আদানির বিদ্যুৎ রফতানির বাণিজ্যিক ঘোষণা

0

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। আদানি পাওয়ারের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভারতে নির্মিত কোনো বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম শুরু করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও ভারতের রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় এতদিন ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে দেশে।

৭ এপ্রিল ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত ওই চিঠিতে আদানি পাওয়ার জানায়, ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গড্ডায় ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড (এপিজেএল) আদানি পাওয়ার লিমিটেডের (এপিএল) শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান।

এপিএলের কোম্পানি সেক্রেটারি দীপক এস পান্ডের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে এপিএলের ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের নিট ক্যাপাসিটি ৭৪৮ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট) আওতায় ৬ এপ্রিল অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আরো ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে।

এর আগে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে গড্ডা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বিপিডিবি ও আদানি পাওয়ারের মধ্যে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ নিতে থাকে বিপিডিবি। পরীক্ষামূলক উৎপাদনে ৫ এপ্রিলও আদানি কেন্দ্র থেকে দিনে পিক আওয়ারে ৬৮৫ এবং সন্ধ্যায় (পিক) ৭৪৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেয়া হয়।

আদানির কেন্দ্র থেকে আমদানীকৃত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিশেষত রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ দেয়া হয়। চাহিদার মৌসুমে আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়ায় উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিডিবির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এপিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এসবি খ্যলিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি কৌশলগত সম্পদ। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আগামীতে আরো সহজ হবে, যা দেশটির শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় রূপ দেবে। ভারতে এমনকি গোটা দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এটি সবচেয়ে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে চলেছে। বৈশ্বিক পরিসরেও এটি অন্যতম সেরা একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভারতে এটিই প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে প্রথম দিন থেকেই উৎপাদন শুরু হয়েছে শতভাগ এফজিডি (ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন), এসসিআর ও জিরো ওয়াটার ডিসচার্জ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে।’

গড্ডায় আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিপিডিবি-এপিএলের পূর্ণ মালিকানাধীন এপিজেএলের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই হয়। বাংলাদেশে জ্বালানি তেলচালিত মোট ৭ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে এইচএফওচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৬ হাজার ৩২৯ মেগাওয়াট এবং হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট বলে জানায় আদানি পাওয়ার।

দেশে বর্তমানে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে। এর একটি পটুয়াখালীর পায়রায় অবস্থিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। অন্যটি বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত একই সক্ষমতার ৬৬০ মেগাওয়াটের (প্রথম ইউনিট) বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মধ্যে পায়রা বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। আর রামপাল এখনো পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম চালু রেখেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, দেশের জাতীয় গ্রিডে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাপানি অর্থায়নে নির্মাণাধীন ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মাণাধীন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একই প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বেসরকারি অর্থায়নে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য গড্ডায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ভারতের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীটি। এর জন্য আলাদা সঞ্চালন লাইনও নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ১০০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে আদানি। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পরিবহনের জন্যও দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ করেছে ভারতীয় এ শিল্পগোষ্ঠী।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.