পাবনার তারাপাশা স্লুইস গেট থেকে মনোহরপুর বড়ব্রীজ পর্যন্ত খাল খননে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তারাপাশা স্লুইস গেট থেকে মনোহরপুর বড়ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি টাকার সাড়ে ১০ কিলোমিটার খাল খননে নানা অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে নয় ছয় করে খাল খনন কাজের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এসকল অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির সাথে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জড়িত বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে খাল খনন কাজ করছেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি (স্থগিতকৃত পদ) ও চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে সৌরভ কনস্ট্রাকশনের সত্তাধিকারী জাহিদুর রহমান মিঠু।

সম্প্রতি এই কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স।

খোজ নিয়ে জানা যায়, পাউবোর এই খাল খনন কাজে জেলার আটঘরিয়া উপজেলার তারাপাশা স্লুইস গেট থেকে পাবনা সদরের মনোহরপুর বড়ব্রীজ পর্যন্ত খাল খননকালে বিনা নোটিশে নদী পাড়ের মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে মূল্যবান ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। সাড়ে ১০ কিলোমিটার খাল খননের বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদার ইচ্ছেমতো মাটি খনন করেছেন। অধিকাংশ স্থানে দুপাড় নয়ছয় করে ড্রেসিং করা হয়েছে। সমতল করে পাড় করা হয়নি। মনোহরপুর বড়ব্রীজ সংলগ্ন সরকারি জমি দখল করে বাড়ি করে রয়েছেন পাবনা বিগ বাজারের স্বত্বাধিকারীরা আলহাজ তরিকুল ইসলাম। খাল খননের সময়ে ঠিকাদার কৌশলে টাকা নিয়ে অবৈধ দখলদারের বাড়ি রক্ষাসহ খালের মাটি দিয়ে তার বাড়ির পাশে পুকুর ভরাট করে দিয়েছেন। এছাড়াও প্রভাবশালী এক আওয়ামীলীগ নেতার জন্য ট্রলি ভর্তি করে মাটি পাঠানো হয়েছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।

অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের দাবী জানিয়ে খাল পাড়ের অনেক নারী পুরুষ খালের উপর মানববন্ধন করেন।

খাল খননকালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ সহকারী কমিশনার ভুমি রোকছানা মিতা সরেজমিনে পরিদর্শন করে অবৈধ দখলদারের কাছ থেকে সরকারি জায়গার সীমানা নির্ধারণ করে ঠিকাদারকে সরকারি জায়গা ধরে কাজ করার নির্দেশ দিলেও অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদার সেই নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে অবৈধ দখলদারকে রক্ষার জন্য প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও অবৈধ দখলদার প্রভাবশালী হওয়ার কারনে হয়তো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অসহায় বা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা বলেন, বয়রা কাশিনাথপুর এলাকা থেকে মনোহরপুর বড়ব্রীজ পর্যন্ত দুপাড়ের ড্রেসিং বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার। তারা বলেন, ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম মিঠু ও তার বাবা চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টারের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলামের। খাল খনন চলাকালে একাধিকবার তরিকুল ইসলামের বাড়িতে বাপবেটার গোপন বৈঠক হয়েছে।

অনিয়ম, দূর্নীতি ও অনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে ঠিকাদার জাহিদুর রহমান মিঠু বলেন, পাউবোর সিডিউল মোতাবেক খাল খনন করা হয়েছে। কোন অনিয়ম বা দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়নি। তবে খাল খননের মাটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি ও প্রভাবশালীর পুকুর ভরে দেয়া এবং সরকারী জায়গা অবৈধভাবে দখলকারীকে সুকৌশলে স্থাপনা রক্ষা করে কাজ করার বিষয়ে তিনি সুস্পষ্ট কথা বলেননি। আর বিনানোটিশে উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমার কাজ না। এটা দেখবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবনাস্থ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, তদন্ত করে অভিযোগ প্রমানিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.