জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি পেল ভাসানচর
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বিকল্প অস্থায়ী আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাসানচরকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। শরণার্থীদের সুরক্ষা এবং দ্বীপটিতে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের সাথে আরো আলোচনা করবে সংস্থাটি। তবে ভাসানচর ত্যাগ করতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের আটক করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির মতে, ভাসানচরে স্থানান্তর শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অংশ হতে পারে না।
ইউএনএইচসিআরের দু’জন সহকারী হাইকমিশনারের চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল দেয়া বিবৃতিতে এ সব কথা জানানো হয়েছে। গত ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত সহকারী হাইকমিশনার (প্রটেকশন) গিলিয়েন টিগ্রিস ও সহকারী হাইকমিশনার (অপারেশনস) রাউফ মাজু বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে তারা ভাসানচর ও কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর মানবিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হন। ঢাকায় দুই সহকারী হাইকমিশনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক করেন। গত সোমবার ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিদলটি ভাসানচর পৌঁছালে রোহিঙ্গারা প্রতি মাসে নগদ পাঁচ হাজার টাকা, মানসম্পন্ন রেশন, কর্মসংস্থান এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
ভাসানচরকে সম্ভাবনাময় দ্বীপ হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বীপে বসবাসরত উদ্বাস্তুদের মানবিক ও সুরক্ষার উপাদানগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। উদ্বাস্তুদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হতে হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। দ্বীপটিতে তাদের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা থাকতে হবে। কোনো রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতে চাইলে তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে।
ভাসানচর সফরকালে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা একটি বড় সংখ্যক উদ্বাস্তুদের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, যাদের অধিকাংশই যুবক। এসব রোহিঙ্গা জীবিকা, আত্মনির্ভরশীলতা, দক্ষতা উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগের অপ্রতুলতায় হতাশা প্রকাশ করেন। প্রতিনিধিদলের সফরকালে বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় কয়েকজন রোহিঙ্গার আহত হওয়ার ঘটনায় ইউএনএইচসিআর গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের পরিস্থিতি অনুমোদন করলে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনই উদ্বাস্তু সঙ্কটের কাক্সিক্ষত সমাধান। চার বছর ধরে এই সঙ্কট চলছে। উদ্বাস্তুরা পুরোপুরি সাহায্যনির্ভর হয়ে থাকতে পারে না। জীবিকা ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো ও ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বাদ দেবে। মিয়ানমার ফিরে গেলে রাখাইন সমাজের সাথে একীভূত হতে এটি তাদের সহায়তা করবে।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করে যাবে। ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে সহকারী হাইকমিশনাররা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন এবং বিদেশে চাকরি ও শিক্ষার সুযোগ সংক্রান্ত বিকল্প সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বিবৃতিতে হাইকমিশনাররা জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের চলমান রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু পরিস্থিতির জন্য মিয়ানমার দায়ী। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান মিয়ানমারেই নিহিত। তবে মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতি স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। তারা বলেন, শরণার্থীবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিকতা ও সংহতি প্রকাশ করেছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার বাধ্যবাধকতা পূরণ, উদ্বাস্তুদের সুরক্ষা দেয়া এবং বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দেয়ার বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।