চুম্বনের অমৃত কথা । স্বপন দত্ত

0

চুম্বনের অমৃত কথা
স্বপন দত্ত

কিস্ কিস্ শব্দে দৌড়ে গেলো বইয়ের স্তূপের সারির ফাঁক গলিয়ে, ঘরের চালের বাতা বেয়ে। নিজেকে লুকালো। লেজটা সামান্য বেরিয়ে ঝুলে আছে বাইরে।
বউ বললো,দেখ কাণ্ড ! লেজ ধরে টান দিলেই লঙ্কাকাণ্ড।পুড়বে রাবণের সংসার,হবে মেঘনাদ বধ কাব্যের পুন মঞ্চায়ন।
দেখলাম। দেখতে থাকলাম, প্রত্যেকটি দিনের মতো পুচকেগুলোর কায়-কারবার। কিন্তু ওই শব্দগুলো যেনো অন্যান্য দিনের মতো নয়। মনে হলো : না, এর অন্যকেনো অর্থ আছে।
অনেক বছরই হয়ে গেলো। একদা এক অসুস্থ খ্যাতিমান তরুণ কবিকে সুস্থতার নিমিত্তে জার্মানীতে পাঠানো হয়েছিলো। বিদেশে সেই অবস্থান, কবির কাছে বন্দীত্বের সমতুল্য মনে হয়। চিকিৎসায় বিরতি দিয়ে, অতএব ফিরে আসে দেশে। তারপর মৃত্যুকে ডাকে। আয় মরণ আয়।
অতি তরুণ হলেও কলমের শব্দ-মেখলা রচনায় অতিশয় জনপ্রিয় ছিলো সেই কবি।
মহাদেব বলেছিলো, ওর কবিতা একটা নিজস্ব ভাষার স্বরধ্বজা উড়িয়ে চলাচল করে।
নির্মলেন্দু বলতো, ও একদিন বাংলা কবিতার যুবরাজ হবে।
মানুষ মারা গেলে তার শবদেহটা কখনও লাশ, আবার কখনও বডি হয়ে যায়।
বাংলা কবিতায় নিজস্ব-ভাষার যুবরাজ মারা গেলে, তার লাশ বা বডি, অর্থাৎ প্রাণবিহীন শরীরটা নওশার সাজে পুষ্পশয্যায় শায়িত করে রাখা হয় প্রথামত।
শেষ দেখা দেখে, কবিকে সম্মান জানিয়ে শেষ বিদায় দেওয়ার জন্যে উন্মুক্ত জন-সমাবেশ স্থলে এনে রাখা হয়েছিলো মরদেহ।
ভক্তজনের অশ্রুতে স্নাত হতে হতে ক্রমশই গন্ধ পুষ্পের পাপড়ির নীচে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিলো কবির অবয়ব।
এ সময়ে এলেন সৌন্দর্যের শোকার্ত প্রতিমার বিভা ছড়িয়ে স্বনামধন্যা একজন কবি অধ্যাপিকা।
শুভ্রতার প্রতিমূর্তি। আভিজাত্যের সমীহ মোড়ানো শোক-শাড়িতে, একজন রজনীগন্ধার হাতে একগুচ্ছ কাব্যময় রজনীগন্ধা যেনো।
তিনি নমিত হলেন। শুভ্র পুষ্প-পালক, আদরে অতি সাবধানে রাখলেন কবির বুকের উপরে। ব্যথা যেনো না পায় চির-নিদ্রিত কবি। শান্তির শয়নে ঘুম যেনো না ভাঙে।
তারপর,
তারপর তিনি আরও নমিত হলেন। কবিতার মতো নিজের কাতর ওষ্ঠকোরক ধীরে নামিয়ে আনলেন বরফশীতল নিস্পন্দ মুদিতচক্ষু কবির ওষ্ঠদ্বয়ের উপর।
জগতের শ্রেষ্ঠতম উপহার পেলো, প্রিয়তমেষু কবি।
অতঃপর নিস্তব্ধ পৃথিবী। জগতের মানুষেরা বাক্যহারা। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো বহু বহুকাল আগেকার কোনো এক স্বর্গীয় দৃশ্যের নবতর সংস্করণের অবতারণা হতে দেখে।
এভাবেই বুঝি স্বর্গের নন্দনকাননে বিস্মৃতির কালগর্ভে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোতে দেবী ঈভ সন্ত এডামকে দীক্ষা দিয়েছিলো জ্ঞানের। মুখে তুলে দিয়েছিলো বোধিবৃক্ষের ফল।
গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের দল বিস্ময়ের ঘোর থেকে জেগে উঠে ভিজে যেতে থাকে অঝোর চুম্বনের মেঘ বর্ষণের জলধারায়।
কালে বষর্তুঃ পর্জ্জণ্যং পৃথিবী শস্যশালিনী।

★১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০২১★

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.