বঙ্গবন্ধু লাইফ ম্যাংগো মিউজিয়াম

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ১৯৪০ সালের আগ পর্যন্ত বিশাল আমবাগানটির মালিকানা ছিল ইংরেজদের। দেশভাগের পর ব্রিটিশরা বাগানটি তৎকালীন কানসাট এলাকার জমিদার কুজা রাজার কাছে বিক্রি করে দেয়। কিছু দিন ভোগের পর কুজা রাজা সব সম্পদ রেখে ভারতে চলে গেলে আমবাগানসহ সব সম্পত্তি যায় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তখন থেকেই সরকার-নিয়ন্ত্রিত কুজা রাজার আমবাগানটি।

১৯৬৬ সালের দিকে বাগানটি পরিচর্যা ও দেখাশোনার দায়িত্ব পায় ঢাকার হর্টিকালচার। সে সময় বাগানে ছোট ছোট আমগাছ লাগানো হয়। প্রায় ৫ থেকে ৬ বছর থাকার পর বাগান ছেড়ে চলে যায় তারা। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বাগানটি দেখাশোনা করে।
কিন্তু জেলা প্রশাসনের সঠিক তদারকি না থাকায় ধ্বংস হতে থাকে বাগানটি। একের পর এক গাছ মারা যেতে থাকে। পরিত্যক্ত বাগানটি পরিণত হয় মাদকসেবীদের আস্তানায়।

এবার ঐতিহ্যবাহী বাগানটি রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের এই বাগানকে ঘিরে নেয়া হয় নানা পরিকল্পনা। দেশে প্রথমবারের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে আমের জন্য মিউজিয়াম, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম’।

বর্তমানে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি বাগানটির গাছগুলো রক্ষায় পরিচর্যার কাজ চলছে। মাদকের আস্তানা ও অবৈধ বস্তি তুলে দিয়ে পুরো বাগানটি পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। জেলার ৩০০ জাতের আমগাছ এ বাগানে ২০টি জোনে ভাগ করে সংরক্ষণ করা হবে। আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সব আমের জাত রক্ষায় জার্মপ্লাজম সেন্টার তৈরিসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে দেয়া হয়েছে সীমানাপ্রাচীর। জেলা প্রশাসন সম্প্রতি বেনামে থাকা জাতগুলোর ১০০ জাতের আমের নাম দিয়েছে। এ সব জাত সংরক্ষণে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরই শেষ হবে লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের নির্মাণকাজ। ফলে এ সব জাতের আমের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাবে। ম্যাংগো ট্যুরিজম হিসেবে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে এই মিউজিয়ামের নাম। সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট মৌজার পার-কানসাট ও মোবারকপুর ইউনিয়নের শিকারপুর মৌজা মিলিয়ে প্রায় ৩২ একর ৯৮ শতাংশ বা প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে তিন হাজার আমগাছের মধ্যে এখন রয়েছে প্রায় দুই হাজার আমগাছ। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের বেশ কিছু আমগাছ এখনও টিকে আছে। বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামে নির্মাণ করা হচ্ছে পিকনিক স্পট। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এখান থেকে বিভিন্ন জাতের আমের গাছ ও কলম সংগ্রহ করতে পারবেন কৃষকরা। এ ছাড়া কৃষকদের দেয়া হবে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, আমচাষী ও রফতানিকারকদের দীর্ঘ দিনের একটি দাবি ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান নির্মাণের। এমন উদ্যোগ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমরা জেনেছি, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামে গত ২০০ বছরের নানা জাতের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ করা হবে। আধুনিক জার্মপ্লাজম সেন্টারের মাধ্যমে কৃষকপর্যায়ে এসব জাতের আমের সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম আম নিয়ে সামগ্রিকভাবে কাজ করবে। আমের গবেষণা, বাজারজাতকরণ, সম্প্রসারণ, রফতানিতে প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব কাজ করার দাবি জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামকে ঘিরে এখানকার ম্যাংগো ট্যুরিজম সম্প্রসারিত হবে। এই প্রতিষ্ঠান দেখে আশপাশের আম-বাগানিরা বাগান তৈরি করবেন এবং দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আমবাগান দেখতে আসবেন।

আমচাষী রনি আহমেদ জানান, এখানে সব জাতের আম সংরক্ষণ করা হবে। তাই স্থানীয় কৃষকরা খুব সহজেই এখান থেকে সায়ন সংগ্রহ করে বিভিন্ন জাতের আম নিজেদের আমবাগানে চাষাবাদ করতে পারবেন। বাইরে থেকে মূল্য ও অধিক ঝুঁকি না নিয়ে আর চারা বা সায়ন সংগ্রহ করতে হবে না। এ সময় বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়ামের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোঃ ইউসুফ বলেন, সারাদেশের আমের জন্য এমন বিশেষ কোন প্রথম প্রতিষ্ঠান হলো বঙ্গবন্ধু লাইভ ম্যাংগো মিউজিয়াম। পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাতগুলোর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এমনকি, হারিয়ে যাওয়া জাতগুলোও সংরক্ষণ করা যাবে। জাত উন্নয়ন ছাড়াও আমের চাষাবাদ সম্পর্কে জানতে পারবেন কৃষকরা। উল্লেখ্য, গত বছর ম্যাংগোপিডিয়া নামে ১০০টি প্রচলিত ও জনপ্রিয় আমের একটি প্রকাশনা এ্যালবামও প্রকাশ করেছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় ৮০০ জাতের আম। এর মধ্যে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জেই রয়েছে ৩৫০ জাতের আম।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.