প্রকল্পে প্রগতির গাড়ি ব্যবহার করতে হবে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশী গাড়ির পরিবর্তে দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতির তৈরি গাড়ি ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পের নামে শুধু ভবন নির্মাণের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে।

শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের একনেক সম্মেলনকক্ষে গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোসহ একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমও উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সভায় নয় প্রকল্পে নতুন করে অনুমোদিত ব্যয় এক হাজার ৭৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণসহায়তা থেকে এক হাজার ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এতে করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের কোনো কাজেই যথাযথভাবে মনোযোগ দিতে পারেন না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাইরে অর্থাৎ স্বতন্ত্র কর্মকর্তাদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারবেন না।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি ঘের সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা বা ভারী বৃষ্টি হলে ঘেরগুলো ভরাট হয়ে যায়। ভরাট হওয়ার পরে ঘেরগুলো খননের মাধ্যমে চিংড়ি চাষের উপযোগী রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনেক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ সেগুলো পড়ে আছে। এসব ভবন কাজে লাগাতে হবে। ভবন ফেলে রাখা যাবে না। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এরই মধ্যে কেনা হয়েছে এমন যন্ত্রপাতি ও নির্মিত ভবন ফেলে রাখা যাবে না।
মন্ত্রী জানান প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেছেন, প্রকল্পের নামে শুধু ভবন বা দালান নির্মাণ করলে হবে না। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সবার আগে লোকবল নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ভবন নির্মাণ হয়ে গেলেও লোকবল থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক জিনিসগুলোর জন্য ভবনের কাজ শুরু করা যায় না। এজন্য ভবন নির্মাণে সচেতন হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্প। প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ২২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা মূল ব্যয়ের চেয়ে ২৮৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩০৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দিচ্ছে জাপান। প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় বাড়ছে ১৭৪ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯২৮ কোটি টাকা। জাইকার ৮০৭ কোটি টাকা ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় বাড়ছে ৩৭ কোটি ৪৭ টাকা। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১১ কোটি টাকা। ঢাকা কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে মূল অনুমোদিত ব্যয় ধরা হয় ৮৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটির প্রথম ও দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৯৮ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়। এখন তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাবে দুই কোটি টাকা কমিয়ে ৯৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিচ্ছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প গতকাল একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১৮৬৮ কোটি টাকা। এখন সংশোধনী প্রস্তাবে ৫৮৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৪৫৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটিতে দুই হাজার ১৮৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।

নতুন চারটি প্রকল্পের মধ্যে দেশের ২৫০টি সেতুর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের সমীক্ষা, দ্বিতীয় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদন পেয়েছে। একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সংসদ সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১১২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের ‘প্রজেক্ট ফর দি ইম্প্রভমেন্ট অব ইক্যুইপমেন্ট ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটির মোট খরচ ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪ কোটি টাকা দেবে জাইকা। আর বাকি ২৪ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে। বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পে তৃতীয় ধাপে ৪২৬ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ১৫৭ কোটি টাকা। বাকি ২৬৮ কোটি টাকা ইইউ এবং ইউএনডিপি দেবে ঋণ হিসেবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.