একত্রিশ বছর পর আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশের জাহাজ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : একত্রিশ বছর পর বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙর করেছে আমেরিকার বন্দরে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে মানসম্পন্ন জাহাজ না থাকায় দীর্ঘ এই সময়ে কোনো জাহাজের আমেরিকা প্রবেশের অনুমোদন মিলেনি। অপরদিকে জাহাজ থেকে নাবিকদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ প্রবেশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে তা ঘুচল। সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শিপিং বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব তৈরি হতে যাচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) বহরে থাকা জাহাজগুলোর একসময় পৃথিবীজুড়ে সুনাম ছিল। কিন্তু কালক্রমে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। বিশেষ করে শত শত নাবিকের জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ইমেজ সংকটে পড়ে বিএসসি।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো জাহাজ গেলে ওই জাহাজের দুই-চারজন নাবিক গা ঢাকা দিতেন। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এমভি বাংলার মমতা আমেরিকার বন্দরে গেলে একসাথে ১৪ নাবিক গা ঢাকা দেন। পরে ওই জাহাজকে আনার জন্য দেশ থেকে অভিজ্ঞ একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি আমেরিকার বিমানবন্দরে নেমে গা ঢাকা দেন। পরবর্তীতে অনেক কষ্টে এমভি বাংলার মমতাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। ওই ঘটনায় বাংলাদেশ ও বিএসসি ইমেজ ক্রাইসিসে পড়ে। এরপর আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশি পতাকাবাহী আর কোনো জাহাজ প্রবেশের অনুমোদন পায়নি।

অপরদিকে বিএসসির বহর ক্রমান্বয়ে ছোট হতে শুরু করে। এক বছরে দশটি জাহাজ স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করার মতো ঘটনাও বিএসসিতে ঘটে। দীর্ঘদিনের পুরানো জাহাজগুলোও আমেরিকার বন্দরে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল না। উল্লেখ্য, আমেরিকার বন্দরে প্রবেশের আগে একটি জাহাজের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এবং নিরাপত্তার বিভিন্ন সূচকে উত্তীর্ণ না হলে কোনো জাহাজকে আমেরিকার বন্দরে নোঙর করতে দেয়া হয় না। এই অবস্থায় ৩১ বছর বিএসসির কিংবা এদেশের পতাকাবাহী কোনো জাহাজ আমেরিকার কোনো বন্দরে প্রবেশের সুযোগ পায়নি। এতদূর পাড়ি দেয়ার মতো কোনো জাহাজও বিএসসির ছিল না।

২০১৮ সালে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসসি ছয়টি জাহাজ কিনে। চীনের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিএমসি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার ও তিনটি অয়েল ট্যাংকার প্রস্তুত করে। ওই জাহাজগুলো ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময়ে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়। এর মধ্যে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনে রকেট হামলায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ওই জাহাজটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ভাসছে ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে।

বিএসসির একটি জাহাজ নিয়ে যখন হতাশার খবর, তখন আরেকটি জাহাজ ৩১ বছর পর আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছে। এমভি বাংলার অগ্রগতি নামের জাহাজটি ৩২ হাজার টন কেইন মোলাসেস (আখের রসের বিশেষ লিকুইড বা চিটাগুড় জাতীয়) নিয়ে উত্তর আমেরিকার দেশ এল সালভাদর থেকে আমেরিকার হিউস্টন বন্দরে যাত্রা করে। ২০ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাহাজটি ৭ মার্চ হিউস্টন বন্দরে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে নোঙর করে। জাহাজটিতে নারীসহ ২৭ জন নাবিক রয়েছেন। এদের সবাই বাংলাদেশি।

জাহাজটি চীন থেকে মিডলইস্ট ও ভূমধ্যসাগর হয়ে সাউথ আমেরিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে। আমেরিকার ক্লার্কসন নামের একটি শিপিং কোম্পানি ভাড়া নিয়ে জাহাজটি পরিচালনা করছে বলে বিএসসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ৩১ বছর পর বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ নোঙর করেছে আমেরিকায়। এটি আনন্দের ব্যাপার। অঘোষিতভাবে ৩১ বছর ধরে বন্ধ থাকা আমেরিকার শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা আবারো উড়বে-এটি অনেক বড় ব্যাপার। ইতোমধ্যে বিএসসির একটি জাহাজ অস্ট্রেলিয়ার বন্দরে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.