মানবতার ফেরিওয়ালা হাবীগোষ্টী সিলেটী ও একজন মাহাতাব শাহ্ ফকির

0

জাহিদ হাসান নিশান : যেকোনো সমস্যা-সঙ্কট সুরাহা করতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদেরও এগিয়ে আসতে হয়। যখন আমরা যুক্তভাবে কোনো কাজ করি, তখনই তা সামাজিক সংগঠনে রূপ দিয়ে বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় মানুষ এখনো দারিদ্র্যের নানা বেড়াজালে আবদ্ধ। আবার মাঝেমধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ও বেঁচে থাকার হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ওইসব দুর্যোগকালে দেশের বিভিন্ন স্তর থেকে সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অসহায়দের সহযোগিতা দ্বার উন্মোচিত করেন! এ জন্য সামাজিক সংগঠনের গুরুত্ব অসীম।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, A Friend in Need is a Friend Indeed প্রবাদটির বাংলা অর্থ করলে বুঝা যায়, “বিপদের দিনে যে পাশে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু”। আর এমন একটি পরম সত্যের মুখোমুখি আমরা মানুষ প্রায়শই হয়ে থাকি। বিপদে যখন সাহায্যের জন্য কেউ ব্যাকুল হয় তখন সে বোঝে বন্ধু’র প্রয়োজনীয়তা ।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অভিজ্ঞতা কেমন হয়? এর স্ট্রেইটকাট উত্তর দেয়া কঠিন। কারণ প্রয়োজনীয়তা, প্রেক্ষিত ও ব্যক্তি বিশেষের আচরণে যে অভিজ্ঞতা হয় সেটাও ব্যক্তি নির্বিশেষ নয়। যাহোক, বিপদের দিনে অন্যের সাহায্য প্রাপ্তি ব্যক্তিক প্রেক্ষিতে যেমনই হোক সামষ্টিক ক্ষেত্রে কিন্তু একেবারেই আলাদা। ব্যক্তির সংকট এবং তজ্জনিত ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি হলে একটি পরিবারকে নাজুক করতে পারে কিন্তু জাতীয় সংকট পুরো জাতিকে অনেক যুগ পিছিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বায়নের এই যুগে কোনও সংকটই দেশ সীমাবদ্ধ নয়। এই যেমন করোনাভাইরাস জনিত বৈশ্বিক অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা থেকে রেহাই পেতে মানুষের পাশে মানুষ আর এক দেশের পাশে অন্য দেশের দাঁড়ানোর কোনও বিকল্প হতে পারে না। আর এহেন ভয়াবহতা বাস্তবতায় মানুষের পাশে প্রকৃত বন্ধু রুপে হাজির হয়েছে দেশের স্বনামপ্রসিদ্ধ গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠ শিল্পী ‘মাহতাব শাহ্ ফকির ‘ও তার প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংগঠন ‘হাবীগোষ্টী সিলটী’ যা ভারতের কয়েকটি জেলা যেমনঃ হাইল্লাকান্দি, কাছাড়, করিমগঞ্জ ও বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার ও সিলেট এই কয়েকটি জেলা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। “হাবীগোষ্টী সিলটী”র সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম নিদান হিসেবে আলোচনার দাবি রাখে।

করোনার এই সংকটকালে শহরে অক্সিজেন পাওয়া গেলেও গ্রামে তা প্রায় দুর্লভ। এ সময়ে বিভিন্ন গ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে ‘’হাবীগোষ্টী সিলটী’’ সামাজিক সংগঠনটি। সঙ্গে কর্মহীনদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন। মানবতার জন্য স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সংগঠন সূত্রে জানা যায়, সংগঠনটি রোহিংগাদের জন্য ১২ লক্ষ নগদ অর্থ প্রদান সহ গরীব অসহায় বয়স্ক ব্যাক্তিদের বাসস্থান নির্মান করে দিয়েছে।
নিজেদের অর্থায়নে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। নিজেদের অর্থায়নে বিভিন্ন গ্রামে জীবাণুনাশক প্রয়োগ করে। এছাড়া হ্যান্ডস্যানিটাইজার বিতরণ, মাস্ক বিতরণ, জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম, বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের সচেতন করে তোলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়মিত করে আসছে ”হাবীগোষ্টী সিলটী” সামাজিক সংগঠনটি। সংগঠনটি অসহায় দরিদ্র ও দিনমজুর কর্মহীন পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা সহ অসহায় দরিদ্র নারীর বিয়েতে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সংগঠনটি,
এছাড়া দুস্থ অসহায় মানুষের চিকিৎসা খরচ বহন সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসবে সেচ্ছাশ্রম ও সেচ্ছাসেবীর দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে এই মহৎ সংগঠনটি।

সারদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতার সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন আতঙ্ক ডেঙ্গু। করোনা ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তির জন্য সচেতনতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই। এরূপ জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সামাজিক কাজেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন ”হবীগোষ্টী সিলটী” পরিবার। আবার যখন কনকনে শীত, পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় অসহায় দারিদ্র মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। তখন এসব হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়ান মানব দরদি সংগঠন “হবিগোষ্টি সিলটী”।

উল্লিখিত সামাজিক সংগঠন “হাবীগোষ্টী সিলটী” সম্পর্কে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা দেশের স্বনামপ্রসিদ্ধ গীতিকার, সুরকার, কন্ঠশিল্পী ও দক্ষ সংগঠক “মাহতাব শাহ্ ফকির ” বিডি টোয়েন্টিফোর ডট ভিউজকে বলেন;
আমরা বৈশ্বিক এক মহা সঙ্কটের মুখোমুখি অবস্থান করছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে।

দেশে দেশে লকডাউনের ফলে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের লোকগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে। অনেকের ঘরেই খাদ্যসামগ্রীর সঙ্কট, ঔষুধ সঙ্কট, আক্সিজেনের অভাব প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে। যারা দিনমজুর, তারা পরিবার নিয়ে অভুক্ত থাকছে। ঘর বাজারসদাই শূন্য। আয়ের সবরকম উৎস বন্ধ। কোত্থেকে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা হবে তা তারা নিজেরাও জানে না।

তাই বাধ্য হয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনছে, কেউ এসে দু’মুঠো খাবার তাদের দেয় কিনা! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, টানা দু’দিন না খেয়ে থাকা বৃদ্ধের খাবারের জন্য আহাজারির দৃশ্য। এরকম এক-দু’জন নয়, হাজার হাজার দরিদ্র দিনমজুর অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গোনছে।

এই সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের উচিত মানবিক হওয়া । অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাদের দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
আসলে আমাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে একে অপরের কল্যাণকামীতার জন্য। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থাকা ও সহযোগিতার হাতকে সম্প্রসারণের জন্য। তাই আমরা “হাবীগোষ্টী সিলটী ” পরিবার বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাড়ানোর সর্বস্ব চেষ্টা করি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন “বোরহান উদ্দিন! ও সাউদ আফ্রিকা প্রবাসী “আবিদুল চৌধুরী যারা প্রতিনিয়ত সংগঠনের পাশে থাকছেন এবং নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.