প্রভাবশালীদের দখলে যৌবন হারিয়েছে খরস্রোতা নাটোরের বড়াল নদী

0

রিয়াজ হোসেন লিটু, নাটোর : বড়াল টইটুম্বর যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। যৌবন শূন্য বড়াল এখন সরু খালে পরিনত হয়েছে। দূ’ধার প্রভাবশালীদের দখলে। বড়াল চরে সবুজ ফসল শোভা পাচ্ছে। গড়ে উঠেছে দোকানঘর ও বসতবাড়ি। কাল পরিক্রমায় বড়াল নদী টইটুম্বর যৌবন হারিয়ে ফেলেছে। এককালের খরস্রোতা বড়াল নদীর তলদেশ পলি মাটিতে ভরাট হয়ে জল সীমানা সরু হয়ে খালের আকার ধারণ করেছে। বড়াল চর প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে দোকানপাট ও বসতবাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি নানা প্রকার ফসল ফলাচ্ছেন । বড়াল পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন শুষ্ক মৌসুমে বড়াল প্রায় পানিশূন্য থাকায় গোসলের পানি পেতে দূর্যোগের শিকার হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা বড়ালের ইতিহাস রূপকথা বলে মনে করবে। বড়াল পদ্মার শাখা নদী। বড়াল রাজশাহীর চারঘাটের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পদ্মা থেকে বেরিয়ে আকাঁ-বাঁকা পথে চারঘাট, বাঘা’ বাগাতিপাড়া বড়াইগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা পেরিয়ে সিরাজগঞ্জে যমুনায় মিলিত হয়েছে।

কাল পরিক্রমায় ও চারঘাটে পদ্মা সংলগ্ন বড়াল মুখে স্লুইসগেট নির্মাণের কারণে বড়াল যৌবন জৌলুস হারিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা থেকে বন্যার সীমিত স্রোতহীন পলিমাটি মিশ্রিত পানি বড়ালে প্রবেশ করলেও গ্রীষ্ম মৌসুৃম থাকে প্রায় পানিশূন্য। ক’ যুগ আগেও বড়ালের যৌবন ছিল টইটুম্বরপূর্ণ। বড়াল বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি পেয়ে যৌবন তাড়নায় মেতে উঠতো। তখন খরস্রোতা বড়াল স্রোতের কলকল শব্দে মুখরিত থাকত। বন্যার পানিতে দু’কূল কানায় কানায় পূর্ণ হতো। সে সময় কখনো কখনো পলিমিশ্রিত পানি দু’কূল ঝাঁপিয়ে বিভিন্ন মাঠে প্রবেশ করায় কৃষি আবাদযোগ্য জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পেতো। কৃষকদের ঘরে দ্বিগুন ফসল উঠতো। বড়াল পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের সারা বছর স্বাচ্ছন্দে সংসার চলতো। সেকালে নদীতে ছোট-বড় প্রচুর মাছ ছিল। জেলেরা মনের আনন্দে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাতো। কিশোর-কিশোরীরা মনের আনন্দে নদীতে সাঁতার কাটতো। মালামাল বোঝাই ছোট-বড় পালতোলা নৌকা দূর-দূরান্তে যাতায়াত করতো। বড় ব্যবসায়িরা পাল তোলা নৌকাযোগে বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন স্থানে আমদানী-রপ্তানী করত।

সময়ের ব্যবধানে ও চারঘাটে বড়াল মূখে অপরিকল্পিত-ভাবে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় বড়াল টইটম্বুরপূর্ণ যৌবন হারিয়েছে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে সরু নালার আকার ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুমে বড়াল থাকে অর্ধ পানি পূর্ণ । অপরদিকে গ্রীষ্ম মৌসুমে বড়াল পানিশূন্যতায় ভোগে। সরু বড়ালের সিংহভাগ অংশেই থাকে হাঁটু পানি। প্রয়োজনীয় পানির অভাব দেখা যায়। গোসলসহ অন্যান্য কাজে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। কোন কোন ঘাটে শ্যাওলা ও কেঁশেল পরিস্কার করে এবং পানির মধ্যে গর্ত করে গোসলের ব্যবস্থা করা হয়। আবার অনেকেই নিরুপায় হয়ে শ্যাওলা ও কেঁশেলযুক্ত অব্যবহারযোগ্য নোংরা পানিতে গোসল করতে বাধ্য হয়। নোংরা পানিতে গোসলের কার অনেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জামনগর এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, শুষ্কমৌসুমে বড়াল নদীতে তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। সামান্য পানি থাকলেও তা অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে অনেকেই শ্যাওলা ও কেঁশেল পরিস্কার করে এবং পানির মধ্যে গর্ত করে গোসলের ব্যবস্থা করেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.