কবর সংরক্ষণে অনিয়ম, ক্ষোভ সংসদীয় কমিটির

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং নামফলক মুছে যাওয়া ও স্থাপনা ভেঙে পড়ার ঘটনায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন তারা।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এতে সভাপতিত্ব করেন।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার ছবি কমিটির নজরে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

কমিটির সভাপতি শাজাহান খান নিজেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবিতকালে নানাভাবে অবহেলিত হয়েছেন। মৃত্যুর পরও তাদের এ অবহেলা করা হচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যায় না। আমরা হতে দিতে পারি না। পরে লালমনিরহাটের ওই ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি দেশের অন্য কোথাও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে কিনা তা তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠক শেষে এ প্রসঙ্গে শাজাহান খান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, অনেক জায়গায় নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে নামফলক মুছে যাচ্ছে। স্থাপনা ভেঙে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধাই করার পর কবর ভেঙে পড়ছে। আমরা বলেছি এটা চলবে না।

তিনি বলেন, বিষয়টি সরেজমিন দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করতে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবন নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘একপেশে’ সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে-এমন দাবি করে ওই টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গচ্ছিত অর্থে তেজগাঁওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে।

এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতিসংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা বন্ধ রাখার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জমি/সম্পত্তিসংক্রান্ত মামলাগুলো পরিচালনার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনে অবৈধভাবে দখল করা দোকান, চিলেকোঠা, সিঁড়ি ও নবম তলায় দাহ্য পদার্থের দোকান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালি করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল। কিন্তু আমি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। টেলিভিশন চ্যানেলটি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু তারা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারোরই বক্তব্য নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও ফোন দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এজন্য কমিটি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এবি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.