মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উত্তোলন বন্ধের আশঙ্কা

0

মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনির বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়তে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা, মাতারবাড়ী, শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো। এখান থেকে প্রকল্পগুলোর পাথর জোগান দেয়া হয়।

নিয়ম অনুযায়ী চুক্তি শেষ হওয়ার কমপক্ষে ছয় মাস আগে পরবর্তী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্পটির চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে, নাকি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমানে মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর উত্তোলন করছে বেলারুশের কোম্পানি জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। এ অবস্থায় দেশের একমাত্র পাথরখনির কার্যক্রম বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এতে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা আছে।

খনি কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে পাথর খনির নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে তিন বার লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া পাথর খনিটি আবার বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মধ্যপাড়ার পাথর উত্তোলনের কারণে জিটিসির মেয়াদকাল আরও এক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। কিন্ত তারপরও ষড়যন্ত্রকারী মহল রহস্যজনক কারণে চুক্তি নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করছে।

খনিটিকে সচল রাখতে ২০১৩ সালে ২ সেপ্টেম্বর বেলারুশভিত্তিক কোম্পানি জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এর সঙ্গে চুক্তি করা হয়। নানা প্রতিকূলকতা পেরিয়ে তারা পাথর উত্তোলনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। প্রতিদিন তিন শিফটে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খনিটি চালু করা হয়েছিল, একমাত্র জিটিসিই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে এক দিনে তিন শিফটে ৬ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করে তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে।

শতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও অর্ধশত দেশি প্রকৌশলী এবং সাড়ে ৭৫০ দক্ষ খনি শ্রমিক দিনে-রাতে রেকর্ড পরিমাণ পাথর উত্তোলন করায় মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লোকসানের কলঙ্ক ঘুচিয়ে প্রায় ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখে।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ২২ কোটি টাকা মুনাফা করে দ্বিতীয়বার লাভজনক প্রতিষ্ঠানের ধারা অব্যাহত রাখে পাথর খনিটি। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরেও খনিটি লাভের মুখ দেখেছে। সেই সঙ্গে পাথর বিক্রি থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ কয়েক কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে নাকি বর্তমান ঠিকাদারের মেয়াদ নবায়ন এই নিয়ে চলছে টানাপোড়েন।

অভিযোগ উঠেছে, পেট্রোবাংলা ও এমজিএমসিএলের সাথে যোগসাজশে একটি দেশী-বিদেশী সিন্ডিকেট এই পাথরখনি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণেই টানা তিন মেয়াদে লাভজনক খনি থেকে পাথর উত্তোলনের ঠিকাদার নিয়োগ দিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। এ দিকে নাম প্রকাশে একজন খনি প্রকৌশলী বলেন, মহামারী করোনার ভয়াবহতার কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনি বন্ধ করে চলে গেছে। এতে বেকার হয়ে বসে আছেন ১০৪৫ শ্রমিক। খনি বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই কয়লাখনিতে আন্দোলন চলছে। কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিকরা।

খনির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানান, ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না হলে খনিটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ বেআইনিভাবে বিদেশিরা এখানে কাজ করবে না। বর্তমানে শতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও অর্ধশত দেশি প্রকৌশলী এবং ৭৫০ শ্রমিক বর্তমানে এখানে কাজ করছেন।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান বলেন, দেশের মেগা প্রকল্পগুলো মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতুর রেলসংযোগ নির্মাণ প্রকল্প। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প মধ্যপাড়া খনির পাথর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.