ওষুধ কেনার ছলে করোনা রোগীরা যাচ্ছে শহরে গাংনীর দুটি গ্রাম লকডাউন
তৌহিদ উদ দৌলা রেজা : মেহেরপুরের গাংনীর সীমান্ত এলাকার তেতুলবাড়িয়া ও হিন্দা গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছেন প্রশাসন। সোমবার দুপুরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি গ্রাম দুটিকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে লকডাউনের ঘোষণা দেন। পরে বিকেলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশ বাহিনীর একটি দলকে সাথে নিয়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে ও রাস্তায় বাঁশ বেধে দেন। তবে এ লকডাইন মানছেন না তারা। করোনা সংক্রমন নিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা, বাজারে যাতায়াতসহ নানা কাজে ব্যাস্ত গ্রামের লোকজন। আবার যারা করোনা সন্দেহে স্যাম্পুল পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন তারাও হোম আইসোলেশনে থাকছেন না।
আবার নতুন করেও কেউ আসছে না পরীক্ষার জন্য। ফলে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনা। তাছাড়া গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার তেতুল বাড়িয়া গ্রামে ১৮ জন, হিন্দা গ্রামে ২৩ জন করোনায় আক্রান্ত। গত ১২ জুন ওই এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প করে স্যাম্পুল সংগ্রহ করলে ২৯ জনের মধ্যে ১৬ জনের দেহে করোনা পজেটিভ হয়। পরদিন থেকে কেউ আর স্যাম্পুল দিতে আসেনি। করোনা পজেটিভ যারা তারাও ঘরে থাকছেন না। বাড়ির পাশে মাচায় বা চায়ের দোকনে থাকছেন। তাদের আত্মীয়রাও অন্যান্য রোগীর মতো দেখতে আসছেন। অনেক করোনা রোগী বাজারে ওষুধ কেনার জন্য আসছেন।
আবার কেউ কেই গো-খাদ্য সংগ্রহের জন্য ক্ষেত খামারে যাচ্ছেন। ফলে সংক্রমনের হারটা বেড়ে চলেছে। এ মুহুর্তে পরীক্ষা নীরিক্ষা করলে শতকরা ৮০ জনের করোনা পজেটিভ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসি। হিন্দা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত ইউনুস আলীর ছেলে রিপন আলী বাড়ি নেই। তিনি ওষুধ কিনতে গাংনী বাজারে এসেছেন। ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাদের খোঁজখবর নেন না। বাধ্য হয়ে অন্য ডাক্তার ও ফার্মেসীতে যেতে হচ্ছে। এদিকে দিনদিন করোনার প্রকোপ বাড়লেও সতর্কতামূলক কোন কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো না। স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কোন প্রচার প্রচারণা বা সতর্কবাণী নেই। অন্যদিকে করোনার কারণে হাসপাতালের বিশেষ আইসোলেশনও নেই। গেল বছর করোনার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি কক্ষ আইসোলেশন হিসেবে ব্যবহৃত হলেও গত তিনমাস আগে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।
পুরাতন ভবনটি সংস্কার করার কারণে আইসোলেশন সেবাটি বন্ধ। অন্যদিকে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় এ উপজেলার জন্য বরাদ্দ তিন লাখ টাকার কোন কাজ না করায় তা ফেরত দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে করোনার জন্য বরাদ্দ দেয়া টাকা আজো আসেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. এম কে রেজা জানান, এলাকার লোকজন যে অভিযোগ করেছে সেটি সঠিক নয়। হিন্দা ও করমদি এলাকার করোনা আক্রান্তদেরকে স্বাস্থ্য বিভাগের লেঅকজন নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া জরুরী প্রয়োজনের জন্যও মোবাইল ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ড চালুর জন্য হাসপাতাল বাউন্ডারীর অন্য ভবনে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসূমী খানম জানান, দুটি গ্রামে যারা আক্রান্ত তাদেরকে নজরদারীর মধ্যে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পরিদর্শন করে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই বুঝতে না পেরে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এ ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।