সাড়ে তিন লাখ প্রবাসীর তালিকা সুরক্ষা অ্যাপে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনা মহামারি সংক্রমণ থেকে রক্ষায় টিকা গ্রহণে বিদেশগামী কর্মীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গত ১১ জুলাই সারাদেশে ৫৩টি কেন্দ্রে টিকা দেয়ার জন্য ১৩ হাজার ৯শ’ ৩৫ জন বিদেশগামী কর্মী নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ১২ জুলাই সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধনকৃত সাড়ে তিন লাখ বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর নামের তালিকা সুরক্ষা অ্যাপে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

রাজকীয় সউদী সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত মার্চ মাস থেকে এ যাবত বিনা মূল্যে ২ কোটি মানুষকে করোনা টিকা দিয়েছে। সউদী নাগরিকসহ দেশটিতে বসবাসকারী অভিবাসী কর্র্মীরাও উল্লেখিত টিকা গ্রহণ করেছে। দেশটিতে বর্তমানে বিশ লক্ষাধিক বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মী ও পুরুষ কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও করোনা টিকা পাচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার সউদীর জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের শ্রম সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ যাবত দেশটির জ্দ্দো অঞ্চলে ৫৬২ জন বাংলাদেশি কর্মী করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শ্রম সচিব বলেন, করোনা টিকা না দিয়ে সউদীতে এলে কর্মীদের সাত দিনের হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সউদীগামী কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে টিকা দিয়ে এলে তাদের হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না। তিনি বলেন, হোটেল কোয়ারেন্টিনের উচ্চ ব্যয় বাঁচাতে সউদীগামী কর্মীরা দেশ থেকে টিকা দিয়ে আসতে ব্যাপকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

রাজধানীর সাতটি কেন্দ্রে কুয়েত ও সউদী প্রবাসীদের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশে গমনেচ্ছু কর্মীদের টিকা দেয়া হবে। যেসব হাসপাতালে বিদেশগামীদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে তা’ হচ্ছে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কেন্দ্রে।

এদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিদেশগামী কর্মীদের টিকা দিতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিদেশগামী কর্মী বলেন, তিন ঘণ্টা যাবত দাঁড়িয়ে থেকে টিকা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। মেডিক্যালের কর্তৃপক্ষ টিকা দেয়ার বুথ বাড়ালে বিদেশগামী কর্মীরা অনেকটা ভোগান্তি ছাড়াই টিকা দেয়ার সুবিধা পেত। তিনি অবিলম্বে বিদেশগামী কর্মীদের টিকা দেয়ার ভোগান্তি নিরসনে হাসপাতালগুলোতে একাধিক বুথ বাড়ানোর জোর দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রাপ্তির তালিকায় বিদেশগামীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চীনের উপহার দেয়া সিনোফার্মের টিকা তাদের দেয়ার কথা। দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দেয়া হবে এই টিকা।
সম্প্রতি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রবাসী কর্মীদের করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনের দিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আসা প্রবাসীরা ভ্যাকসিন না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিক্ষুব্ধ এসব প্রবাসী শ্রমিকদের শান্ত করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। এসময়ে বিএমইটির মহাপরিচালক শহিদুল আলম ও কুর্মিটোলা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক করোনা টিকা নিয়ে বিক্ষুব্ধ প্রবাসীদের ব্রিফিং করেন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ফাইজার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর দিনে এই দৃশ্য দেখা যায়। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রবাসী মন্ত্রীর কমিটমেন্ট অনুযায়ী প্রবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার যে ব্যবস্থা নিয়েছি, আজকে তার ছোট্ট একটা প্রতীকি উদ্বোধন হলো। সচিব বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এই মন্ত্রণালয় আপনাদের জন্য কাজ করছে। ভ্যাকসিনের সঙ্কটের মধ্যেও আপনাদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ এ সময় প্রবাসীরা হট্টগোল শুরু করলে সচিব সবাইকে থামার অনুরোধ জানান। এই কর্মসূচির আওতায় শুধুমাত্র কুয়েত ও সউদী প্রবাসী কর্মীদের ভ্যাকসিন দেয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত হয়েছিলেন ইতালিসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, অধর্য্য হলে কোনো সমাধান আসবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাতটা হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা। ব্যবস্থাপনা করতে কিছুটা সময় দরকার। সুরক্ষা অ্যাপে এ যাবত কত বিদেশগামী কর্মী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাপে দায়িত্বরত ডা. আশরাফি ইনকিলাবকে বলেন, কত জন প্রবাসী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে তার সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল।

রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, যাদের পাসপোর্ট, ভিসা, ইকামা রয়েছে তাদেরকে অনস্পর্ট রেজিস্ট্রেশন করে অতি দ্রুত টিকা প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সউদী ও কুয়েতগামী প্রবাসী কর্মীদের ফাইজারের দুই ডোস টিকা নিতে হয়। প্রবাসীদের প্রথমে বিএমইটিতে রেজিস্ট্রেশন এর পরে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন, ২৮ দিন পরে ২য় ডোস দেয়ার পর ১৪ দিন পরে ফ্লাইটের জন্য কর্মীদের অপেক্ষার কারণে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

ফলে প্রথম ডোস টিকা নেয়ার পরেও ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে হোটেল কোয়ারেন্টিন এর মাধ্যমে তাদেরকে সউদী যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ সত্ত্বেও দ্বীর্ঘ সময়ের কারণে প্রবাসগামীরা বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে পারছে না। সরকারকেও ২৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে টিপু সুলতান বলেন, সউদী সরকারের সার্কুলার অনুযায়ী জনসন এন্ড জনসন এক ডোস টিকা দিলেই, হোটেল কোয়ারেন্টিন খরচ ছাড়াই কর্মীরা সউদী গমন করতে পারবে। তিনি বিদেশগামী কর্মী ও জাতীয় স্বার্থে জনসন এন্ড জনসন এর টিকা ক্রয় করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বিদেশগামী কর্মী ও সরকার উভয়েই আর্থিক ক্ষতি এড়াতে সক্ষম হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.