তবে আজ, মন খারাপ হলে আমাকে একটা কল করবেন, আমি আপনার মন ভালো করতে পারবোনা কিন্তু আপনার কথাগুলো শুনে আপনাকে একটু হালকা তো করতে পারবো বলুন?

বাড়ি ফিরে আজ মনটা সত্যিই অন্যরকম লাগছে,,,,, একটু হালকা আনন্দ ভেতরটা ছুঁয়ে যাচ্ছে যেনো!কুমু-র মাথায় তেল দিতে দিতে বলছি…
হ্যা রে কুমু..
ভালো করে পড়াশোনা করছিস তো?

আহা ছোট ফুপু সবসময় পড়াশোনা পড়াশোনা করোনা তো, আজকে কেমন মজা করলাম বলো? তুমি তো যেতেই চাইছিলেনা, দেখলে নীড় মামা কত্ত মজার মানুষ, সবাইকে কি সুন্দর হাসাতে পারে। আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগে নীড় মামা কে, তোমার ভালো লাগেনা ছোট ফুপু?

হুম বেশ ভালোই…

নীড় এর কথা বলতে বলতেই ইমাদ  এর ফোন এলো। আজকে ইমাদ এর বলা কথাগুলো লিখতে গিয়ে ওর প্রতি বড্ড ঘৃনা কাজ করছিলো,আজ ওর কথাগুলো খুব বেশি নোংরা ছিলো। প্রথমে বুঝতে পারিনি কেনো এমন করছে,পরে বুঝতে পারলাম নীড় এর সাথে বসে ফুচকা খাওয়ার ব্যাপারটা কোনোভাবে ইমাদ জানতে পেরেছে বলে তার এইরূপ মুর্তি!

অনেকবার চেষ্টা করেছি পুরো ব্যাপারটা বলবার কিন্তু সে আমাকে ততক্ষণে একটা নষ্টা মেয়ে মানুষের তকমা লাগিয়ে দিয়েছে। কথাগুলো শুনে বড্ড ঘৃনা হচ্ছিল যতটা না ইমাদ এর ওপর তার থেকে বেশি নিজের ওপরে। ওর কথা শেষ করে ফোন কেটে দিলো,আমি একটাবারের জন্য নিজের বয়ান দেয়ার সুযোগটাই পেলামনা। এই মানুষ টার সাথে কিনা আমি ভালোবাসা নামক একটা সুন্দর সম্পর্কে ছিলাম এতদিন?বড় অবাক হচ্ছি আজ!নিজের পছন্দের এই মানুষ টার নিত্যনতুন রুপ দেখে আমি আজ ভরসা হারাচ্ছি নিজের ওপর থেকে।

কেনো জানি ইমাদ এর কথায় আর আজ চোখে পানি আসেনি,আজ আর আমি কাঁদিনি, কিন্তু খুব রাগ হচ্ছিল নীড় এর ওপরে।কেনো জানি নিজের রাগের ওপরে কন্ট্রোল রাখতে না পেরে আমি সঙ্গে সঙ্গে নীড় কে ফোন করে বসেছি। নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে এই ছেলেটার কাছে আজ আমি কেনো কেঁদেছি তার কারন আমার কাছে অজানা।আমার কান্না জর্জরিত কন্ঠ শুনে নীড় এর প্রথম কথা ছিলো;

কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেনো?

খুব কর্কশ গলায় বলেছিলাম নীড় কে…
কি হয়েছে সবটা শুনতে হবে আপনার? কি হন আপনি আমার যে আমার কি হয়েছে না হয়েছে তার সবটা জানতে হবে আপনাকে? আপনার জন্য যত অশান্তি শুরু হয়েছে। আর কখনো কথা বলার চেষ্টা করবেননা আপনি আমার সাথে।

প্রত্যুত্যরে নীড় একটুও রাগ না দেখিয়ে আমাকে বলেছিলো;
আপনি বললে আপনার বলা সব কথাই আমি শুনবো। আর যদি প্রসঙ্গ ওঠে কি হই আপনার, কি সম্পর্ক আমাদের? তাহলে আমি বলবো নাম না জানা অদৃশ্য কোনো সম্পর্ক আমাদের। আমি আপনার বা আপনি আমার কি হন সেটার গুরুত্ব না দিলেও চলবে। আর রইলো বাকি আমার জন্য আপনার জীবনে যত অশান্তি-র কথা,
বিশ্বাস করুন অপ্সরা আমি আপনার অশান্তি-র কারন হতে চাইনি।আমি কেবল আপনার ভেতরের আমি টাকে বুঝবার চেষ্টা করেছি,আমি চাই আপনি আমার সাথে আপনার মন খারাপের কারন গুলো শেয়ার করুন,আপনার জীবনের ভালো সময়ে আপনি অনেক বন্ধু-ই পাবেন, আমি নাহয় আপনার খারাপ সময়ের বন্ধু হলাম..

কিছু না বলে ফেনটা কেটে দিলাম আবারও,  কেনো জানি ছেলেটির সুন্দর স্বাভাবিক যুক্তির কাছে আমি বলার মতো কিছু খুঁজে পাইনা।

ডায়েরির এই পর্ব পড়া শেষ করতে না করতেই ছোট কাকির ডাক এলো, দরজায় নক করছে আর বলছে..

কুমু.. ঝিলি..
হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিলো, তোরা কি ঘুমিয়ে গিয়েছিস?

সাথে সাথে কুমু দরজা খুলে দিলো..
কি হয়েছে ছোট কাকি? কি বলেছে হসপিটাল থেকে?

তোর ছোট ফুপু বোধহয় এবার আর ভালো হবেনা রে, এখানকার ডক্টর রা বলেছে আরো ভালো কোথাও আ্যডমিট করাতে!

আবারও একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো; কি এমন হয়েছিল ছোট ফুপু-র। যার জন্য দিনদিন তার অবস্থা-র অবনতি হয়েই চলেছে?

চলবে…♥️

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.