পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রক্টর হলেন ড. প্রীতম কুমার দাস

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহুকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আজ থেকে তিন বছর আগে এই ঐতিহাসিক দিনে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গুরু দায়িত্ব পেয়েছিলেন ড. প্রীতম কুমার দাস। ড. প্রীতম কুমার দাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন এবং এই সময় তিনি দেশ সেরা পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর ইমেরিটাস ড. অরুণ কুমার বাসাক এর সাথে গবেষণা করেন।

ড. প্রীতম কুমার দাস তার Ph.D. ডিগ্রী সম্পন্ন করে জাপানের ওকাইয়ামা বিশ্ববিদ্যালয় (Okayama University) থেকে। তিনি তার শিক্ষকতা জীবন শুরু করেছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্যে দিয়ে। তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারিতে। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি এখন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে কর্মরত আছেন। ড. প্রীতম কুমার দাস তার Ph.D. ডিগ্রী সম্পন্ন করে জাপান থেকে দেশে ফেরেন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পান ১৭ই এপ্রিল, ২০১৮ সালে। গতকাল ১৬ই এপ্রিল, ২০২১ ইং তারিখে প্রক্টর হিসেবে তার দায়িত্বের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। সদ্য জাপান থেকে Ph.D ডিগ্রী করে ফেরা একজন গবেষকের জন্য প্রক্টরের দায়িত্ব গ্রহন করা ছিল সত্যি একটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

ড. প্রীতম কুমার দাস সবসময় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন, তাই তিনি এই নতুন চ্যালেঞ্জটাও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার প্রথম সাতদিনের মধ্যে তাকে যে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, সেগুলোর জন্য একজন শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তিনি যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন এই অভিজ্ঞতা গুলো ছিল তার ঠিক বিপরীত। ঐ কঠিন সময়ে তার সহকর্মী, সহকারী প্রক্টর এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ যারা তাকে মানসিকভাবে সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে সহযোগিতা করেছিল তিনি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। ঐসময়ে তার মা ও সহধর্মিণী পাশে থেকে তাকে সাহস এবং অনুপ্রেরণা না যোগালে তার পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে যেত। ঐ সময়ে তিনি তার বাবা-মায়ের একটা কথা সবসময় মনে করতো “যার কেউ নাই, তার ঈশ্বর আছে”। তার বাবা-মা তাকে আরেকটা কথা সবসময় বলতো “সৎভাবে কাজ করলে কেউ জোর করে কাউকে আটকিয়ে রাখতে পারে না”। ঐ কঠিন সময়ে তাকে সবচেয়ে বেশি সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল তার শিক্ষা গুরু ও গবেষণার সুপারভাইজার প্রফেসর ইমেরিটাস ড. অরুণ কুমার বসাক স্যারের কথা।

ড. অরুণ কুমার বসাক স্যার সবসময় তাকে বলতেন যখন যে কাজ করবে ভালো করে মন দিয়ে করবে, তাহলে সফলতা আসবেই। স্যার তাকে আরেকটা কথা সবসময় বলতো “প্রতিকূলতা ও প্রতিরোধ জনগণকে জীবন-ধারণে সাহসী, পরিশ্রমী, সংগ্রামী ও সৃজনশীল করে এবং যুক্তি-বুদ্ধি ও উপলব্ধি জাগ্রত করে। আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিকূল অঞ্চলের জনগণ দুঃসাহসিক ও পরিশ্রমী”। ঐ কঠিন সময়ে তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরাও তাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। ড. প্রীতম কুমার দাস স্বামী বিবেকানন্দের ভক্ত। উনার উক্তিগুলো (যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি হলঃ “Never Give Up”; “Take Risks in Your Life. If you Win, You can Lead! If You Loose, You can Guide!”; “সকলকেই নিজ নিজ সাধন-প্রণালী অবলম্বন করিয়া প্রত্যক্ষানুভূতির দিকে অগ্রসর হইতে দাও, সকলেই নিজ নিজ হৃদয়ে সেই সত্য দর্শন করিতে চেষ্টা করুক”।) তিনি ফলো করার চেষ্টা করে।

ড. প্রীতম কুমার দাস প্রথম থেকেই চেষ্টা করে গেছেন তার উপর অর্পিত গুরু দায়িত্বটা তিনি যেন সতাতর সহিত ও সঠিকভাবে পালন করতে পারে। সব ধরনের প্রতিকূলতা ও প্রতিরোধকে মোকাবেলা করে তিনি তার গুরু দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করেছেন । তিনি মনে করে এই তিন বছরে সে তার দায়িত্ব কতটুক সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছেন সেটা বিচার করবে তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা। গত তিন বছর ধরে ড. প্রীতম কুমার দাস প্রক্টরিয়াল দায়িত্বের পাশাপাশি পড়াশুনা ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই বিশ্ব করোনাকালীন মহামারীর সময়েও অনলাইনে ক্লাস ও ওয়েবিনারের মাধ্যমে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়াশুনার মধ্যে ধরে রাখা ও উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে তিনি বিশ্বের নামকরা পদার্থবিজ্ঞানীদের নিয়ে ১৩৭টা আন্তর্জাতিক ফিজিক্স ওয়েবিনার সফলভাবে আয়োজন করেছেন এবং যাদের মধ্যে দুইজন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানীও ছিল। এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে ড. প্রীতম কুমার দাস তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি সবসময় বিশ্বাস করেন যে, তিনি প্রথমে শিক্ষক তারপর অন্য কিছু। বিশ্ববিদ্যালয় হল শিক্ষা ও গবেষণার জায়গা এবং বিশ্ববিদ্যালয় হল নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওকাইয়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Okayama University) পড়াশুনা, ভারতের আইআইটি খড়গপুরে (IIT Kharagpur) গবেষণা এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সবসময় চেষ্টা করেছেন শিক্ষা ও গবেষণার জন্য কিছু করার।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অদ্য ১৭ই এপ্রিল, ২০২১ ইং তারিখ থেকে ড. প্রীতম কুমার দাস কে পুনরাই প্রক্টরের গুরু দায়িত্ব প্রদান করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়ার জন্য তিনি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. রোস্তম আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি সেই সাথে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাদেরকে যারা গত তিন বছর ধরে তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবে তার উপর অর্পিত এই গুরু দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করার। তিনি আরও চেষ্টা করবে তার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব দরবারে ভালোভাবে পৌঁছে দেয়ার। এই গুরু দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য তিনি সকলের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ কামনা করেছেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.