ডিউটি ছাড়া কর্মরতদেরও ঢোকা নিষেধ শাহজালালে

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এর পরও নানাভাবে পাস সংগ্রহ করে বিমানবন্দরে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থী ও স্বার্থসংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সংস্থার কর্মী, বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ভিআইপিসহ নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে হাজার হাজার পাস। অহরহ এই পাস ব্যবহার করে চোরাচালানসহ নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে ধরাও পড়ছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বিমানবন্দরে কর্মরতরা কর্মঘণ্টার (ডিউটি আওয়ার) বাইরে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে নানা অপকর্মে জড়াচ্ছেন। সম্প্রতি এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। ফলে মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়েছে বিমানবন্দরগুলো।

এ অবস্থায় নিরাপত্তায় কড়াকড়ি আরোপ করতে চাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর অংশ হিসাবে বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তিদের ওপর কর্মঘণ্টার বাইরে বিমানবন্দরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দর্শনার্থী প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাস নিয়ে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ থাকছে। গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারি করে বেবিচক।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিস্টেম বা প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আগামীকাল বুধবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ পদ্ধতি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিস্টেম উদ্বোধনের ফলে বিমানবন্দরে অযাচিতভাবে প্রবেশ করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে এমন নির্দেশনা জারি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মরতরা।

বেবিচক সূত্র জানায়, প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ হলো এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় থাকা এলাকায় প্রবেশ করতে পারেন না। মূলত ওই এলাকায় একটি আধুনিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয় এ ব্যবস্থার মাধ্যমে। সাধারণত তিনভাবে এই নিরাপত্তাব্যবস্থা কাজ করে- পিন কোড বা পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে, স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে অথবা ফিঙ্গার প্রিন্ট বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে। আর পুরো ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রিত হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে থাকা এলাকায় অযাচিতভাবে প্রবেশ করতে চাইলে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই ব্যক্তির ছবি তোলা এবং তার গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হয়। নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে নিরাপত্তা অ্যালার্মের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে সচেতনও করা যায় এ ব্যবস্থার মাধ্যমে।

জানান গেছে, নতুন ব্যবস্থায় আগে দেওয়া ১০ হাজার পাস পর্যায়ক্রমে বাতিল করে সবাইকে নতুন করে পাস নিতে হবে। নতুন নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্য চিপসসংবলিত নতুন ডিজিটাল পাস দেওয়া হবে। আর দর্শনার্থী ক্যাটাগরিতে ভিআইপিসহ অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা একাধিক পাস বাতিল করা হবে। এখন থেকে মূলত সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি দুই ধরনের পাস চালু করা হবে।

বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাঝুঁকি নিরসনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো অতিসত্বর বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে কী কী ঘটনা ঘটেছে তা বলা হয়নি। এতে আরও বলা হয়, বিমানবন্দরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের সময় ছাড়া বিমানবন্দরে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বিমানবন্দরে অনুমোদিত প্রটোকলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত বিমানবন্দরে কোনো পাসধারী ব্যক্তি প্রটোকলের কাজ করতে পারবেন না। বিমানবন্দরে যাত্রীদের বিদায় ও অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সব প্রকার দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ক্ষেত্রবিশেষ সদস্য (নিরাপত্তা), নির্বাহী পরিচালক (হশাআবি), পরিচালকের (এভসেক, হশাআবি) দপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে দর্শনার্থী প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা যাবে। তবে এ বিষয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে (ডিএমও) নিরাপত্তা পাস বা ভিআইপি সুবিধা কিংবা প্রটোকল সম্পর্কিত বিষয়ে সরাসরি অনুরোধ করা বা নির্দেশ দেওয়া যাবে না।

জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি সংস্থা কাজ করে। এ ছাড়া রয়েছে ব্যাংক, বীমা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, কার পার্কিং, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ হাজার পাস রয়েছে। এসব পাশের অপব্যবহার হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ পাস নিয়ে সংরক্ষিত বিমানবন্দর এলাকায় ঢুকে নানা অপকর্ম ঘটিয়ে সটকে পড়ছে অপরাধীরা। ফরে বিমানবন্দরে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণে গত বছর নিরাপত্তা আরও জোরদারে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসাবে শাহজালাল বিমানবন্দরে বসেছে অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিস্টেম বা প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে প্রবেশের বিষয়ে সবসময়ই আমরা কড়াকড়ি আরোপ করি। কর্মঘণ্টার বাইরে কেউ-ই এখানে প্রবেশ করতে পারে না। কর্মঘণ্টার বাইরে বিমানবন্দরে প্রবেশে করে অপকর্মে জড়িত হয়েছেন, এমন অনেক কর্মচারীকেই আমরা স্বর্ণ বা অবৈধ পণ্যসহ আটক করেছি। আগামী বুধবার প্রতিমন্ত্রী অত্যাধুনিক ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোল ব্যবস্থার উদ্বোধন করবেন। আশা করছি, নতুন ব্যবস্থায় বিমানবন্দর আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্টসহ একটা কন্ট্রোলরুম করা হচ্ছে, যা দিয়ে পুরো বিমানবন্দর মনিটরিং করা হবে। ডিজিটাল অ্যাক্সেস কন্ট্রোলব্যবস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হবে। যে কেউ বিমানবন্দরে আর ঢুকতে পারবেন না।

মফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য অনেক সংস্থা বিভিন্নভাবে অনেক পাস সংগ্রহ করেছিল। আমরা নতুন বিধি করেছি, কারা পাস পাওয়ার যোগ্য, সেখানে বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া যুক্ত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে শুধু তারাই বিমানবন্দরে বিচরণ করতে পারবে। এটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত হবে। মূলত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার আর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনাকে আরও গতিশীল ও আধুনিক করতে এটা করা হচ্ছে। নতুন নিয়মে আমরা পাস নিয়ে অনিয়ম ও অপব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে পারব বলে আশা করি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.