ঈশ্বরদীতে হাট ইজারা নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব: নিরাপত্তার শঙ্কায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

0

রিমন হোসেন ,স্টাফ রিপোর্টার: ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি গ্রামে প্রায় দেড় যুগ আগে প্রতিষ্ঠিত হয় আলহাজ্ব মোড় হাটবাজার। প্রতিদিনের এই সবজি বাজারে ঐ এলাকার শতশত কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সবজি রপ্তানিতে এই এলাকার বেশ সুনাম রয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে সরকারী নীতিমালা অনুসারে (৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় + ভ্যাট) আলহাজ্ব মোড় বাজারের ইজারা পান আব্দুল্লাহ আল কাফী এবং চরগড়গড়ি মাদ্রাসা মোড় (সাপ্তাহিক) হাটের ইজারা পান গোলাম সরোয়ার।

গত দুই মাস হাট ইজারা নিয়ে ছিলো না কোনো দ্বন্দ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আলহাজ্ব মোড় হাট ও আলহাজ্ব মোড় বাজারের ইজারা আদায় কে কেন্দ্র করে দুপক্ষের দ্বন্দ পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। এতে যেমন ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা কার্যক্রম, একই সাথে নষ্ট হচ্ছে ঐ এলাকার সুনাম। দুপক্ষের এমন দ্বন্দ্বে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ শঙ্কিত রয়েছেন স্থানীয় আড়ৎদার, কৃষক এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ব্যবসায়ীরা।

আলহাজ্ব মোড় বাজারের ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল কাফী জানান, দেড় যুগ আলহাজ্ব মোড় বাজারের পথচলা শুরু হয়। সেসময় বাজার বসতো আলহাজ্ব মোড়ের পাশে রাস্তার ওপর। বাজারের ক্রেতা বিক্রেতা বেশি হওয়ায় রাস্তার ওপর ভিড় হতো। ২০১৭ সালের দিকে সেখানে একটি সড়ক দূর্ঘটনা হয় তারপর থেকে তৎকালিন ইজারাদাররা বাজারকে স্থান্তরিত করার চিন্তা করে। ২০১৮ সালে সকলের পরামর্শ অনুসারে আলহাজ্ব মোড় বাজারকে মাদ্রাসার পূর্ব পাশে সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে সেখানকার জমির মালিকদের প্রতিবছর লিজ হিসেবে ন্যায্য পাওয়া পরিশোধ করা হয়ে থাকে। গত ৬ বছরে এ বিষয় নিয়ে কারো কোনো আপত্তি ছিলো না এখন সরকারী নীতি অনুসারে প্রতিপক্ষরা বাজার ইজারা না পাওয়ায় জোরপূর্বক তা দখলের চেষ্টা করছেন। আমরা সরকারী সকল নিয়ম মেনেই এ বাজার কিনেছি এবং আমাদের কাছে সকল কাগজপত্রও রয়েছে। আমরা চায়, কাগজপত্র অনুসারে যে যে হাট বা বাজার পেয়েছেন সে সেখান থেকেই ইজারা আদায় করবেন। তাহলেই সব সমস্যা সমাধান হবে। তিনি বলপন, গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে হাট বাজারের জায়গা আবারো দুপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন এজন্য এলাকাবাসী তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

এদিকে আলহাজ্ব মোড় হাট ইজারাদার গোলাম সরোয়ারের সাথে যোগাযোগের জন্য তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে আলহাজ্ব মোড় হাট ইজারাদারের আরেক অংশীদার হাকিম জানান, আমরা হাট দখল করতে যায় নি, পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসার পর দুপক্ষকে ডেকেছিল। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়েছে এছাড়া কিছু না।

জানা গেছে, হাটবাজারের জায়গা নিয়ে দুপক্ষের এমন দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য গত শুক্রবার ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস ঘটনাস্থলে যান। পরে দুপক্ষের হাট বাজারের জায়গা বুঝিয়ে দেন তাদের। তবে নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সাথে সাথে আবারো বিবাদে জাড়ায় সরোয়ার হোসেনের লোকজন। শনিবার সকালে তারা আবারো আলহাজ্ব মোড় সবজি বাজারে জোরপূর্বক ইজারা আদায়ের চেষ্টা করেন। এতে দুপক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিএম ইমরুল কায়েস জানান, গতকাল শুক্রবার মাদ্রাসা বাজারের সীমানা চিহ্নিত করে পূনরায় বুঝে দেওয়া হয়েছে। আজ সকালে ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঈশ্বরদী থানা পুলিশ কে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক শরিফুল ও মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য আলহাজ্ব মোড় বাজারের নিতে দিচ্ছেন না সরোয়ার হোসেনের লোকজন। এ বাজারে সবজি বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে অন্য বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে সবজি নষ্ট হচ্ছে, দামও কম পাচ্ছি।

ব্যবসায়ী মিলন মৃধা বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আছি, এমন পরিবেশে ব্যবসা করা সম্ভব হচ্ছে না। বাজারের আড়ৎদার মজিবর হোসেন বলেন, এমন দ্বন্দ্বে ব্যাবসার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, আমদানি কম হওয়ায় বেশি দামে মাল কিনতে হচ্ছে। এতে করে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। তবে দুই ইজারাদারদের চলমান এ বিবাদ নিরসন করে আগের মত বাজারের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.