মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি

0

                                                                                   পর্বঃ ১০

সেই রাতে আর ডায়েরি পড়া হলোনা কুমু আর ঝিলি-র। ছোট ফুপু-র শরীরের অবস্থার অবনতি হয়েছে শুনে বাড়ির বাকি লোকজনের রাতের ঘুম গায়েব হয়ে গিয়েছে।

এরইমধ্যে কুমু-র বাবা আর ছোট কাকা ও চলে এসেছে, তারাও আর এ খবর শুনে এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে সোজা হসপিটালে চলে গেলো।

চিন্তা করতে করতেই বাকি রাতটুকু পার করলো বাড়ির বাকি সদস্য রা। সকালে উঠে ছোট কাকি সবার জন্য রান্না করে নিয়েছে ,সাথে কুমু আর ঝিলি ও হাতেহাতে একটু সাহায্য করে দিয়েছে । মেজো কাকি অফিসে যাবে ছোট কাকি কে নিয়ে হসপিটাল হয়ে ছোট ফুপু কে দেখে মেজো কাকি অফিসে চলে যাবে।

হ্যা রে কুমু… তুই ঝিলি কে নিয়ে সাবধানে থাকিস কিন্তু, আমি তোর ছোট ফুপু কে দেখে তোর ছোট কাকার সাথে চলে আসবো, তারপর ছোট কাকার সাথে তোরা নাহয় একবারটি ঘুরে আসিস।

আচ্ছা ছোট কাকি তোমারা সাবধানে যেয়ো।

সকাল থেকে আর হসপিটালে ফোন করা হয়নি, ছোট কাকি ফিরলে সবটা শুনবে কুমু আর ঝিলি। এখন তারা কোনোমতো সকালের নাস্তা করে আবারও তাদের কৌতুহল মেটাতে বসে পরলো ডায়েরি নিয়ে।

(২২ অক্টোবর)
এই চারদিনে আর একবারের জন্য ও ইমাদ ফোন করেনি আমায়। আমিও করিনি। এখন আমার অন্য কারো প্রতি নয় নিজের প্রতিই একটা ঘৃনা কাজ করে। কুমু কে নিয়ে স্কুলেও যাইনি এ ক’দিন।

আজ দুপুরে ইমাদ ফোন করেছিলো।
সে বলেছে,আমার মতো চরিত্রহীনা কে সে বিয়ে করতে চায়না।তার এই কথায় আমার ঘোর আপত্তি ছিলো,তার প্রতিটি কথায় আমি পাল্টা জবাব দিয়েছি কিন্তু আমার কোনো কথাই আমাকে ইমাদ এর কাছে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি।তার জঘন্য থেকে জঘন্যতম যুক্তির কাছে আমার সব বিশ্লেষণই যুক্তিহীন হয়ে যাচ্ছিলো।

আমার ভাবতেও কষ্ট হচ্ছিল যে এই মানুষ টার সাথে আমি এতোগুলা দিন কাটিয়েছি, এতোটা সময় পরও যার আমার প্রতি এরকম চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ দেখে আমি লজ্জিত, আজ আমার তার প্রতি কেবল এক সীমাহীন ঘৃণা কাজ করছে।

সবার আগে আমি আমার আত্মসম্মানে বিশ্বাসী, যে মানুষ টা আমাকে সম্মান ই করতে পারেছেনা, ভবিষ্যতে সেই মানুষ টা আমায় ভালো রাখবে কি করে? এতো কিছুর পর আমিই কি তাকে সম্মান করতে পারবো?
কত যে প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো…

তারপর আমিও আর কোনো চিন্তাভাবনা না করে দুম করেই বলে দিলাম;
আমিও বিয়ে করতে চাইনা তোমায়, এতো জঘন্য মানসিকতার কারো সাথে আমিও রাখতে চাইনা কোনো সম্পর্ক!

