যশোরে অনুষ্ঠিত হলো তথ্য অধিকার আইন ২০০৯- এর প্রয়োগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ
নিজস্ব প্রতিনিধি : তথ্য অধিকার আইন-২০০৯-এর প্রয়োগে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাপক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ তথা তথ্যে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে আজ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ যশোরে অনুষ্ঠিত হলো ‘তথ্যে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা ।
ফ্রিডরিখ ন্যাউম্যান ফাউন্ডেশন ফর ফ্রিডম বাংলাদেশ (এফএনএফ বাংলাদেশ)-এর সহায়তায় এবং বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এন্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) আয়োজিত এই প্রশিক্ষণে মোট ৩৩ জন জাতীয় ও আঞ্চলিক/স্থানীয় পর্যায়ের দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও জেলা প্রেস ক্লাবের প্রতিনিধি, জেলা তথ্য কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, আইনজীবী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আলোচনা করেন বিএনএনআরসি’র প্র্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব এএইচএম বজলুর রহমান। তারপর এফএনএফ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত এবং কার্যক্রম উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার জনাব ওমর মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান বিএনএনআরসি’র যশোরের ফোকাল, ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার জনাব ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল।
প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব, সার্বিক, উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জনাব তুষার কুমার পাল এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো. রেজাউল করিম; সিনিয়র তথ্য অফিসার, যশোর; জনাব মো. ইউসুফ মিয়া; নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদস্য সচিব, আরটিআই, যশোর; এবং জনাব বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক; নির্বাহী পরিচালক, রাইটস যশোর।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনাব তুষার কুমার পাল বলেন, তথ্যের প্রবেশাধিকার সকল নাগরিকের অধিকার। এই প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে তথ্য ভান্ডার উন্মুক্ত হয়, রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। এই স্বচ্ছতার মাধ্যমে সুশাসন টেকসই হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তথ্য নিয়ে মূলত সাংবাদিকরাই বেশি কাজ করেন। তিনি যশোর এলাকার সব ধরনের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সম্মানিত অতিথি জনাব মো. রেজাউল করিম; সিনিয়র তথ্য অফিসার, যশোর বলেন, তথ্যে প্রবেশাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মী ও সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জানার পরিধি আরো বেড়ে যাবে, এতে রাষ্ট্রের সুশাসন আরো দৃঢ় হবে। তিনি এরকম একটি বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের জন্য আয়োজক সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান।
জনাব মো. ইউসুফ মিয়া; নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদস্য সচিব, আরটিআই, যশোর বলেন এই আইন ও প্রশিক্ষণ সকল মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।
জনাব বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক; নির্বাহী পরিচালক, রাইটস যশোর বলেন, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মী ও সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জানার পরিধি আরো বেড়ে যাবে. প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের সহকারী পরিচালক (প্রচার ও প্রকাশ) এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা, জনাব লিটন কুমার প্রামাণিক।
তিনি তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের পূর্ব-ধারণা যাচাই (প্রি-টেস্ট)-এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণের অধিবেশন শুরু করেন। এরপর তিনি তথ্য এবং তথ্য অধিকারের সংজ্ঞা, তথ্য অধিকারের গুরুত্ব, তথ্য জানার সুবিধা, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯: পটভূমি এবং মৌলিক সমস্যা, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর মূল বৈশিষ্ট্য, তথ্য অধিকারের আইনগত ভিত্তি এবং পদ্ধতি, তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহারিক নির্দেশিকা, তথ্য খোঁজা এবং প্রাপ্তির প্রক্রিয়া / পদক্ষেপ ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করেন।
মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর প্রশিক্ষণার্থীদের দিয়ে তথ্য প্রাপ্তির আবেদনপত্র পূরণ করার মাধ্যমে প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এরপর প্রশিক্ষক জনাব লিটন কুমার প্রামাণিক আপিল এবং অভিযোগ-এর নিয়ামাবলী, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর কার্যক্রম: অভিযোগ এবং নিষ্পত্তি, তথ্য পাওয়ার অধিকার, তথ্য অবমুক্তকরণ, তথ্য অধিকারের চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা এবং তথ্য অধিকার এবং সুশাসনের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেন।
তিনি পোস্ট-টেস্ট-এর মাধ্যমে আবার অংশগ্রহণকারীদের আলোচনা-পরবর্তী ধারনা যাচাই করেন। পরবর্তীতে উন্মুক্ত প্রশ্ন-উত্তর পর্ব এবং সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে প্রশিক্ষণটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আশা করা হচ্ছে, প্রশিক্ষণটি গ্রহণ করার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীগণ তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে উৎসাহিত হবেন, সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব-প্রণোদিত হয়ে তথ্য প্রদানে সচেষ্ট হবেন এবং তথ্য প্রদানকারী ও তথ্যগ্রহণকারী উভয় পক্ষের মধ্যে একটি যোগসূত্র গড়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, বিএনএনআরসি একটি গণমাধ্যম উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা যা ২০০০ সালে আত্মপ্রকাশ করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত হয়। এটি জাতিসংঘের ইকোনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর বিশেষ পরামর্শক মর্যাদাপ্রাপ্ত সংস্থা এবং সংস্থাটি তথ্য সমাজ বিনির্মাণে অবদানের জন্য ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি জাতিসংঘের পুরস্কার-২০১৬ এর বিজয়ী এবং ২০১৭ এবং ২০১৯, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২৩- এর চ্যাম্পিয়ন ।
বিএনএনআরসি নলেজ-ড্রাইভেন মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট-এর ভূমিকায় দেশীয় আঞ্চলিক, ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কাজ করে থাকে। বিএনএনআরসির কর্মপ্রচেষ্টা হলো গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর তথ্য অধিকার, সুশাসন এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ-সুবিধাসমূহ বিবেচনায় রেখে জ্ঞানভিত্তিক ও চলমান ইস্যু বিবেচনায় রেখে গণমাধ্যমের উন্নয়ন।