নাটোরের বড়াইগ্রামে সমিতির সুদের ছোবলে সর্বশান্ত এক পরিবার

0

রিয়াজ হোসেন লিটু, নাটোর : নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন এর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাত্র ১৪ বছরেই সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে এক পরিবার। একপর্যায়ে সুকৌশলে ওই সমিতি ওই পরিবারের বসতবাড়ি সহ জমি লিখে নেয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সমিতির কর্মকর্তারা উপজেলার বনপাড়া পৌর শহরের মিশন সড়কের নিজ বসত বাড়ি থেকে প্যারালাইজে শয্যাশায়ী ওই পরিবারের কর্তা প্রদীপ এলিয়াস গমেজ, তার স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তানকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে বাড়িতে তালা মারার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের গগনবিদারী আর্তনাদে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে ওই কর্মকর্তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এর আগে ৩০ মার্চ প্রতিবন্ধী ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনস্থল মুূদী দোকানে আকস্মিক তালা লাগিয়ে দেয় সমিতির লোকজন। দোকান বন্ধ থাকায় বর্তমানে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে ওই পরিবারের।

জানা যায়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বনপাড়া খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নেয় প্রদীপ এলিয়াস গমেজ। সুদ সহ ওই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সমিতির পরামর্শে তার স্ত্রী ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্বামীর ঋণ শোধ করে। পরে তার স্ত্রীও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুদ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে একই ধারায় সমিতির সুকৌশল ফাঁদে পড়ে ২০১৭ সালে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ওই ঋণ সুদসহ আবারও শোধ করতে ২০১৮ সালে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করে তারা। আর এভাবে ঋণ ও সুদের পাল্লা ২২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পৌঁছালে সমিতির তৎকালীন চেয়ারম্যান বাবলু রেনেতোস কোড়াইয়া আইন, মামলা ও জেলের ভয় দেখিয়ে ওই পরিবারের বসতবাড়ি সমিতির নামে লিখে নেয়।

পরবর্তীতে বসতবাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিতে থাকে সমিতির লোকজন। অগ্যতা বাধ্য হয়ে দুই নাবালক সন্তানদের রেখে প্রদীপ এলিয়াস গমেজের স্ত্রী মিতালী রোজারিও সৌদি আরবে যায় স্বামীর ভিটে রক্ষার জন্য। তারপরেও সমিতির লোকজন বাড়ি ছাড়তে চাপ দিতে থাকলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে প্রদীপ এলিয়াস গমেজ এবং একপর্যায়ে স্ট্রোক করে শরীরের একাংশ প্যারালাইজ হয়ে যায়। স্বামীর এ অবস্থায় সৌদি থেকে ফিরে আসেন তার স্ত্রী। পরে বাড়ির সামনের কক্ষে মুদী দোকান দিয়ে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা ও দুই ছেলে মেয়ের লেখাপড়া কোন মতে চালিয়ে যাচ্ছিলো প্রদীপের স্ত্রী। কিন্তু সমিতির লোকজন দোকানে তালা মেরে দেওয়ায় স্বামীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ঘরে খাবার যোগাড় করতে আত্মীয় স্বজনদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। এমতাবস্থায় দুর্বিষহ জীবন কাটছে পরিবারটির।

 

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.