ফোনটা রেখে আমি আজ গলা ছেড়ে কেঁদেছিলাম কিছুক্ষণ। বাড়ির সকলে অবাক হয়ে দেখছিলো আমায় আর বারবার শুধু একটা কথাই জিগ্যেস করছিলো, কি হয়েছে আমার?
আমি আমার কান্নার কোনো কারন দর্শাতে পারিনি তাদের কাছে, তরপরও কারো বুঝতে বাকি নেই যে আমার কান্না-র কারন কেবল ইমাদ ই।

আজ বড় ভাবি আমাকে অনেকবার বুঝিয়েছে যেখানে মানসিক শান্তি নেই সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা সকলেই চাই একটা সুন্দর সম্পর্কে থেকে দুজন আলাদা আলাদা মানুষ এক সুতোয় থেকে দুজন দুজনকে ভালো রাখবার,কিন্তু যেখানে একজনের ওপর আরেকজনের মাত্রাতিরিক্ত চাপিয়ে দেওয়া মতামতের প্রভাব পরে কিন্তু বিপরীত দিকের মানুষ টা সেটা অনুভব করতে পারেনা তখন সেটাকে আর কোনো সম্পর্ক বলা যায়না। দুজন মানুষের ভবিষ্যত অশান্তির বাসা তৈরির নিছকই একটা ছেলেখেলা বলা চলে, তাই এটা নিয়ে আর না এগোনোই শ্রেয়।

(২৩ অক্টোবর)
এখন রাত বারোটা বেজে উনত্রিশ মিনিট। আমার কানে শুধু ইমাদ এর কথাগুলো বাজছে,তারপরেই বড় ভাবির বলা কথাগুলো। ওদের দুজনের কথাগুলো যদি আমি তুলনা করি তাহলে আমি অনেক গুলো ঠিক আর ভুল কে আলাদা করে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাবো। কিন্তু আমার আর কোনো ঠিক ভুল জানার ইচ্ছে নেই, মনের মাঝে কেমন এক বিতৃষ্ণা কাজ করছে, তাই আর কোনো চিন্তাভাবনা নয়। আমি আজ থেকে নিজেকে নিজেই ভালো রাখবো। আর ঐ মানুষ টার অস্তিত্ব মুছে দেবো ভেতর থেকে।

(২৫ অক্টোবর)
প্রতিদিনের মতো আজও ফোনে মেসেজ এসেছে। রোজ দুটো করে মেসেজ নিয়ম করে আসবেই আসবে, কখনো কখনো বেশি ও আসে।মেসেজ গুলো নীড় পাঠায় কিন্তু আমি কখনও পাল্টা মেসেজ করিনি।
রাত প্রায় সাড়ে এগাড়োটা। টুং করে মেসেজের আওয়াজ হলো, ওতে লেখা ছিলো
“শুভরাত্রি অপ্সরা”
ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজ টার দিকে তাকিয়ে রইলাম কতক্ষণ। ইমাদ এর সাথেও একটা সময় ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হতো আমার, একটা সময় ছিলো মানুষ টা আমার সব কথাকে কেমন মুল্য দিতে জানতো কিন্তু শেষে কিনা…..

ইমাদ এর কথা মনে হয়ে ফোন টা ছুরে মারলাম বিছানায়। কেনো জানি ওর কথা মনে হলে কোনো ভালো কিছুই আর ভালো লাগেনা।

(২৭ অক্টোবর)
তারপর একদিন আমাকে অসম্ভব ভালোবাসা সেই মানুষ টিও আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করলো;
তারপর একদিন আমাকে প্রচন্ড সম্মান করা সেই মানুষ টিও আমাকে অসম্মান করতে দুবার ভাবলোনা;
তারপর একদিন আমাকে অনন্য বলা সেই মানুষ টিও পাঁচ দশজন খারাপ মেয়েদের সাথে আমাকে তুলনা করতে ছাড়লোনা;

তারপর…

তারপর একদিন আমার জ্বলজ্বল করা উজ্জ্বল ভবিষ্যত বলে ভেবে রাখা সেই মানুষ টিও হয়ে গেলো আমার প্রাক্তন…

দেখ না ঝিলি…
ফুপু তো সবকিছু শেষ করেই দিয়েছিলো,সব সম্পর্ক চুকিয়ে না দিলে তো আর লোকটাকে ফুপু প্রাক্তন বলে সম্বন্ধন করতোনা বল?

হুম তা তো বুঝলাম কিন্তু ঘুরেফিরে সেই প্রাক্তন এর সাথেই কিভাবে বিয়ে টা হলো সেটা বুঝতে বোধহয় আমাদের আরও পড়তে হবে।

চলবে…♥️

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.