জনগণকে সেবা দেওয়া আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব : প্রধানমন্ত্রী

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সেবা দেওয়া সবার সাংবিধানিক কর্তব্য। তাই জনগণের সেবায় নিবেদিত দক্ষ পেশাদার মনোভাবসম্পন্ন জনপ্রশাসন গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

গতকাল সকালে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সাভারে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কোর্সে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনকারী তিন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন। শেখ রায়হান আকবর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে রেক্টরস পদক গ্রহণ করেন। জোবায়দা ফেরদৌস দ্বিতীয় এবং আবদুল্লাহ আল রাজী তৃতীয় হন। ছয় মাসব্যাপী এবারের কোর্সে মোট ৪৬১ জন অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ১১৯ জন মহিলা।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বক্তৃতা করেন। বিপিএটিসির রেক্টর রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস স্বাগত বক্তৃতা করেন। সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুজন মোহাম্মদ হাসান ও ফারজানা ইয়াসমিন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কথা আসছে। তখন সম্পূর্ণভাবে আইসিটি ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে। তার জন্য আমাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের দেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে যতটুকুই অর্জন এ দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝরিয়েই তো অর্জন করে। সেখান থেকেই তো বেতন-ভাতা আমাদের সবকিছুর সহযোগিতা হয়। কাজেই তাদের ভাগ্য আমরা কেন পরিবর্তন করব না?

বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণার্থীদের নিজের গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজের মাটি ও মানুষকে যদি না চিনি বা তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হতে না পারি তাহলে তাদের সেবাটা দেব কীভাবে। তিনি বলেন, আপনারাই হবেন কারিগর যারা এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ২০৪১ সালে থামলেই চলবে না। আমাদের অনেক কাজ। জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) সেটাও যেমন আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র থাকুক তা আমি চাই না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘরবাড়ি করে দেওয়ার সুফল এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি চাই তরুণ অফিসাররা তাদের মনন ও বুদ্ধিমত্তা আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে শুধু গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছি তাই নয়, তাদের জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কাজেই আমি চাই আপনারা যারা নতুন হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন তারাও এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখবেন। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার (স্পেশাল ব্রাঞ্চের) রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত বই ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-এর সিরিজ বইগুলো এবং জাতির পিতার লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থটিও প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পড়ে দেখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ সিরিজগুলোয় যদি একটু চোখ বোলানো যায় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাস জানা যাবে, সংগ্রাম সম্পর্কে জানা যাবে, সর্বোপরি সমগ্র বাংলাদেশ সম্পর্কে জানা যাবে। অন্যদিকে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থ থেকে সেখানকার নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীদের অবস্থা বা সমাজের অনগ্রসর লোকদের অবস্থা, কৃষক-শ্রমিকের অবস্থা সম্পর্কে জাতির পিতার অনুধাবন ও মূল্যায়ন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের রপ্তানি পণ্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি যে অঞ্চলে যে পণ্য উৎপাদন হয় সেখানকার নির্দিষ্ট বিশেষ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে সে ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের মানুষ যদি ভালো থাকে, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি হবেই। এটা কেউ থামাতে পারবে না। তা চিন্তা করেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন এ অঞ্চলের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আবারও সেই বৈষম্য ফিরে আসে। সেখান থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে জাতির পিতা বলে গেছেন, ‘আজকে যতটুকু অর্জন এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝরিয়েই তো তা অর্জন করেছে। সেখান থেকেই তো বেতন-ভাতা আমাদের সবকিছু হয়।’ তাদের ভাগ্য আমরা কেন পরিবর্তন করব না- সে প্রশ্নও উত্থাপন করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং একে ঘিরে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনে দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কাজেই সেই কষ্ট কতটুকু আমরা লাঘব করতে পারি, আমাদের সবার সে প্রচেষ্টাই থাকবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.