আট দেশ থেকে এসেছে ১৬৪ কোটি ডলার

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় এসেছিল। এরপর টানা ছয় মাস রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল এর চেয়ে কম। তবে গত মার্চে আবারও ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। এরমধ্যে আট দেশ থেকেই এসেছে সিংহভাগ রেমিটেন্স। দেশগুলো হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, ওমান ও ইতালি। গত মার্চে এই আট দেশ থেকে ১৬৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ২১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। মার্চে রেমিটেন্সের পরিমাণ আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৪৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি। এছাড়া আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গতমাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ৮ দশ৪৯ শতাংশ।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ৭৪ কোটি ডলার রেমিটেন্স বেশি এসেছে।
রেমিটেন্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিটেন্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
রেমিটেন্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিটেন্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিটেন্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।

বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। যদিও বিদেশী মুদ্রার সংকট কাটাতে নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে আমদানিতে। এতে করে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। এখনো রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানিতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। প্রবাসী আয়ও আশানুরূপ বাড়েনি। উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ছাড় কমে গেছে।

একই সময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না বিদেশী বিনিয়োগ। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবের ঘাটতির পাশাপাশি সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে করে এক হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশ৮২ বি) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৭ টাকা ধরে) এর পরিমাণ এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। আর রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০১৭ সালের ২২ জুন। এরপর থেকে করোনার প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। করোনার প্রভাব শুরুর পর বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে।

তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশী ঋণ কমালেও বাংলাদেশে বেড়ে যায় ,বিশ্ববাজারে দর বৃদ্ধির পাশাপাশি আগের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়নের ঘরে ওঠা নামা করছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এ হিসাবে ব্যবহারযোগ্য বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি নয়।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.