হাসপাতালের বিছানায় ছটফটে কাতরানো অসুস্থ মানুষের পাশে পাবনার তিন রক্তদাতা

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ

0

বিশেষ প্রতিবেদক : বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ ১৪ জুন। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন তাদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে ‘নিরাপদ রক্ত’-এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস। ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ দিবস পালনের জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে। এবার আঠারোতম বারের মতো পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।

অসহায় মুমুর্ষ রুগীদেরকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের কাজটির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে সন্ধানী ডোনার ক্লাব পাবনার নাম। মৃত্যুর বিরুদ্ধতা নয়, অবাঞ্চিত মৃত্যুরোধে আমাদের এই মৃত্যুবৈরী ঐদ্ধত্য এমন এক শ্লোগান ধারন করে মানব সেবার ব্রত নিয়ে ১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরু করে সন্ধানী ডোনার ক্লাব পাবনা। মানবসেবায় হাসপাতালে যাতায়াত ও রুগীদের সাথে সম্পর্কের সূত্র ধরে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন সন্ধানীর প্রাণবন্ত কর্মীরা। মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও অসহায় হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটফটে কাতরানো অসুস্থ মানুষের রক্তের দরকার হলেই খুঁজে বের করেন সন্ধানীর কর্মীদেরকে।

এ ক্লাব প্রতিষ্ঠা থেকে আজ ৩৩ বছরে প্রতি বছরে দুই থেকে সোয়া দুই হাজার হিসেবে এখন অবধি প্রায় ৭০ হাজার অসহায় অসুস্থ রুগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছে এখানকার কর্মীরা বলে জানালেন ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক আলহাজ্ব ইফতেখার মাহমুদ। এখন অবধি ৬৮ জনকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন ক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান খোকন। তিনি জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের আব্দুন সামাদের ছেলে। খোকন টেবুনিয়ার শামসুল হুদা ডিগ্রী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। খোকনের রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ।

এদিকে ৬১ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন সাংবাদিক ছিফাত রহমান সনম। সন্ধানীর একজন প্রাণবন্ত কর্মী হিসেবে শহরজুড়ে পরিচিত ছিলো তার। পরবর্তিতে সন্ধানী ডোনার ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সন্ধানী ডোনার ক্লাব পাবনার উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। রক্ত দিতে কখনো কাপর্ন্য করেননি। কখনো কখনো ক্লাব খোলা না থাকলেও অথবা ফরম পুরণ না করেই এসে রক্ত দিয়ে চলে গেছেন নিজের মতো করে। যেনো আগে তাকে এই দায়িত্বটুকুই পালন করতে হবে। শহরের টাউন হল পাড়ার বাসিন্দা মরহুম আজিজুর রহমানের ছেলে সনম যমুনা টেলিভিশনের পাবনা জেলা প্রতিনিধি ও বৃহত্তর পাবনা থেকে প্রথম প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা দৈনিক ইছামতির প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন।

সনমের রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ। ৫০ বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন সন্ধানী ডোনার ক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক খায়রুজ্জামান আহমেদ অরুন। সে শালগাড়িয়া মহল্লার টিপি রোডের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান আহমেদের ছেলে। অরুনের রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। খায়রুজ্জামান আহমেদ অরুন বাংলাদেশ রোটারী ইন্টারন্যাশনাল জেলা-৩২৮১ এর ডেপুটি গভর্ণন ও একজন ব্যবসায়ী। এসব মহৎপ্রাণ কর্মীদের কারনে আজ অবধি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে রক্তের অভাবে কোনো মানুষ মৃত্যু বরন করেননি। তারা বলেন, আমাদের তো কোনো ক্ষতি হলো না অথচ আরেকজনের জীবনটা বাঁচলো। রক্তদান করলে শরীরে নতুন নতুন রক্তকোষ তৈরি হয়। শরীর অনেক হালকা লাগে। নিজের শরীরকেও ভালো রাখার জন্যও রক্ত দেওয়া দরকার। এখন এটা ভাবতেই ভালো লাগে যে আমার শরীরের রক্ত নিয়ে বেঁচে আছে আরেকজন মানুষ , এটার যে আত্মিক প্রশান্তি বা তৃপ্ততা তা অন্য কোনো কিছুতে নেই।

সকলেরই স্বেচ্ছায় রক্তদান করা উচিত ও নিজের রক্তের গ্রুপটা জানা থাকা সকলের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তারা। শুধু তাই নয়, সন্ধানীর কর্মীরা নিজেরা রক্ত দিয়েছে যেমন, ঠিক তেমনি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, নিজেদের পরিবারের মানুষদেরকে, নিজেদের স্বজনদেরকে নিজেদেরই রক্ত দিতে হবে। এটা সাধারন মানুষের মাঝে এই বোধ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তারা এও বলেন, প্রতিটি মানুষের তার নিজের রক্তের গ্রুপটা জানা থাকটা খুবই জরুরী । এ বিষয়ে সন্ধানী ডোনার ক্লাব পাবনার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানবপ্রেমী ব্যাক্তিত্ব প্রফেসর ডা. ইফতেখার মাহমুদ বলেন, এদের মতো কর্মীরা একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রাণশক্তি। এরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করে মানব প্রেমের যে নিদর্শন রেখেছে এতে আমরা গর্বিত।

এর মাধ্যমে তারা যেমন নিজেদেরকে মহান করে তুলে ধরেছে, জীবন বাঁচিয়েছে অসহায় মুমুর্ষ মানুষদের, ঠিক পাশাপাশি পাবনার সন্ধানীকে করেছে গৌরান্বিত। এধরনের মানবপ্রেম বোধ যদি সকলের মাঝে জাগ্রত হয় তবে সাধারন মানুষ উপকৃত হবে। সন্ধানী ডোনার ক্লাব পাবনাতে এমন ধরনের কর্মীরা ছিলো ও আছে বলেই আজ অবধি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে রক্তের অভাবে কোনো মানুষ মারা যাবার ঘটনা ঘটেনি। পাবনার সন্ধানীর সকল কর্মকর্তা ও কর্মী যে ভূমিকা রেখেছে ও রেখে যাচ্ছে তা সুন্দর অনুভব ও শ্রদ্ধা দিয়ে স্মরণ করে পাবনার মানুষ। তিনি সন্ধানী ডোনার ক্লাবের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিগতদিনের মতোই সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যশা করেন। বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে সন্ধানী ডোনার ক্লাবের পক্ষ থেকে সকল স্বেচ্ছায় রক্তদাতাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.