১০ গ্যাসকূপ খনন কাজ পাচ্ছে রাশিয়া চীনের কোম্পানি

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জ্বালানি সংকট মেটাতে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চীনের সিনোপ্যাককে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমকে ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধানে এ কাজ তাদের দেওয়া হবে।

স্থলভাগে চলমান ৪৬টি কূপ খননের পাশাপাশি ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশি কোম্পানি বাপেক্স এবং বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনোপ্যাক ও গ্যাজপ্রম এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তাদের দর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বলছেন, বিদেশি কোম্পানির চেয়ে বাপেক্সের কূপ খনন খরচ কম। তাছাড়া দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ দিলে প্রতিযোগিতা হতো, খরচ কমে আসত। তবে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা শুধু বাপেক্সকে দিয়ে সম্ভব নয়। দ্রুত কাজ করতে হবে। তাই বিশেষ বিধানে সমঝোতার মাধ্যমে সিনোপ্যাক ও গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দুটিই যোগ্য কোম্পানি। আগেও তারা বাংলাদেশে কাজ করেছে।

জানা গেছে, গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হবে ভোলার শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ এবং ভোলা নর্থ-৩ ও ভোলা নর্থ-৪ কূপের কাজ। এর মধ্যে শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট অনুসন্ধান কূপ এবং বাকি চারটি উন্নয়ন কূপ। সিনোপ্যাক খনন করবে রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, সিলেট-১১, কৈলাশটিলা-৯ এবং ঢুপিটিলা-১ কূপ। এগুলোর চারটি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ।

এর আগে ঘাটতি মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা করে। এর মাধ্যমে দৈনিক ৬১ দশমিক ৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়ার আশা করা হয়। ২০২৫ সাল আসতে আর ১০ মাস বাকি; কিন্তু এ পর্যন্ত কূপ খনন হয়েছে ১১টি। এর মধ্যে ৯টি কূপ থেকে দিনে ১২ দশমিক ৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বেড়েছে। তবে পাইপলাইনে যোগ হয়েছে চার কোটি ঘনফুট। ২০২৮ সালের মধ্যে বাপেক্স ৬৮টি, সিলেট গ্যাস ফিল্ড ১১টি ও বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড ২১টি কূপ খনন করবে। নতুন কূপ হবে ৬৯টি, বাকিগুলো বন্ধ কূপ, যা সংস্কার করা হবে (ওয়ার্কওভার)।

কূপ খননে ধীরগতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করতেই এক বছরের বেশি লেগে যায়। এরপর জমি অধিগ্রহণ ও যন্ত্রপাতি কিনতে লাগে কয়েক মাস। খনন শুরুর পর একটি অনুসন্ধান বা উন্নয়ন কূপ শেষ করতে লাগে অন্তত সাড়ে তিন মাস। আর সংস্কার কূপ খননে লাগে দুই মাস।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘ডিপিপি অনুমোদনে সময় কমিয়ে আনা চেষ্টা চলছে।’

দেশীয় গ্যাস কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে সিলেট গ্যাসফিল্ডের। কোম্পানিটির আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ প্রায় সাড়ে চার টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস। আর এখন পর্যন্ত ভোলায় গ্যাস মজুদ দুই টিসিএফ, যা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

ভোলায় এরই মধ্যে পাঁচটি কূপ খনন করেছে গ্যাজপ্রম। সিনোপ্যাকও একাধিক কূপ খননের কাজ করেছে। বর্তমানে সিলেট এলাকায় কাজ করছে কোম্পানিটি।

বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিজস্ব লোকবল দিয়ে একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্যাজপ্রমকে দিয়ে খনন করতে খরচ হয় ১৮০ কোটি টাকার মতো। সিনোপ্যাকের খরচ কূপপ্রতি ১৬০ থেকে ১৭০ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, বাপেক্সের যা সক্ষমতা তা দিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য আরও বড়। তাই বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। তারা আরও বলেন, বাপেক্স যে কাজ করে, তাতে কর্মকর্তাদের বেতন, রিগের পেছনে বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করা হয় না। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি সবকিছু হিসাব করে বাজেট করে। তাই খরচ বেশি।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.