বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় ইইউ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এ জন্য একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে দুই পক্ষ। নতুন চুক্তির কাঠামোতে জলবায়ু পরিবর্তন, কানেক্টিভিটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষাসহ সব বিষয় নিয়ে সহযোগিতার সুযোগ থাকবে এবং এর ভিত্তি হবে মানবাধিকার।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল একশন সার্ভিস ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরার মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এনরিকে মোরা বলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছি দুটি কারণে— দেশটির অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্জন। এ কারণে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাইছি।’

অপরটি হচ্ছে আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ও কৌশল হচ্ছে এখানে আরও বড় আকারে অবস্থান নেওয়া। এটি করার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে আমরা অংশীদারত্ব বাড়াতে চাই বলে তিনি জানান।

বর্তমানে দুপক্ষের মধ্যে যে কাঠামোয় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে, সেটির পরিবর্তন করতে হচ্ছে কারণ বাংলাদেশ এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ওই চুক্তির মধ্যে যে উপাদানগুলো আছে, সেগুলোর বাইরেও বিভিন্ন বিষয় চলে আসছে। ফলে আমাদের পরবর্তী ধাপে উন্নীত হতে হচ্ছে এবং সেটি হচ্ছে অংশীদারত্ব চুক্তি। এই আইনি কাঠামোর মধ্যে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘অংশীদারত্ব চুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে, এটি আমি বলতে পারবো না। তবে আমরা ৫০ বছর পূর্তির যে আবহ রয়েছে সেটির মধ্যে এটি করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে হবে এবং সেটি অংশীদারত্ব স্তরে নিতে হবে। এটি করতে গেলে একটি চুক্তি সই করতে হবে।’ রাজনৈতিক সংলাপ : দুপক্ষের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হলো। এখন থেকে এটি প্রতিবছর হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মনে করে, দুপক্ষের মধ্যে সম্পর্কের যে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, সেটির জন্য এটি একটি ভালো আরম্ভ হয়েছে।

এনরিকে মোরা বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে এটি আমরা স্বীকার করি এবং সেটি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি। এ জন্য আমরা এখানে রাজনৈতিক সংলাপ করতে এসেছি। আমরা এখানে এসেছি নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করতে, সম্পর্কের একটি নতুন আইনি কাঠামো দিতে, যাতে বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‌‘আমরা সম্মত হয়েছি যে অংশদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করবো। এর একটি আলোচনার প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের যে ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যাত্রা রয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিলে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ আছে।’

নিরাপত্তা : নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে শাহরিয়ার আলম ও এনরিকে মোরার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা সহযোগিতার মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খাদ্য, শান্তিরক্ষা, মেরিটাইম নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যে ঝুঁকির মুখে পড়বে, সেটি মোকাবিলার জন্য বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি হলে এটি করা সহজ হবে এবং ইইউ যে দেশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, এমন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই চুক্তি কাজ করবে। বাংলাদেশ ও ইইউর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কোথায় আছে এবং ভবিষ্যতে কী হবে, সার্বিক নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এখানে প্রথাগত নিরাপত্তা ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা রয়েছে। রোহিঙ্গা নিরাপত্তা, মানবিক সহযোগিতা, প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় তাদের অবস্থান তারা তুলে ধরেছে। আঞ্চলিক ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে, বিশেষ করে জাতিসংঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় বাংলাদেশের অবদান রয়েছে।

এনরিকে মোরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। আমরা মেরিটাইম নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছি।’

ইন্দো-প্যাসিফিক : ইন্দো-প্যাসিফিক ইইউর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় ইইউ।

মোরা বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের এই যাত্রায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেষ্টা করবে সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়ার।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ অঞ্চলে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা আছে। এটি করার জন্য এ অঞ্চলে অবাধে চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত : গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পরে সব দেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন বিশ্বে বাস করছে। এ মুহূর্তে যারা জাতিসংঘ নীতিতে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যে অংশীদারত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ নিয়ে এনরিকে মোরা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন রেজল্যুশন নিয়ে বাংলাদেশ স্বপক্ষে ভোট দিয়েছে। এই সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে ইইউ সম্মান করে। বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমরা সেটিকে বাতিল করতে পারবো না। আমরা যেটি করতে পারি, সেটি হচ্ছে নীতি নিয়ে আলোচনা এবং আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আমরা অন্য দেশকে একটি অবস্থান নেওয়ার জন্য বলবো না। আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।’

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.