মাতারবাড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : একনেকে হাওড় উন্নয়নে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনসহ ২৯ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মাতারবাড়ি ও মহেশখালী এলাকায় অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। এ সব কাজ বিচ্ছিন্নভাবে না করে একটি কর্তৃপক্ষের আওতায় করতে হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘হাওড় এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনসহ ২৯ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেক সভায়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী প্রমুখ। একনেকে উপস্থিত একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় এখন ৩৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। মাতারবাড়িতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের দায়িত্বে বিদ্যুত মন্ত্রণালয়। সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। সেটির দায়িত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। গ্যাসলাইন, এলএনজি, রাস্তাঘাট হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন দফতর আলাদা আলাদা করে এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার ফলে কাজের সমন্বয় হচ্ছে না। কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এমন বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করার নির্দেশ দেন। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যেভাবে কাজ করছে, নতুন কর্তৃপক্ষ সেভাবে কাজ করবে।

একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আলাদাভাবে কাজ করার সুযোগ নেই। একনেক সভায় ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে জাপান সরকার ঋণ দিচ্ছে। এ প্রকল্প অনুমোদনের সময় আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খান বলেন, মাতারবাড়িতে এখন গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। আগেই সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনা ছিল।

এদিকে একনেক সভায় হাওড় এলাকায় উড়ালসড়ক নামের আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। এ প্রকল্পের আওতায় ১১ কিলোমিটার উড়ালসড়ক করার মতো সক্ষমতা এলজিইডির আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, উড়ালসড়ক করতে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সেতু বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতে এলজিইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনসহ ২৯ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন ॥ সরকারের সেবাসমূহকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া এবং সব ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। এ জন্য ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্ল্যাটফর্ম এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে আইটি অবকাঠামোসহ মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসটেন্স লার্নিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধা সম্বলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন করা হবে। মাঠ পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন এবং ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভারি ডিভাইস বিতরণ, ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন, ৪৯২টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। একনেক সভায় ১১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অবকাঠামোগত পুনর্গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

এছাড়া আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৫০৬) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানিকগঞ্জ জেলা থেকে টাঙ্গাইল জেলা পর্যন্ত ৫৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন, যানজটমুক্ত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং প্রকল্প এলাকার পশ্চাৎপদ জনগণের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।

১৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘নড়াইল শহরাংশের জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর জাতীয় মহাসড়কের নড়াইল শহরাংশের সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নীতকরণের মাধ্যমে যানজট নিরসন এবং নড়াইল শহরের মধ্য দিয়ে যানজটমুক্ত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প’ সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় টেকসই গ্রামীণ পরিবহন ও বাজারসেবা প্রবর্তনের লক্ষ্যে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়ন এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকর বিনিয়োগ ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ দক্ষ অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

১ হাজার ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প’ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পাকাকরণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। গ্রামীণ বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে জনগণের যাতায়াত সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং প্রকল্প এলাকায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার অন্তর্গত পোল্ডার নং ১৪/১ এর বাঁধ ও অন্যান্য অবকাঠামোসমূহ পুনরুজ্জীবিত করে পোল্ডারটির কার্যকারিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ সুবিধা প্রদান ও লবণাক্ততা দূর করা, কৃষি/মৎস্য উৎপাদন নির্বিঘœ করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নদীভাঙন ও বন্যার কবল থেকে এলাকার অবকাঠামো রক্ষা করা হবে। ৭৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন অবকাঠামোসমূহের পুনর্নির্মাণ ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণ করা হবে। সংশোধিত আকারে মাতারবাড়ি ২৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.