ইলিশ উৎপাদন ৬ লাখ টনে পৌঁছার লক্ষ্যে ২ মাস মাছ ধরা নিষেধ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ইলিশ পোনা জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বরিশালে দেশের ৬ষ্ঠ মৎস্য অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে বুধবার রাতের প্রথম প্রহর থেকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে বরিশালের হিজলা ও মেহদিগঞ্জের লতা, নয়া ভাঙ্গনী ও ধর্মগঞ্জ নদীর মিলনস্থল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আগামী ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত অবধি সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। মৎস্য অধিদফতরের তত্বাবধানে এসব এলাকায় ইতোমধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্ট গার্ড-এর নজরদারি শুরু হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের আরো ৫টি অভায়াশ্রমেও নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের সমুদ্রে যাওয়ার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনা-জাটকা খাদ্য গ্রহণ করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারি ক্ষেত্র’ হিসেবে চিহিৃত করে অভয়াশম ঘোষণা করা হয়েছে। ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুুলিয়া নদীর ১শ’ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মোট ৬টি অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মাছ আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করায় ইলিশ সহ সব ধরনের মাছে উৎপাদন বাড়ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে সারা দেশে উৎপাদিত ও আহরিত ইলিশের ৬৮-৭০ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে সম্পন্ন হচ্ছে।

অভয়াশ্রমসহ সারা দেশে আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে জাটকা সংরক্ষণে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগ জুুড়ে মৎস্য অধিদফতরের সহযোগিতায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, জাটকা আহরণ বন্ধসহ কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ উপকরণের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অভিযান ছাড়াও প্রায় ১ হাজার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় প্রায় ৫০ টন জাটকাসহ আরো প্রায় ১৮ টন অন্যান্য মাছ আটক করা করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযানকালে ৭ হাজার ওপর বেহুন্দি জাল ছাড়াও প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মিটার কারেন্ট জাল এবং ১২ হাজারটি অন্যান্য ক্ষতিকর জাট আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসব অভিযানকালে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ৪৫১টি মামলা দায়ের ছাড়াও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রায় ১৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং প্রায় ৭০ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। অভিযানকালে বাজেয়াপ্তকৃত নৌকাসহ অন্যান্য মালামাল নিলামে বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ প্রতিদিন স্রোতের বিপরীতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলে জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়ান করে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র এবং মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘ্ন রাখাসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ বা ‘মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইলিশের নির্বিঘ্ন প্রজনন নিশ্চিত করতে গত বছর অক্টোবরে ২২ দিনের আহরন, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞাকালে উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার প্রজননস্থলসহ অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে প্রায় ৮৪% মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এরমধ্যে ৫২ ভাগ মা ইলিশ ২২ দিনের মূল প্রজননকালীন সময়ে সম্পূর্ণ ডিম ছাড়ে। অপর ৩২% ডিম ছাড়ারত ছিল। যা ছিল গত বছরের প্রজননকালের চেয়ে প্রায় ২.৪৫% বেশি। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মতে, বিগত প্রজননকালে প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার কেজি ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। যার প্রস্ফুটনে দেশে ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে বলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানিয়েছেন। ফলে চলতি অর্থ বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৬ লাখ টনে পৌঁছতে পারে বলেও আশাবাদী মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। এমনকি দেশ মৎস্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণ হবার পেছনে ইলিশের একক অবদান সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। ইলিশের কারণেই দক্ষিণাঞ্চল মৎস্যখাতে এখন উদ্বৃত্ত এলাকা।

মূল প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন, জাটকা আহরণে ৮ মাস এবং সাগরে ৬৫ দিনের আহরণ নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন ২ লাখ টন থেকে গত অর্থবছরে প্রায় ৫.৬৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছরে তা প্রায় ৬ লাখ টন উন্নীত হতে পারে বলেও মৎস্য অধিদফতর ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দায়িত্বশীল মহল আশাবাদী।

এদিকে ৮ মাসের জাটকা আহরণ নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের মধ্যে সরকার ‘মানবিক সহায়তা’ হিসেবে ৪ মাসের জন্য দেশের ২০টি জেলার ৯৭ উপজেলার ৩ লাখ ৬১ হাজার জেলে পরিবারের জন্য ৫৭ হাজার ৭৩৯ টন চাল বরাদ্দ করেছে। যারমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ২ লাখ ৩০ হাজার ১৮৭ জেলে পরিবারের জন্য ৩৬ হাজার ৮২৯ টন চাল বিতরণ চলছে। এসব খাদ্যশষ্য পরিবহনের জন্য ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলাতেই ফেব্রুয়ারি মাসের চাল বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.