মায়াজালে এখনো আমি । আনান্নিয়া আন্নি

0

পর্বঃ ১৫

ইমাদ কে দেখে কুমু তাড়াতাড়ি করে ডায়েরি টা ব্যাগে রেখে ইমাদ এর সামনে এসে দাঁড়ালো। কুমু কে দেখে ইমাদ জিগ্যেস করলো;

তোমার বাবা মা কিংবা বাড়ির আর কেউ নেই?

না..মা আর বড় ফুপু তো একটু আগেই বাড়ি গিয়েছে, সন্ধেবেলা আবার আসবে, আর ছোট কাকা গিয়েছে চা খেতে।

ইমাদ আর কথা না বলেই সোজা গিয়ে অপ্সরা-র বিছানার পাশের টুলটিতে বসলো, তারপর বেশ অনেক্ক্ষণ অপ্সরা-র দিকে অপলক চেয়ে রইলো। কুমু আর ঝিলি ও কোনো কথা বলেনি ইমাদ এর সাথে।
ডায়েরি-তে পরা সেই ইমাদ চরিত্র যখন তাদের চোখের সামনে তখন তাকে আজ নতুন করে দেখবার ইচ্ছে আর একটা অজানা ঘৃণা যেনো মাথাচাড়া দিচ্ছে। তবে আজ এই মানুষ টার চোখেমুখে এক বিষন্নতার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই চেয়ে রইলো অপ্সরা-র দিকে,তারপর কি মনে করে যেনো অপ্সরা-র ডান হাতটি নিজের দু’হাতের মাঝে জাপটে ধরে আবারও অপলক চাহনি স্থির করে বসে রইলো।

কুমু আর ঝিলি পাশের সেই খালি বেড টিতে বসে ফিসফিস করে কথা বলে চলেছে, বোধহয় ইমাদ কে নিয়েই হবে। ইমাদ এর অবশ্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, কম কথা বলা এই মানুষ টা তার চাপ স্বভাবের গুমোর ভাঙতে রাজি নয়, সবসময় চুপচাপ আর সবার থেকে দুরে থাকতেই বেশি পছন্দ করে।
শুধু অপ্সরা-র থেকে সে দুরে থাকতে পারেনি বলে আজ অপ্সরা-র সবথেকে অপছন্দের মানুষ এর শীর্ষ তালিকায় রয়েছে সে।সত্যি তো কেউ না চাইলে তাকে ভালোবাসা দিতে চাওয়া টা যেমন অন্যায় তেমন অপরাধ আর সেই সাথে এটা কোনো মানুষের জঘন্যতম রুচির বহিঃপ্রকাশ, যার উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখতে পাই ইমাদ কে আর তার ফলস্বরূপ অপ্সরা-র বর্তমান অবস্থাকে।

বেশ খানিকক্ষণ বাদে ইমাদ উঠে দাঁড়ালো, বোধহয় চলে যাবে।
মাথা ঝুঁকিয়ে অপ্সরার কপালে একটা চুমু দিয়ে কি যেনো বিরবির করতে করতে কুমু-র কাছে গিয়ে বললো;
আজ তোমার ছোট ফুপু-র কাছে আমি থাকবো সারারাত, তোমাদের নিতে কি কারো আসার কথা?

কুমু আর ঝিলি-র উত্তর না শুনেই ইমাদ ফোন টা কানে ধরে বেড়িয়ে গেলো;
ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে ইমাদ এর কথাগুলো, বোধহয় কুমু-র মাকে ফোন করছে…

হ্যা বড় ভাবি…..ঘুমিয়েছিলেন?
বলছিলাম আজ আর আপনাদের হসপিটালে আসতে হবেনা, আপনারা সবাই বিশ্রাম করুন আজ রাতটা বরং আমি অপ্সরা-র কাছে থেকে যাবো।

ইমাদ এর কথামতো সেদিন আর বাড়ির লোকজন হসপিটাল যায়নি, অপ্সরা-র অবস্থার উন্নতি অবনতি সবই যেনো স্থিতিশীল রয়ে গিয়েছে। কুমু আর ঝিলি বাবার সাথে বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে, সবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে নিজের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছে।
বড় ফুপু, মা আর ছোট কাকি ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে,বাবা আর ছোট কাকা সোফায় বসে চা খাচ্ছে। মেজো কাকা আর মেজো কাকি নিজেদের ঘরে।

সবাই সবার মতো ব্যাস্ত রয়েছে, এই সুযোগে কুমু আর ঝিলি বসে পরেছে ডায়েরি-র পরের পাতা খুলে….

(২৫ নভেম্বর)
আজকে নীড় একটা ধুসর রঙের পাঞ্জাবি পরেছিলো,তাতে ছিলো নীল রঙের সুতো দিয়ে অপরাজিতা ফুল আকা। ওকে বড্ড বেশি মানিয়েছিল এই সাজে, তার চোখে চোখ রেখে তাকাতে বেশ জড়তা কাজ করে এখনও তারপর ও তাকে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা টুকু মনের তুষ্টতা আনতে পারেনি।
আমি একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরেছিলাম,লাল ব্লাউজ, খোঁপায় লাল গাজরা। বরাবরই ঠোঁটে যেমন হালকা করে লিপস্টিক দেই আজও তেমনটাই করেছি। আমাকে দেখে তার প্রথম কথা ছিলো;
ঠোঁটে বেশ গাড়ো করে লাল লিপস্টিক দিলে এই সুন্দর মুখখানা আরো বেশি মানিয়ে যেতো।

কি যে বলোনা তুমি? আমাকে লাল লিপস্টিকে একদম মানায়না তাই ওসব দেইনা।

কে বলেছে মানায়না? তুমি আমার চোখ দিয়ে দেখো পৃথিবীর সব সৌন্দর্য তুমি এখানেই দেখতে পাবে। চলো তোমায় একটা লাল লিপস্টিক কিনে দেই…

এই সেই মানুষ… যে কিনা আমার তুচ্ছ জিনিস গুলোও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, বাড়িয়ে দিয়েছে তার আনন্দ, আমার সবকিছুকে করে দিয়েছে অতি সাধারণ থেকে অসাধারণ…

ওহ.. এ কদিনে আমাদের সম্পর্ক টা যে আপনি থেকে তুমি তে গড়িয়েছে সেটা লিখতেই ভুলে গিয়েছিলাম..

আজ আমাদের দ্বিতীয় দিনের সাক্ষাত ছিলো; খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে মানুষ টার সাথে আমার যেনো এক আত্মিক সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছে যেখান থেকে আর বেড়িয়ে আসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আস্তে আস্তে আমরা হয়ে উঠেছি একে অপরের খুব ভালো বন্ধু, যার সাথে কারনে অকারনে কথা বলা যায়, যাকে বলা যায় মন খুলে সবটা, যাকে পাওয়ার ইচ্ছে অনেক কিন্তু হারানোর এক অজানা শঙ্কা বয়ে চলে অবিরাম, যে কিনা পরিনত হয়েছে এখন আমার থেকে আমার অস্তিত্বে…
পরেরদিনে আবার তার সাথে দেখা করার সুন্দর এক পরিকল্পনা করে বাড়ি ফিরেছি আজ। আর এখন সবটা ডায়েরি বন্দী করে চলেছি ঘুমের রাজ্যে এক নতুন সকালের আশায়….

চলবে

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.