রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছে সরকার
ডাল, ছোলা, ভোজ্য তেলসহ পণ্য আমদানি করবে টিসিবি – আমদানির সুযোগ পাবে বেসরকারি খাতও সরকারি (জিটুজি) প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ)-এর প্রস্তাব দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রদিনতর্গ-এর মহাপরিচালক আন্দ্রে গোলোভানব রোজার আগে, ১০ মার্চ চুক্তিটি সম্পন্ন করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সরকার দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে রাশিয়াও চাইছে বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য রপ্তানি করতে। সে কারণেই তারা দ্রুত চুক্তির তাগিদ দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যেহেতু ব্যাংকিং লেনদেন নাই, সে কারণে চুক্তির খসড়ায় সরকারি প্রক্রিয়ায় ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যে প্রক্রিয়াতেই আমদানি হোক- অর্থ পরিশোধের বিষয়টি নিষ্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সুযোগ নাই। সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাইয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করে প্রথম চিঠি দেয় রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান প্রদিনতর্গ। ওই চিঠির সূত্র ধরে গত অক্টোবরে ‘জিটুজি’ প্রক্রিয়ায় খাদ্যপণ্য রপ্তানির জন্য এমওইউ করার প্রস্তাব দেয় দেশটি। তবে সেই সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের ব্যস্ততার কারণে এ বিষয়ে আলোচনা বেশি দূর আগায়নি। নির্বাচন শেষে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রদিনতর্গ আবারও চুক্তির তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠায়। এই চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি ১০ মার্চ চুক্তি করার বিষয়টি উল্লেখ করে। চুক্তির খসড়ায় বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা টিসিবি এবং রাশিয়ার পক্ষে দেশটির প্রতিষ্ঠান প্রদিনতর্গর শীর্ষ কর্মকর্তাদ্বয়ের স্বাক্ষর করার কথা উল্লেখ রয়েছে। চুক্তিতে আগ্রহী প্রদিনতর্গ রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি। ২০১৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে জিটুজি ভিত্তিতে রাসায়নিক সার ও খাদ্যশস্য রপ্তানি করে আসছে। খসড়ায় বিভিন্ন ধরনের মসুরি, মোটর ডালজাতীয় পণ্য, সূর্যমুখী তেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সরবরাহের কথা উল্লেখ রয়েছে। সরকারি ভাবে পণ্য আমদানির উল্লেখ থাকলেও এই চুক্তির আওতায় বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তিও রাশিয়া থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ পাবে।
সম্পন্ন হওয়ার পর ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই চুক্তি। কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া যেহেতু জিটুজি পদ্ধতিতে খাদ্য রপ্তানি করতে ইচ্ছুক- সে কারণে এই চুক্তি হতে হবে দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। সে ক্ষেত্রে প্রদিনতর্গের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টিসিবির চুক্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের এক কোটি মানুষকে সাশ্রয়ীমূল্যে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে সরকার। প্রতিযোগিতামূলক দামে টিসিবির মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ভোগ্যপণ্য আনতে পারলে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। টিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানটি এর আগেও ডাল ও ভোজ্য তেলজাতীয় পণ্য রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছিল। দেশটি থেকে খাদ্য আমদানিতে সরকারও ইতিবাচক। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে যেহেতু ব্যাংকিং লেনদেনের সুযোগ নেই, সে কারণে আমদানিকৃত পণ্যের দাম কীভাবে পরিশোধ হবে- সে বিষয়টি আগে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ছাড়া চুক্তির খসড়ায় বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সংরক্ষিত হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে দেশটির সঙ্গে এমওইউ করতে আরও সময় লাগবে।