মহেশখালী-কক্সবাজার সংযোগ সেতু ও আমাদের ভাবনা । মোঃ এজাজুল হক খোকন
মহেশখালী কক্সবাজার জেলাধীন একটা উপজেলার নাম মহেশখালী। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ।যে দ্বীপকে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল আইল্যান্ড হিসেবে ঘোষণা করেছেন।বর্তমান সরকার দ্বীপটিকে ঘিরে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং উক্ত উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বর্তমানে বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।তাই দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের তথা সমগ্রীকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্য মহেশখালী দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্বীপটি কক্সবাজার সদর অর্থাৎ কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এবং সরাসরি দুইপ্রান্ত থেকে স্থল যোগাযোগ ব্যাবস্থা না থাকায় দ্বীপবাসীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে কক্সবাজার যেতে হয়। যাওয়ার পথে প্রতিদিনই অনেক ভুগান্তি পোহাতে হয়।বিশেষ করে প্রশাসনিক,মামলা-মোকাদ্দমা,ব্যবসা,চিকিৎসা এবং শিক্ষা ইত্যাদি কারণে কক্সবাজার সদরে যেতে হয়।যাওয়ার পথে প্রধান বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে বাকঁখালী নদীর মোহনা।উক্ত চ্যানেলে প্রতিনিয়ত নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে।কথিত মতে এই বছরেই নৌকা ডুবিতে মারা গেছে প্রায় ৫০জনের মতো,যেখানে নারী-শিশু ও রয়েছে।
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ পরিবহনে যেসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,কতৃপক্ষের মারাত্মক গাফেলতি,ফিটনেস বিহীন নৌযান ব্যবহার,পরিমানের অধিক যাত্রী বহণ করা,যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট বা সেপ্টি জ্যাকেট পরিধানের ব্যবস্থা না থাকা,অদক্ষ লোক দিয়ে লঞ্চ বা স্পিড বোট চালানো,চালদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা না থাকা ইত্যাদি। অনেকের মতে নদীর মাঝপথে চালক ভাড়া আদায়ের জন্য নৌযান নিয়ন্ত্রণ না করে,যাত্রীকে নিয়ন্ত্রকদন্ড ধরিয়ে দেন।এছাড়াও অতিরিক্ত ভাড়াত আদায়, টোলের নামে ভূগান্তিতো অ দায়িত্বশীলদের দুর্ব্যবহারতো আছেই।এমনকি ৫বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে মৃতদেহ যাতায়াতে ও অতিরিক্ত ভাড়া ও টোল নেওয়া হয়।এমনও অভিজ্ঞতার কথা শুনা যায় যে,মাঝ পথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় এবং চালক যাত্রীদের ভাসমান রেখে ইঞ্জিনের ত্রুটি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বর্ষা মৌসুমে প্রচুর ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই দ্বীপের মানুষকে কাদামাটি দিয়ে হেটে নৌকায় উঠে গুরুত্বপূর্ণ কাজে কক্সবাজার সদরে যেতে হয়।রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের জন্য একটি যাত্রী ছাউনি ছিল,তাও আর বর্তমানে অবশিষ্ট নাই।রাস্তায় এবং ঘাটে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট না থাকায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই যাত্রীদের উঠানামা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।এই সংকটাপন্ন অবস্থায়,এই দ্বীপের মানুষ,কোন মূমুর্ষূ বা ডেলিভারী রোগী নিয়ে কোথায় যাবে?? মহেশখালীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায়,স্থানীয় কর্তব্যরত চিকিৎসক অনেক রোগীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন।কক্সবাজারে নেওয়ার পথে অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করেছে,এই রখম ঘটনাও প্রায় শুনা যায়।
স্পিড বোট গুলোতে যেখানে ৮জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সেখানে অসাধু চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য যাত্রী নেয় ১৩/১৪ জন।যা দূর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। যাত্রীর তুলনায় নৌযান পর্যাপ্ত না হওয়ায়,কাজের চাপে দ্রুত পারাপারের জন্য প্রতিযোগিতা করে উঠতে গিয়ে পানিতে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও দেখা মিলে।এছাড়াও পন্য আনা-নেওয়ায় চরম ভোগান্তি ও উক্ত নৌ-পথে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ পড়ায় স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারছে না।এ-র ফলে উক্ত অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উক্ত সমস্যা চলমান থাকা অবস্থায় অতি সম্প্রতি তোফায়েল আহমেদ নামের একজন মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুতে মহেশখালীর সর্বস্তরের জনগণের ভীতি নড়ে উঠেছে।এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ও সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে।উক্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এবং দ্বীপাঞ্চলের সাড়ে ৪লক্ষ মানুষের মহেশখালী থেকে কক্সবাজার নৌপথে সীমাহীন দূর্ভোগ ও ভোগান্তি দূর করতে মহেশখালীর সাথে চৌফলদন্ডীতে প্রায় ২কি.মি. এর সংযোগ সেতুই একমাত্র সমাধান বলে মনে করেন অনেকেই। উক্ত নৌপথে হয়রানীর স্বীকার মহেশখালী দ্বীপের মানুষ প্রতিবাদ করছে।এবং অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গত ২৯ই সেপ্টেম্বর মহেশখালীর পুরাতন আদালত চত্বরে এবং ২৪শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দাবী আদায়ের লক্ মৌন মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।উক্ত ২টি প্রোগ্রামেই দ্বীপাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক।তারা বক্তব্যে তাঁদের ক্ষুব প্রকাশ করেছেন এবং তাদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া তুলে ধরেছেন।
উল্লেখ্য যে সরকারের বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পের জন্য নিজেদের ভিটা-জমি ছেড়ে দিয়ে নজীর বিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছেন।তাই তারা মনে করেন,সরকারের উচিৎ প্রতিদান সরূপ উক্ত অঞ্চলের গণমানুষের নৈতিক এবং যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে সেতুর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে দুঃখ লাঘব করা। কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী হওয়ায়,অনেক পর্যটক কক্সবাজার থেকে মহেশখালী দেখতে আসেন।মহেশখালী -কক্সবাজার সংযোগ সেতু,উক্ত অঞ্চলের পর্যটন খাতের উন্নয়নের দ্বার উম্মুক্ত করবে। অনেকেই সেতুর বিকল্প হিসেবে ফেরীর কথা বলছেন।ফেরী কিন্তু কখনই স্থায়ী সমাধান নয়।নদীতে অতিরিক্ত পলি পড়ায় এবং নিয়মিত ড্রেজিং না করায় নদী ভরাট হয়ে নদীর গভীরতা কমে গেছে। নদীর নাব্যতা নষ্ট হওয়ায় জোয়ারের সময় ফেরী অবাদ চলাচল করতে পারলেও ভাটার সময় তা চলাচলে বাধার সম্মুখীন হবে।সে হিসেবে দৈনিক ২বার আসা-যাওয়া করতে পারবে এবং তা অধিক মানুষের পারাপারের জন্য স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমি অনততঃ মনে করি না।
মহেশখালীর মানুষের প্রাণের দাবী কক্সবাজার-মহেশখালী সেতু বাস্তবায়ন কল্পে,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও কক্সবাজার-২ আসনের মাননীয় সংসদ জননেতা জনাব আশেক উল্লাহ রফিক (এম.পি) মহোদয় উক্ত বিষয়ে সু-দৃষ্টি রাখবেন বলে উক্ত জনপদের সর্বস্তরের জনগণ আশায় বুক বেঁধে আছে।
লেখকঃ মোঃ এজাজুল হক খোকন এল.এল.বি (অনার্স), এল.এল.এম শিক্ষানবিশ আইনজীবী