কমছে আমদানি বাড়ছে রিজার্ভ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ডলার সংকট কাটাতে দেশের আমদানিতে লাগাম টানায় উদ্যোগী হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়িও আরোপ করা হয়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে এলসি খোলায় কঠোর হওয়ার পর থেকে কমতে শুরু করেছে পণ্য আমদানি। আর এতে করে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এলসি খোলার হার কমেছে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু পণ্যের আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো, এলসি মার্জিন তুলে নেওয়া ও ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে এলসি খোলা কমেছে। আমদানি কমার প্রবণতা আরও কিছুদিন বজায় থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমদানি কমায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমছে।

জানতে চাইলে অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি আরও কমবে। আমদানি কমার ভালো খারাপ দুটি প্রভাবই অর্থনীতিতে আছে। আমদানি কমছে কিন্তু বেশি কমলে চলবে না। এখনো ফরেন কারেন্সি ব্যাপকভাবে শটেজ আছে। আমদানি যে খুব একটা বাড়াতে পারবে সেটা মনে হয় না। মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির ওপর প্রভাব পড়েছে। শিল্পকারখানা না হলে কর্মসংস্থান না হলে অর্থনীতিতে এর একটা নেতিবাচক প্রভার তো আছেই। আর মানুষ যেটা কিনতে চায় সেটা হয়তো পারছে না। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও আছে। বিশ্ববাজারে এসবের দাম অনেক চড়া কিন্তু ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনমতো আমদানি করা যাচ্ছে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আমদানির জন্য ২ হাজার ৮২৮ কোটি ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৭১ কোটি ডলার।

এদিকে, পণ্য আমদানি কমায় বিদেশি মুদ্রা বা রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে। গত ৩০ নভেম্বর রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। গত কয়েক দিনে তা বেড়ে আবার ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার। 

সর্বশেষ গত ৫ জুলাই আমদানি আরও কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকসসামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিকসামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা পাবেন না আমদানিকারকরা। এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে, এর আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।

রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যয়সংকোচনের পথ বেছে নেয় সরকার। অতি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

তবে আমদানির নতুন এলসি খোলা কমিয়ে আনাকে নিজেদের বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য ফেরাতে আমদানি কমানোর বিকল্প ছিল না। এ কারণে আমদানির নতুন এলসিতে নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোও অপ্রয়োজনীয় নতুন এলসি খোলা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। সব মিলিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত যতটুকু সাফল্য এসেছে, তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তুষ্ট। আমদানির এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের শুরু থেকে ডলার সংকট কমবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৬৩৯ কোটি ডলার। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে খোলা হয় যথাক্রমে ৬৬২ কোটি ও ৬৫১ কোটি ডলারের এলসি। অক্টোবরে তা এক ধাক্কায় ৪৭৪ কোটি ডলারে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৪০২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

আমদানি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয় ১৭ এপ্রিল। ঐ দিন এক সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১০ মে বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে আরেকটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এলসি খোলার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানি। এর মধ্যে বস্ত্র, চামড়া, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। আর কম্পিউটার, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে। শিল্পের কাঁচামাল ও ইন্টারমিডিয়েট গুডস আমদানির এলসি খোলার পরিমাণও কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.