বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরির মেশিন উদ্ভাবন করল পাবনার স্কুল শিক্ষার্থী তারিফ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এক বছরের চেষ্টায় বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরির মেশিন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দশম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী তারিফ।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে স্বল্প খরচে অক্সিজেন তৈরির মেশিন তৈরি করেছেন স্কুল শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। সে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া মাড়োয়ারী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারিফের উদ্ভাবিত মেশিনটি বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে তার তৈরিকৃত প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন তৈরি করে দেখান। টানা এক বছরের চেষ্টায় এই মেশিনটি তৈরি করেছে তারিফ এবং খরচ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে তারিফ জানান, এক বছরের বেশি সময় আগে তার বাবার মৃত্যুর সময় অক্সিজেন সমস্যায় পড়তে হয়। তখন থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে যায়। এসব বিষয় মাথায় নিয়েই মূলত সে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য গবেষণায় নামে।

তারিফ আরও জানায়, করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবার আগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। ফুসফুস বাতাস থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহের সামর্থ্য হারাতে থাকে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এ কারণে করোনা আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাই বলা হয় করোনারোগীর জন্য অতিপ্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী ওষুধ হলো মেডিক্যাল অক্সিজেন।

তার তৈরি প্ল্যান্টে অক্সিজেন উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে তারিফ জানায়, ডায়নামো দিয়ে বাতাসকে প্রথমে একটি সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয়। বাতাসে অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকায় সেগুলো বের করার জন্য জিওলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। জিওলাইটের মাধ্যম বাতাস থেকে অক্সিজেনকে একদিক দিয়ে এবং অন্যান্য উপাদানকে আরেকদিক দিয়ে বের করা হয়। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) পাবনার সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৯৫-১০০ শতাংশ। এইমাত্রা ৯৩ এর কম হলে সতর্ক হতে হয় এবং ৯২ শতাংশের নিচে নামলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন দেয়া হয়। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০-৯১ এ নেমে এসেছিল, এরকম কয়েকজনকে তার প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সিজেন দিয়ে এই লেভেল ৯৮-৯৯ এ ওঠানো সম্ভব হয়েছে বলে তারিফ জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেস্টেও সফলতা আসবে বলে সে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার বলেন, ‘তারিফের এ কাজে আমরা সবাই উৎসাহ দিয়েছি। প্রাথমিক সাফল্য এসেছে। এখন ল্যাব টেস্ট করা হবে। ল্যাব টেস্টে দেখতে হবে, তারিকের আবিষ্কৃত প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সিজেনের মধ্যে বাতাসের অন্য কোনো উপাদান আছে কিনা। ঈশ্বরদীর সাঁড়া মাড়োয়ারী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলাম জানান, তারিফ অত্যন্ত মেধাবী। দরিদ্র এই শিক্ষার্থীর মেধা দেখে তারা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। বাবার মৃত্যুতে আরও অসহায় হয়ে পড়লেও সে দমে যায়নি। কম খরচে অক্সিজেন তৈরির মিনি প্ল্যান্টটিই তার অধ্যাবসায়ের বড় প্রমাণ।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, অক্সিজেন ঘাটতি ও এর জরুরি প্রয়োজনীয়তা মাথায় নিয়ে অল্প খরচে প্ল্যান্ট তৈরি করেছে সরকারি এস এম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ শ্র্রেণির শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। বলা যায় বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারিফ। কম খরচে প্ল্যান্ট তৈরিতে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারিফের অক্সিজেন ল্যাব পরীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ল্যাব টেস্টে সাফল্য প্রমাণিত হলে বৃহত্তর পরিসরে বড় প্ল্যান্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন দেশেই কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.